Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের হুমকি

শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ১৯, ২০২২, ০৭:০৪ পিএম


শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি

পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের দুর্দশার জন্য দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের সব লিজিং কোম্পানির সব অনিয়মের জন্য দায়ী পিপলস লিজিং কেলেঙ্কারি। অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের সাবেক পরিচালক শাহ আলম এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর আদালতের বারান্দায় ঘুরছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আমরা আমানত রেখেছি। তাই এখন থেকে পিপলস লিজিংয়ের অফিস নয় বরং পরবর্তী কর্মসূচি হবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও। শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীরা এসব কথা বলেন।

ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি প্রথম থেকে পিপলস লিজিংসহ অন্যান্য ফিনান্সিয়াল সংস্থাগুলোকে সঠিকভাবে দেখাশোনা করতো তাহলে এই সোনার বাংলাদেশে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক মহামারী চলছে তা কিছুতেই হতো না। আমাদেরকেও দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো না।

আজ চার বছর হলো আমরা আদালত, প্রধানমন্ত্রীর দরবার, বিভিন্ন দপ্তরে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে একাধিকবার গিয়েছি। আমরা অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছি। এর জন্য দায়ী শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন যে, বাংলাদেশে কোন তারল্য সংকট নেই, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পিপলস লিজিংয়ের বোর্ড যখন লোন চাইল, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক কেন তা বাতিল করে দিল? আজ পিপলস লিজিং যদি ঠিকঠাক মত চালু করা হতো এবং এই আমানতকারীদের কোন কষ্ট না হতো তাহলে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক মহামারী শুরু হয়েছে তা হয়তো হতো না। যে মহামারী চলছে তা পিপলস লিজিং থেকে শুরু হয়েছে, তা শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ তদারকির অভাবে হয়েছে।

আমানতকারীরা আরো বলেন, আমাদেরকে কেন করুণভাবে টাকা চাইতে হবে? আমরা তো আমাদের টাকাটা ফেরত চাই। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত এবং রেজিস্ট্রেশনকৃত সফল একটি প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখেছিলাম যে প্রতিষ্ঠান শেয়ার মার্কেটে বিদ্যমান ছিল এবং একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ডিরেক্টর। তাহলে কোনরকম নিয়মনীতি না মেনে সেই কোম্পানি কিভাবে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে পারে?

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে আছে, আমানতকারীদেরকে জানাতে হবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে। অথচ কোন রকম বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়নি, এমনকি কোনো চিঠিপত্র দিয়েও জানানো হয়নি। আমরা পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা আমাদের কষ্টার্জিত আমানতের টাকাগুলো ফেরত চাচ্ছি, আমরা কোন ভিক্ষা চাচ্ছি না, কোন লোন চাচ্ছি না।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে আমানতকারীরা বলেন, খেলাপিদের সম্পদ বিক্রি করে আমাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। তারা দামি গাড়িতে চড়েন। গাড়িগুলো বিক্রি করলেও অনেক বিপদগ্রস্ত আমানতকারীর বাঁচবে। তারা বলেন , ৪৯ শতাংশ সরকারি মালিকানার প্রতিষ্ঠানে  বিনিয়োগ করা ভুল ছিল না। যারা তদারকি করেনি তাদের ভুল।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার। আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আগামী বছরের মধ্যে অন্তত এক হাজার আমানতকারীর টাকা ফেরত দেয়া হবে।

ইতোমধ্যেই প্রায় ১০০ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। আগামী বছর টাকার পরিমাণ আরো বাড়বে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর ২০ কোটি টাকার বেশি ফেরত দিয়েছি। আরও ৩০ কোটি এফডিআর রাখা হয়েছে। ছোটদের টাকা আগে দেয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে বড়দের টাকা দেয়া হবে।

হাইকোর্টের নির্দেশে নিযুক্ত পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা ৩৪টি বৈঠক করতে সক্ষম হয়েছি এবং বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি আবার সচল হবে। আমানতকারীরা চাইলে তাদের টাকা শেয়ারে কনভার্ট করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জানান, বড় বড় ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে এই মামলার সংখ্যা ৩৫০টি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে টাকাও ফেরত দিচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অনেক ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই।

তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছর ধরে লুট করা হয়েছে। তাই এটাকে রাতারাতি পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব নয়। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

টিএইচ

Link copied!