Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মধ্যপ্রাচ্যে মরিচ রপ্তানি ১৫ গুণ বেড়েছে

মার্চ ১৬, ২০১৫, ০৯:১৫ এএম


মধ্যপ্রাচ্যে মরিচ রপ্তানি ১৫ গুণ বেড়েছে

 

আকাশপথের পাশাপাশি সমুদ্রপথেও এখন রপ্তানি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে দেশের মরিচ রপ্তানি। এমনকি ভারতকে হটিয়ে ক্রমেই মধ্যপ্রাচ্যে মরিচের বাজার দখল করতে চলেছে বাংলাদেশ। গত ৪ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আরব আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি আরব ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। দীর্ঘ ৪ দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে ভারতীয় কাঁচা মরিচ এককভাবে ক্ষমতা দখল করে আসছিল।

রপ্তানিকারক ও চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই চালানে ৪০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ওই মাসের প্রতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে মরিচ রপ্তানি হয় ১০ মেট্রিক টন। এরপর তা রপ্তানি হয় বাহরাইন, সৌদি আরব ও কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশে। ৪ মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়ায় সপ্তাহে দেড়শ’ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ এই ৪ মাসে ব্যবধানে মধ্যপ্রাচ্যে সপ্তাহে গড়ে মরিচ রপ্তানি বেড়েছে ১৪০ মেট্রিক টন বা ১৫ গুণ।দেশের মরিচের গুণগত মান এবং সমুদ্রেপথে সফলভাবে রপ্তানিই এতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা।

চট্টগ্রামের এসআর এন্টারপ্রাইজ, প্রভা ফুড স্টোর, আইডিএস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, গ্রীন ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেক্সসহ ৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে তারা এখন গড়ে ১৪০ থেকে ১৬০ মেট্রিক টন কাচা মরিচ রপ্তানি করছে।

রপ্তানিকারকরা জনান, বাংলাদেশের মরিচের গুণগত মান ভালো হওয়ায় খুব দ্রুতই এ বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। পণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং কাচা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হলে খুব শিগগির মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মরিচের বাজার সম্প্রসারণ সম্ভব হবে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্রীণ ওয়ার্ল্ড এর সব্ত্তাধীকারী এবং সবজি রপ্তানিকারক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান রুবেল জানান, গত নভেম্বরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাতে আকাশ পথে ২০ মেট্রিক টন মরিচ রপ্তানি হয়। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানিকারকরা আগ্রহ দেখায়নি।

তিনি জানান, পরবর্তীতে জানুয়ারি থেকে সমুদ্রপথে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে করে রপ্তানি প্রক্রিয়া সফল হওয়ায় রপ্তানি খরচ কমে আসে। এক মাসের ব্যবধানে তা এখন রপ্তানি দেড়’শ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পর্যাপ্ত হিমাগার এবং কৃষকদের মরিচ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা গেলে মধ্যপ্রাচ্যের মরিচের বাজার অর্ধেকই বাংলাদেশের দখলে চলে আসবে।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান জানান, বাংলাদেশ টাটকা ফল সবজি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে বড় বাধা ছিল সংরক্ষণ ব্যবস্থা। কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। উন্নত জাতের মরিচের বীজ চাষাবাদ করতে কৃষকদের আগ্রহী করার পাশাপাশি কিছু আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এস আর এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শহিদুল আলম জানান, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আকাশ পথে মোট ৬০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ রপ্তানি করা হয়েছে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে সমুদ্রপথে রপ্তানি হওয়ায় পরিবহন খরচ কমে আসে। ফলে গত ছয় সপ্তাহে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ৮০০ মেট্রিক টনের মতো। আগে যেখানে আমার প্রতিষ্ঠান প্রতি সপ্তাহে ২০ মেট্রিক টন কাচা মরিচ রপ্তানি করতো সেখানে গত সপ্তাহে (বুধবার) রপ্তানি করেছে ৪৫ মেট্রিক টন।

রপ্তানিকারক ও রপ্তানি নথিপত্রে জানা যায়, ভালো মানের প্রতি কেজি মরিচ কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে রপ্তানিকারকরা। পরবর্তীতে তা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা (এক থেকে দেড় ডলার) কেজি ধরে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে হরতাল অবরোধে কৃষি পণ্যের দাম প্রান্তিক পর্যায়ে কম থাকায় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। রপ্তানি করা কাঁচা মরিচের অধিকাংশই চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, হাটহাজারি, মিরসরাই, দুহাজারী এং চকরিয়া থেকে কেনা হয়েছে।

অন্যান্য রপ্তানিকারকরা জানান, বাংলাদেশে মরিচের এখন প্রচুর চাহিদা আছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারগুলোতে বাংলাদেশের বাজার ধরার জন্য কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা প্রয়োজন। ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় আমাদের আরও বেশি দ্রুত এবং কীটনাশক মুক্ত পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিতে হবে।