Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

খুবিতে বহিষ্কারের প্রতিবাদে চবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষকের বিবৃতি

মিজানুর রহমান, চবি প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০২:৪০ পিএম


খুবিতে বহিষ্কারের প্রতিবাদে চবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষকের বিবৃতি

গত বছর জানুয়ারির শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি কমানো, আবাসন সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। এর প্রায় নয় মাস পর গত ১৩ অক্টোবর ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ এনে তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে এ ঘটনার তদন্ত ও কয়েক দফা কারণ দর্শানোর পরও ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তিন শিক্ষকের মধ্যে একজনকে বরখাস্ত এবং দুইজনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।

বহিষ্কৃত ওই শিক্ষক হলেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল। একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ করা হয়।

সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কারের এমন অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১জন শিক্ষক একটি বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কারের অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করার মাধ্যমে পরিদৃশ্যমান হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব। কারণ এতে করে শিক্ষকদের চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কেবল শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিকে সমর্থন করার কারণে একজন শিক্ষককে চাকুরি থেকে বরখাস্ত এবং দু'জন শিক্ষককে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।'

তিনজন শিক্ষকের বহিষ্কার ও অপসারণ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, 'খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তি নির্ধারণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন পর্যন্ত প্রশাসন যে নিয়মতান্ত্রিকতার আবরণ দেখিয়েছে, তার আড়ালে ঘটিয়েছে অসংখ্য মিথ্যাচার। সেগুলো সবই প্রমাণিত। শুরু থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষকদের ব্যাখ্যা প্রদান ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও, তাদেরকে কোনো অভিযোগ বিবরণী বা অভিযোগ-সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়া হয়নি। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষকদের একজন অসুস্থ হয়ে প্রথমে ছুটিতে এবং পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তাকে সুস্থ প্রমাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে সিভিল সার্জনের সাক্ষর নকল করে ভুয়া সনদ দেয়। কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচার আবারো পরিলক্ষিত হয় তদন্ত কমিটির কার্যকলাপে। তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বক্তব্য গৃহীত হয়নি, যথাসময়ে কমিটিকে অবহিত না করার অজুহাতে। অথচ তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের ডাকার আগেই অজ্ঞাতে অন্যান্যদের সাক্ষ্য নিয়ে নেয়া বিধিসম্মত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নাটকীয় ভাবে তাদের দোষ প্রমাণ করে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।'

জানা যায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বিস্তর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে। দুর্নীতি, নিয়োগবোর্ডে অনিয়ম, ভিসির স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি ইস্যুতে এই শিক্ষকেরা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেছেন। সেজন্য ভিসি তার সমস্ত স্বেচ্ছাচারিতার ইতিহাস চাপা দিতে চেয়েছেন প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের শাস্তি প্রদান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এ বিষয়ে বিবৃতি প্রদানকারী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসান মুহাম্মদ রোমান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আতুরঘর। যখনই কোন অনিয়ম হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এটার প্রতিবাদ করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন তরুণ প্রতিবাদী শিক্ষকদের শাস্তি প্রদান আমাদের গোটা শিক্ষক সমাজের জন্য অশনিসংকেত। একটা অহিংস আন্দোলনের প্রেক্ষিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কারের মত কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শাস্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মুক্ত চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার পথকে উন্মুক্ত করে দেবে। আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।'

আমারসংবাদ/কেএস