Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস

এপ্রিল ২, ২০১৫, ০২:০৯ পিএম


শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস

 বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের বাঁধা কাটিয়ে আবারও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পথ চলা শুরু করেছে ক্যাম্পাসগুলো। অবরোধ-হরতালের কারণে স্থবির হয়ে পড়া উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমে চাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে শুরু হয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষা। অবরোধ হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি বছরের শুরু থেকেই এ সব কর্মসূচির কারণে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল।

এ ছাড়া কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও তা ছিল অনিয়মিত। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল খুব কম। একই অবস্থা দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাস-পরীক্ষা অবরোধ-হরতালের কারণে বন্ধ থাকলেও ইতোমধ্যে সবকিছুই চলছে ভালভাবে। এর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে খুলা হচ্ছে ক্যাম্পাস। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে আল কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র বায়েজিদ আহমেদ বলেন,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম গুণ হচ্ছে সঠিক সময়ে পড়া-লেখা শেষ হয়। যে কারণে মেধাবিরা পাবলিকে ভর্তি হওয়ার জন্য হুমরি খেয়ে পড়ে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ভার্সিটি বন্ধ থাকার কারণে আমরা অনেক বড় সেশনজটে পরে গেছি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ছাত্রদল-ছাত্রশিবির কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরপরই কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে।

অন্যদিকে,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দেড় মাস আগে খুলা হলেও শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়া ছিল কম। ক্লাস পরীক্ষাও হচ্ছিল না সঠিকভাবে। তবে বর্তমানে পুরোদমে চলছে কাস। অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ইমরান জানান,সেশনজটে অস্থির হয়ে পড়েছি। ২০১৩ সালের মার্চে ভর্তি হয়ে ছিলাম মাস্টার্সে আজও শেষ হয়নি।কবে যে শেষ হবে মাস্টার্স। চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ফাইনাল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সঠিক সময়ে তাদের পরীক্ষা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র। একইভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ক্যাম্পাস এখন মুখরিত।

এব্যাপারে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর মাসউদুর রহমান জানান, এখন শিক্ষার্থীরা নিয়মিত কাসে আসছে। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন অবরোধ ও হরতাল থাকাতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে না আসাতে আমরা সঠিক সময়ে পরীক্ষা নিতে পারিনি। তা ছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। শিক্ষার্থীরা না আসার কারণে আমরা সঠিক সময়ে সেশন ফি পায় নি। আমাদের খরচতো বন্ধ নেই সে হিসেবে আমরা এরকম পরিস্থিতি আর আসা করি না।

এই শিক্ষাবিদ মনে করেন, অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকল কিছুকে অবরোধ-হরতালের আওতামুক্ত রাখা দরকার। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আজকের শিক্ষার্থীরা হচ্ছে আগামীদিনের ভবিষ্যত। সে হিসেবে অবরোধ হরতালের কারণে যদি শিক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে যায় তাহলে দেশ অনেক পিছিয়ে যাবে। রাজধানীর নর্দান ইউনিভার্সিটিতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী সজিব।

 অন্যদিকে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল-অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তা স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিব বলেন, অবরোধ-হরতালের প্রথম কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং আমাদের কাস পরীক্ষা ভালভাবেই চলছে।

জানা গেছে, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এ অবরোধ হরতালে কাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে কোন সমস্যা নেই। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক নৌশিন তাবাসসুম বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধের প্রথম দিকে কাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে কাস ও পরীক্ষা চলছে। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবারে কাস নিয়ে ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে। ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন এ্যান্ড সায়েন্সেস-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানও একই কথা জানান। অবরোধ হরতালে স্থবির হয়ে যাওয়া শিক্ষা কার্যক্রম ফিরিয়ে পেয়েছে তার চিরচেনারুপ। পুরনে সাজে সেজেছে টিএসসি।