Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পাঠক শূণ্য হয়ে পড়ছে রাজধানীর পাঠাগারগুলি

মার্চ ১৩, ২০১৫, ১১:০৯ এএম


পাঠক শূণ্য হয়ে পড়ছে রাজধানীর পাঠাগারগুলি

 

রাজধানীতে পাঠাগার আছে প্রায় একহাজার। ছোট-বড়, সরকারি-বেসরকারি এসব পাঠাগারে একসময় পাঠকের ভিড় লেগে থাকতো। কিন্তু পাঠাগারে প্রযুক্তি নির্ভর ও নতুন বইয়ের সংযোজন না থাকায় পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে পাঠাগারগুলো। তাই আগের তুলনায় পাঠাগারে পাঠকের সংখ্যা কম দেখা যায়।

বাংলাদেশে বেসরকারী পাঠাগার মধ্যে সবচেয়ে বড় পাঠাগার ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’। ৭০ দশকের শেষের দিকে শুরু হওয়া এই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রথম দিকে বেশ কিছু প্রতিকূলতার মধ্যে পরে। তবে সময়ের সাথে সাথে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছানোর অভিনব কায়দার জন্যে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এখন ঢাকাতে রয়েছে এর নয় তলা একটি ভবন। এ ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলাতে পাঠাগার ।

সেখানে প্রতিদিন আসেন এমন একজন পাঠককে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো, বেসরকারি পাঠাগারগুলোর পাঠক, বই, পরিবেশের কি ধরনের পার্থক্য আগে ও এখন দেখতে পান? উত্তরে তিনি বলেন, আগে আমাদের প্রত্যেকটা গ্রামে বা প্রত্যেকটা পাড়ায় নিজ উদ্যোগে কিছু পাঠাগার ছিল। ঢাকা শহরে অনেক পাড়া মহল্লাতে কোনও পাঠাগার নেই। আমরা বই পড়া শুরু করেছি শরৎচন্দ্র দিয়ে। এখন ছেলেমেয়েরা সে ধরনের বই পড়ে না। এখন তারা এমন বই পড়ে যে বই পড়লে তারা জীবনে কাজে লাগাতে পারে। মনের আনন্দের জন্য যে বই পড়া হয়, সেই পড়ার প্রতি আগ্রহ তাদের অনেক কম। সঠিক সংখ্যা পাওয়া না গেলেও এসব পাঠাগার থেকে পাওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, বছর দশেক আগে ঢাকাতে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি পাঠাগার ছিল।

তবে এখন সেগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের জানা নেই। তাছাড়া এগুলো একেবারেই ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গড়ে উঠার কারণে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় এ ধরনের কিছু বেসরকারি পাঠাগারেরখোঁজ পাওয়া যায়। বেসরকারি পাঠাগারের একজন তরুণ পাঠক বলেন, এখানে এখন হুমায়ন আহমেদের উপন্যাস, জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন, স্কুলপড়–য়া ছেলে-মেয়েদের কাছে খুব জনপ্রিয়। যারা একটু অগ্রসর পাঠক তারা একটু সমলোচনামূলক কিছু বই আর সাহিত্যের উপর সমলোচনামূলক বই পড়ে থাকেন। তারা এসব বই পছন্দ করে থাকে।

ঢাকার শাহবাগে আছে সুফিয়া কামাল গ্রন্থাগার। সরকারি এ পাঠাগারে পাঠকদের ভিড় লেগেই থাকে সবসময়। বিশেষ করে বিসিএস পরিক্ষার আগে তো জায়গাই দিতে পারেনা পাঠাগার কর্তৃপক্ষ। কথা হচ্ছিল একজন লাইব্রেরিয়ানের সাথে। তিনি বলেন, পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পাঠাগার থাকলেও আমাদের এখানে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। হরতাল অবরোধ শুরু হবার সাথে সাথে পাঠক তেমনটি দেখা যায়নি। তাছাড়া ইদানিং পাঠক প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। পাঠাগার কর্তৃপক্ষ পাঠাগারটিতে আরও উন্নত করার কথা ভাবছে। কথা হল এই পাঠাগারে আসা একজন শিক্ষার্থী সাদিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই এখানে পড়তে আসি। কিন্তু দেখি অনেক পুরাতন বই। বইয়ে ভেতরে ছেড়া পাতা। কিছু কিছু বই এত পুরাতন হয়ে গেছে যে বইয়ের পাতা খুলে খুলে পড়ে।

এদিকে বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে পুরনো পাঠাগারের মধ্যে গড়া একটি ধানমন্ডির গণ উন্নয়ন গণগ্রন্থাগার। বিদেশী সংস্থার অর্থায়নে ১৯৮২ সালে গড়ে উঠা এ পাঠাগারটিতে যে কেউ ৪০০ টাকার বিনিময়ে সদস্যপদ গ্রহণ করে বই পড়ার সুযোগ পেতে পারে। পাঠাগারটির প্রায় শুরু থেকেই পড়তে আসেন আমিনুর রহমান। তিনি বলেন শুরুতে পাঠাগারটিতে এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ আসত বই পড়তে। এলাকার নবীন-প্রবীণ, চাকুরিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন গড়ে ১৫০ মানুষ বই পড়ত। তবে সে সংখ্যা এখন এসে ঠেকেছে ৩০ জনে। তিনি বলেন, সে সময় অনেক পাঠক ছিল। দিনে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ লোক আসত। এখন অনেক কমে গেছে। ঢাকার বাইরে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতাম সেখানে পাঠকরা সেবা নিত। সেখানেও আমাদের পাঠক সংখ্যা কমে গেছে। এখন সেখানে আমাদের পাঠাগার প্রায় মৃত হয়ে পড়েছে।

 তিনি আরও বলেন, এই লাইব্রেরীর এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কিছু সহজলভ্য হয়েছে। ফলে পাঠকের আনাগোনা কমে গেছে। তাছাড়া আর্থিক সংকটের কারণে নতুন নতুন বই সংযোজন করতে না পারায় লাইব্রেরীতে আগের মতো পাঠকেরা ভিড় করছে না।

এছাড়াও ঢাকার বেশকিছু বেসরকারি সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পাঠাগার রয়েছে। তবে সেগুলো জনসাধারনের জন্য খোলা নয়। এখন  পড়ার জন্য বাংলাদেশে এক সময় সরকারি পাঠাগারের পাশাপাশি ছিল বেসরকারি পাঠাগার। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা কোনো সংস্থার সহায়তায় গড়ে ওঠা এসব পাঠাগার পাড়া-মহল্লার পাঠককে করে দিতো নানা ধরনের বই পড়ার সুযোগ।