Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনা: প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়ন চান কারিগরি শিক্ষার্থীরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১৫, ২০২০, ১০:৩৫ এএম


করোনা: প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়ন চান কারিগরি শিক্ষার্থীরা 

বিশ্বে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ডিজিটালের ছোয়ায় আস্তে আস্তে বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। তবে এতে কিছুটা হলেও আঘাত হানে কোভিড-১৯। যা বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইতমধ্যেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্যখাত। এরপরের তালিকাতেই রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। 

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ। হতাশার মধ্যে পরে যায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তারা জানে না, কবে খুলবে তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জানে না কবে দেখা হবে তার প্রিয় বন্ধুদের সাথে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে মানসিক বিপর্যস্ততা। 

শিক্ষার্থীদের এমতাবস্থা দেখে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় যে, আবারও শুরু হবে শিক্ষা কার্যক্রম। যাতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরুপ প্রভাব না পরে। তবে এই শিক্ষাকার্যক্রম স্কুলে নয় শুরু হবে ভার্চুয়াল জগতে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা। কারণ ইতমধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন। এতে করে শিক্ষাঙ্গনে কিছুটা হলেও প্রাপ্তি যোগ করেছে ভার্চুয়াল ই-লার্নিং ব্যবস্থা। নরমাল শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে চালু হয়েছে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাও। 

বর্তমানে বিভিন্ন টেকনিক্যালের প্রশিক্ষকরাও অনলাইনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনলাইনে বিষয় ভিত্তিকভাবে ছোট ছোট ভিডিও শেয়ার করছে তাদের শিক্ষার্থীদের সাথে। এতে করে ছোটখাট সব বিষয়ই জানতে পারছে শিক্ষার্থীরা। কিছু ভুলে গেলেও দেখে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা। এতে করে খুশি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তবে কিছু শিক্ষার্থীর আবার এ বিষয়ে মন খারাপ। তাদের মতে, কারিগরি শিক্ষা মানেই হাতে কলমে শিক্ষা। তারা অনলাইনের মাধ্যমে শিখতে পারলেও হাতে কলমে তা করতে পারছে না। যা তাদের দক্ষ কারিগর হতে ব্যাহত করতে পারে বা ভবিষ্যতে সমস্যায় ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছেন। 

এ বিষয়ে ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলের একজন প্রশিক্ষক জানান, বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এতে করে সচল রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থা। সেই অবস্থায় ই-লানিং ব্যবস্থা আমাদের একটু হলেও আশার আলো দেখিয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপ্রস্তুকের বিভিন্ন বিষয় ভিডিওর মাধ্যমে তাদের কাছে প্রজেন্ট করছি। 

এতে করে তারা সহজেই সবকিছু মনে রাখতে পারছে। যা তাদের শিক্ষাকে সচল রাখছে। তবে এতে করে অদূর ভবিষ্যতে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। হতে পারে সেশনজটসহ কর্মক্ষেত্রে চাকুরি না পাওয়ার সম্ভাবনা। বৃদ্ধি পেতে পারে বেকারত্বের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে অনৈতিক কার্যকলাপ। বিপথগামী হতে পারে যুব সমাজ। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যে সব যুবকরা বিদেশ পাড়ি দিতে চেয়েছেন তারা পরেছেন নতুন বিপাকে। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন করতে না পারায় তাদের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার। কিভাবে সবকিছু সামলাবেন ভেবে পাচ্ছে না তারা।

এ বিষয়ে ইলেক্ট্রনিক্স বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে গত জুন মাসে ডুবাই পারি জমানোর কথা ছিল মোরশেদ মিয়ার। নিয়ম করে ভর্তিও হয়েছিলেন মিরপুরে অবস্থিত জার্মান টেকনিক্যালে। কিন্তু এরইমধ্যে করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যায় সবকিছু। বিপাকে পরে যায় মোরশেদের পরিবার। কারণ চড়া সুদে টাকা ধার করে বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তারা। 

এ বিষয়ে মোরশেদ বলেন, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে করোনার জন্য সবকিছু বন্ধ। সুদের টাকা বেড়েই চলেছে। কিভাবে কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। আগে যে কাজ করতাম তাও বন্ধ। ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। সরকার যদি আমাদের মত যুবদের জন্য যে চিন্তা করেছেন, তা তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত করলে উপকৃত হতাম। তবে তা কবে হবে সেই বিষয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই যাচ্ছে। 

এ সমস্যা দূর করার জন্য সরকার হাতে নিয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। যাতে করে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা কমে। তবে তা বাস্তবায়নের তেমন কোন লক্ষণই দেখা যায়নি। তাড়াতাড়ি এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য সরকার পাড়া-মহল্লাতে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের সমস্যা অনেকাংশেই দূর করা যেতে পারে। তাছাড়াও রাখতে পারে যুববান্ধব প্রণোদনা প্যাকেজ। যার মধ্যে থাকবে কারিগরি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ ঋণ প্রধানের সহায়তা। 

এছাড়াও আইসিটি খাতে সরকার কর্মসংস্থানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন কোর্সের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তৈরি করতে পেরে দক্ষ কারিগর। এতে করে এক দিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের ধার উন্মাচিত হবে সেই সঙ্গে কমবে বেকারত্বের সংখ্যা। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাবে সোনার বাংলাদেশ।

আমারসংবাদ/এমআর