Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে চবির শিক্ষার্থীরা

চবি প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২০, ২০২১, ১২:৩০ পিএম


পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে চবির শিক্ষার্থীরা

নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিত না থাকায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি মেলেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর)। তাই দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রায় দুই বছর পর শুরু হওয়া প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে এসব শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে ইনস্টিটিউটের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় সহপাঠী সবাইকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অনুমতি প্রদানের দাবিতে স্লোগান দেয় তারা। 

জানা যায়, পরীক্ষার দাবিতে গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে আন্দোলন করে আসছিল আইইআর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে কর্মসূচি শেষ করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে তারা। 

এসব আন্দোলনের পর গত ১০ জানুয়ারি ২০১৮-১৯ সেশনের প্রথম বর্ষের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। 

২০ জানুয়ারি বাংলা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৪ মাস ২০ দিন পর প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। 

কিন্তু এ পরীক্ষাতেও ১১ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিতির হার কম থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেয়ায় আন্দোলনে নেমেছেন তারা। 

আন্দোলনকারীদের দাবি, পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ও শারীরিক সমস্যা ছিল। কয়েকজনের অপারেশন হয়েছিল, একজনের মা মারা যাওয়ায় কিছুদিন এরা ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে নাই। 

এসব বিষয় নিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার কয়েকদফা শিক্ষকদের সাথে দেখা করে তারা। ১৮ জানুয়ারি চার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে পরীক্ষার জন্য রাজি হয়ে পরদিন সেটা নাকচ করে দেয় ইনিস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।

অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে আমার মা অসুস্থ। পরিবারে কেউ না থাকায় আমাকেই মায়ের দেখাশোনা করতে হতো। আমি অনেক ক্লাস করেছিলাম। 

কিন্তু উপস্থিতির হার কম থাকায় আমাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই হাসপাতালের সার্টিফিকেটসহ যাবতীয় তথ্য সংযুক্ত করে আমি ইনিস্টিটিউটের পরিচালক বরাবর আবেদন করেছি।’ 

জানা যায়, ২০১২ সালে অনেকটা অপ্রস্তুতভাবে যাত্রা শুরু করে এই ইনস্টিটিউট। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আনোরুল আজিম আরিফের ছেলে ইফতেখার আরিফ তড়িঘরি করে এই বিভাগটি চালু করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শর্ত না মেনে এ বিভাগের উপাচার্যের সন্তান ইফতেখার আরিফসহ চবি স্কুল এন্ড কলেজের ১৮ জন শিক্ষককে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে আত্তীকরণ করা হয়। 

ইউজিসির নির্দেশনায় তদন্তের পর তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১৫ তম সিন্ডিকেট সভায় ১৮ শিক্ষককে আইইআরের শিক্ষক হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

পরে অবশ্য সিন্ডিকেট সভার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইইআরের দুই শিক্ষক এমএ শাহেন শাহ ও ইফতেখার আরিফ হাইকোর্টে আলাদাভাবে দুটি রিট করেন। এ বিষয়ে আদালতের চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিভাগ কেন্দ্রিক নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নেয়নি কতৃপক্ষ। ফলে ভর্তির প্রায় দুই বছর শেষে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের। তাও অনেক আন্দোলন সংগ্রাম শেষে। 

তাদের সাথে ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছে। আবার এখন যদি তাদের এগার সহপাঠীকে পরীক্ষা দিতে না দেয় তাহলে তাদের ১ম বর্ষ শেষ হতে লাগবে কমপক্ষে আরও একবছর। যদি নিয়মিত পরীক্ষা হত তাহলেও খুব বেশি সমস্যা হত না। 

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইফতেখার জানায়, ‘আগের ব্যাচগুলোতে উপস্থিতির হার কম থাকলে জরিমানা নিয়ে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হতো। 

সহপাঠীদের সমস্যায় আমরা স্যারদের নিকট মানবিক আবেদন করছি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। এজন্য স্যারদের যেকোন শর্তও আমরা মানতে রাজি। কিন্তু আমাদের বিভাগ কতৃপক্ষ প্রথমে আশ্বাস দিলেও এখন আবার আবেদন কিংবা জরিমানা কোনোটিই গ্রহণ করছেন না।’

এসব বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহমদের সাথে। 

তিনি জানান, ‘পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডি মিটিং করছে। সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন।’

প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি অনেকে বিভিন্ন কারণে অনুপস্থিত ছিল। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কাছে তাদের পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলেছি। 

তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগামীতে অনুপস্থিত না থাকার বিষয়ে একটি মুচলেকা নিয়েছি আমরা। ইনস্টিটিউট কতৃপক্ষ তাদের একাডেমিক কমিটিতে অনুমোদন করে পরীক্ষার বিষয়ে সুরাহা করবে।’

তবে প্রক্টরিয়াল বডির সিদ্ধান্তের পর ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহমদের সাথে আবার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল কেটে দেন। 

আমারসংবাদ/এআই