Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অবরোধে ধস নেমেছে অর্থনীতিতে

জানুয়ারি ৮, ২০১৫, ০২:২৭ পিএম


অবরোধে ধস নেমেছে অর্থনীতিতে

 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধে সবজি, মৎস,চাল,এবং দেশের বাহির  থেকে আমদানি বন্দর হিলি স্থলবন্দর,মংলার স্থল বন্দরসহ দেশের অর্থনীতি মারত্মক হুমকির সম্মুখিন। ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন খুব দ্রুত এসমস্যার সমাধান না হলে দেশ খাদ্য হুমকিতে পড়ে যাবে।  আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান আমরা বাহির থেকে মাল এনে পণ্য ভর্তি কনটেইনার নিয়ে আটকে পড়ে আছি । দেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোটি কোটি টাকার মাল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার সাহস পাচ্ছি না। যদি রাস্তায় যাই আর আগুন লাগিয়ে ট্রাক পুড়ে দেয় তাহলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে যদি এসমস্যা সমাধান খুব দ্রুত না হয় তাহলে দেশ বিপাকে পড়াসহ খাদ্য সমস্যায় পড়তে পারে বলে তারা মনে করেন। অবরোধে দেশের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রে লোকসান গুণছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

সবজি : অবরোধে অনেক লোকসানেই সবজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। শীতের সবজি মাঠেই নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সবজি ব্যবসায়ীরা, বিএনপির ডাকা অবরোধে দুর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষি পণ্য পরিবহনে বিপাকে পড়েছেন তারা। ঢাকার কারওয়ান বাজারে ব্যাপারীরা বলছেন, এখন শীতের সবজির ভরপুর মৌসুম। কিন্তু সেগুলো মাঠেই নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। তাতে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কাঁচা মালের আড়ত ঢাকার কারওয়ান বাজারে সাধারণত  মধ্য রাতের কিছু আগে থেকে ট্রাকে করে সবজি আসতে শুরু করে। আর সেটিকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিভিন্ন পেশার মানুষ। আগে যেই ফুলকপি বিক্রি হয়েছে  ১২ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকায়। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আকরাম জানান, তাদের ব্যবসায় অবরোধের বিরূপ প্রভাবের কথা। সবজি ব্যবসায়ী আকরাম বলেন, অন্যান্য সময় অনেক পাইকার থাকলেও অবরোধে তাদের সংখ্যা কম। ফলে কাঁচামালের দামও কমে গেছে। অনেক লোকসান দিয়েই সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। ঢাকার বাইরে থেকে খুব কম মালই এখন আসছে। যতটুকু আসছে, তা আনতে সাধারণ সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়াও গুনতে হচ্ছে আকরামের মত ব্যবসায়ীদের। আর যেসব শাক-সবজি ঢাকায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা, সেগুলো মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

টানা অবরোধে বিপর্যস্থ মৎস ব্যবসা: টানা অবরোধে বিপর্যস্থ হয়ে পরেছে বিভিন্ন জেলার মৎস ব্যবসা বাণিজ্য। অবরোধের কারণে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ রপ্তানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে নির্ধারিত দামের থেকে কম মূলে বাধ্য হয়েই স্থানীয় বাজারগুলোতে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তবে এ সমস্য সমাধানে জেলা পুলিশ পণ্য বাহী যানবাহন চলাচলে ইতোমধ্যে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা চালু করেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে হরতাল অবরোধে পণ্য পরিবহনে পুলিশের জেলা পুলিশের সহায়তা নেবার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। বঙ্গোপসাগর বেস্টিত উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী অনেক পূর্বথেকেই মৎস উৎপাদনে বিশেষ অবদান রেখে আসছে। প্রতি বছর নভেম্বর ডিসেম্বরে মাছের উৎপাদন বাড়লেও এবার উৎপাদিক মাছ জেলার বাইরে বিক্রি করেত না পারায় বিপাকে পরেছেন মৎস ব্যবসায়ীরা। আর এর ফলে অনেক কম মূল্যে পটুয়াখালীর স্থানীয় বাজারেই বাধ্য হয়ে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে স্থানীয় বাজারেও ক্রেতার পরিমাণ কম থাকায় বিপাকে পরেছেন বিক্রেতারা। পটুয়াখালী নিউ মার্কেট এলাকার মৎস ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, আগে এক কেজি সাইজের ইলিশ ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করলেও এখন হরতাল অবরোধের কারণে তা ৫শ থেকে ৬শ টাকা দরে বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। মহিপুর মৎস বন্দরের আড়ৎদার আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিদিন মহিপুর থেকে ঢাকা,যশোড়, খুলনা সহদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুই থেকে তিন ট্রাক মাছ পাঠানো হতো। কিন্তু এখন হরতাল অবরোধ থাকায় ট্রাক না পাওয়ায় ক্রয়কৃত মাছ বরফ দিয়ে রাখতে হচ্ছে ফলে মাছের মান খারপ হওয়ার পাশাপশি কস্টিং বেড়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয় বাজারে কিছু মাছ বাধ্য হয়ে বিক্রি করলেও তাও অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন ভাটি অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ মাছ রপ্তানি করে কিন্তু এখন  কোন মাছ রপ্তানি করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তবে হরতাল অবরোধে আরো অব্যহত থাকলে মাছের দাম  আরো বাড়বে বলেও জানা এখানকার ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের অড়ৎদার জানে আলম জানান,আগে যেখানে একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ২০ হাজার টাকা এখন হরতাল অবরোধের কারণে তা ৫০ হাজার টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না। ফলে এই অতিরিক্তি ভাড়ার টাকা আমদানীকৃত পণ্যের উপর উঠছে। হরতাল অবরোধ সহ সকল ধরনের সহিংশ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে পণ্যাবাহী পরিবহনকে আওতা মুক্ত রাখলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা ।

মংলা বন্দর : অবরোধের কারণে মংলা বন্দরে আমদানীকৃত ৩৩৬ টি পণ্য ভর্তি কনটেইনার ডেলিভেরীর অপেক্ষায় ৩ দিন ধরে আটকা পড়ে আছে। ঘন ঘন হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। পণ্য বোঝাই-খালাস-সরবরাহ নির্দিষ্ট সময়ে করতে না পারায় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। কাজ হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। বন্দরের জেটিতে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী শত শত কন্টেইনার। দিনের পর দিন সড়ক মহাসড়ক অবরোধ থাকায় বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় মংলা বন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্দর সূত্র জানা যায়, মংলা বন্দর জেটিতে গত গতকাল পর্যন্ত ৫ শতাধিক কন্টেইনারে বিপুল পরিমাণ আমদানি হওয়া পণ্য অবরোধের কারণে ডেলিভারি করা যাচ্ছে না। অবশ্য পুলিশ পাহারায় আসা হিমায়িত খাদ্য বোঝাই কয়েকটি কন্টেইনার নিয়ে গত সপ্তাহে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজ বন্দর জেটি ত্যাগ করেছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক মাহবুল্লাহ বলেন, সড়ক পথে হরতাল অবরোধ কঠোর থাকলেও বন্দরের নৌপথ দিয়ে কিছু কিছু পণ্য আসা যাওয়া করছে। দুবাই বাংলাদেশ সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, ডেলিভারি না হওয়ায় আমাদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মংলাস্থ মেঘনা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ডেপুটি ম্যানেজার মো. এমরান হোসেন বলেন, হরতাল অবরোধের কারণে সরবরাহ না থাকায় বর্তমানে উৎপাদন মাত্র প্রায় ৫শ' মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম খলিলউল্লাহ বলেন, হরতাল অবরোধ হলে খুলনাঞ্চলের চিংড়িখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং ব্যবসায়ী শেখ বদিউজ্জামান টিটু বলেন, লাগাতার হরতাল অবরোধে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা মংলা ইপিজেড ও খুলনার শিল্প এলাকার উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিদিন লোকসান গুণতে হয়। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এইচ আর ভুঁইয়া বলেন, হরতাল অবরোধে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি ও ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হয়। এতে করে ব্যবসায়ীসহ বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দর : লাগাতার অবরোধে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। বন্দরের ভেতরে ও ভারত অভ্যন্তরে আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। হামলা ও ভাঙচুরের ভয়ে পণ্য পরিবহণে ট্রাক ভাড়া না পাওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে ব্যাবসায়ীরা জানান।
 এছাড়াও চাল আমদানিকারকরাও রয়েছে প্রচুর সমাস্যায়। চাল ব্যবসায়ীরা বলেন যদি আগামী কয়েকদিনে মধ্যে যদি এসমস্যার সমাধান না হয় তাহলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন চাল ব্যবসায়ীরা।