Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

ক্ষতি হাজার কোটি, বড় ধাক্কা রপ্তানি আয়ে

রেদওয়ানুল হক

জুন ৫, ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম


ক্ষতি হাজার কোটি, বড় ধাক্কা রপ্তানি আয়ে

* পণ্যভর্তি ১৩০০ কনটেইনার পুড়ে ছাই
* বেশি পুড়েছে রপ্তানি পণ্য, অধিকাংশ এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক
* মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বিদেশীরা : বিজিএমইএ
* অধিকাংশ পণ্যের লিড টাইম চলছে : বিকডা 

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনে ছাই হয়ে গেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার পণ্য। তাৎক্ষনিক সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও খাত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। অন্যদিকে অধিকাংশ রপ্তানি পণ্যের লিড টাইম (সরবরাহের সময়) চলায় নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ সম্ভব নয়। সঙ্গে রয়েছে রানা প্লাজা, তাজরিনসহ পুরোনো অনেক কলঙ্ক। ঘটেছে প্রাণহানির বড় ঘটনা। সবমিলে বিদেশি ক্রেতার মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজিএমইএ নেতারা। এর ফরে বড় ধাক্কা লাগতে পারে রপ্তানি আয়ে।  
 
ডিপো এসোসিয়েশন ও বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, সাড়ে চার হাজার কন্টেইনারের মধ্যে ১৩শ পুড়ে গেছে। এতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য পুড়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি। কিন্তু বিস্ফোরিত ডিপো সূত্র ও জেলা প্রসাশকের তথ্য অনুযায়ী আমদানি রপ্তানি মিলে কন্টেইনার থাকার কথা প্রায় বিশ হাজার। বিস্ফোরণের পর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের কাছে ঘেষতে পারছে না কেউ। তাই কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। 

রোববার (৫ জুন) বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বিকডা সচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোতে দুর্ঘটনার সময়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে অন্তত এক হাজার ৩০০ কনটেইনারে আমদানি ও রপ্তানিপণ্য ছিল। পণ্যভর্তি এসব কনটেইনারের অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে আমদানি করা বহু পণ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানির জন্য কনটেইনার ভর্তি করে রাখা অনেক পোশাক ছিল। সেগুলো রপ্তানির নির্ধারিত সময় (লিড টাইম) ছিল। কিন্তু পোশাক পুড়ে যাওয়ায় রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, প্রায় ২০ হাজার কনটেইনার ছিল ডিপোটিতে। এর মধ্যে বেশ কিছু কনটেইনারে দাহ্য পদার্থ ছিল। সেটির বিস্ফোরণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ঠিক কতটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য পুড়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। এ বিষয়ে তথ্য জানতে বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সব তথ্য পাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’অন্যদিকে বিস্ফোরণে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএম কনটেইনারের ডিপোর মালিক পক্ষ। স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার সব শেষ। এই আগুনে আমার ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার এসব ডিপোতে এনে খালাস করা বাধ্যতামূলক। আবার বন্দরে এখন কোনো রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই হয় না। রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা থেকে এসব ডিপোতে এনে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। বিএম কনটেইনার ডিপো সূত্রে জানা গেছে, কনটেইনারে থাকা পণ্যের বেশিরভাগই গার্মেন্টস পণ্য। রপ্তানির জন্য এসব পণ্য ডিপোতে আনা হয়েছিল। 

এদিকে বিপুল পরিমাণ পোশাক পুড়ে যাওয়ায় এবং অনেক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক শিল্পমালিকরা। সাভারের রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টসের পর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে এটা বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন তারা। তাদের ভাষ্য, এর ফলে ক্রেতারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হবেন, অর্ডার কমিয়ে দেবেন। বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবেন। সবমিলিয়ে সামগ্রিক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। এমনিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে আমাদের শিল্পে। মে মাসে নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে।’

তিনি বলেন, এই ভয়াবহ আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও অনেক মানুষ মারা যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। সাভারের রানা প্লাজা, গার্মেন্টসের পর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে আরেকটি বড় ধাক্কা লাগলো। এর ফলে ক্রেতারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হবেন। অর্ডার কমিয়ে দেবে। বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে। সবমিলিয়ে সামগ্রিক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা পোশাক শিল্প মালিকরা এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন।

বিজিএমইএর মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আগুনে সবচেয়ে বেশি পুড়েছে সুইডেনভিত্তিক তৈরি পোশাকের খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড হ্যানস অ্যান্ড মৌরিটজ (এইচঅ্যান্ডএম) এর পোশাক। অর্থাৎ আমাদের পোশাক মালিকদের কাছ থেকে এইচঅ্যান্ডএম অর্ডার দিয়ে পোশাক কিনেছিল। আমাদের মালিকরা সব বুঝে দিয়ে রপ্তানির জন্য ওই ডিপোতে রেখেছিল। অন্য কোম্পানির কেনা পোশাকও ছিল ডিপোতে। তবে বেশিরভাগ পোশাক ছিল এইচঅ্যান্ডএমের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানি আয়ে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৮৩ কোটি (৩.৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই আয় গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে কম এসেছে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগুনের ঘটনায় রপ্তানি আয়ে আরো একটি ধাক্কা লাগল।

ইএফ

Link copied!