Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

চরম সংকটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

আসলাম হোসেন, জবি

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১, ০২:৩৫ পিএম


চরম সংকটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে একের পর এক তারিখ ঘোষণা করলেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে স্বাভাবিক হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম। এমতাবস্থায় সব থেকে বিপাকে পড়েছেন দেশের একমাত্র অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ঘোষণা অনুয়ায়ী বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে গ্রামের বাড়িতে কিন্তু মেস ভাড়া ঠিকই বহন করতে হয়।

অন্যদিকে করোনার কারণে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ইনকামের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তাগিদে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের এই চরম সংকট তৈরি হলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দায়সারা কিছু সাহায্য-সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংকট নিরসনে একটি কমিটি গঠনের সাত মাস পার হলেও যার ফল এখনো পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, করোনায় শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া সংকট দেখা দেয় গত মে মাস থেকে। বাড়িওয়ালাদের বিভিন্ন হুমকির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও হয়রানি বাড়ে শিক্ষার্থীদের।

এরপর গত বছরের ১০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনের ১৯ নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের করোনায় সংকটকালীন শিক্ষাবৃত্তির দাবি জানায়। পরদিন ১১ জুন শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দও মৌখিকভাবে শিক্ষাবৃত্তির দাবি জানায়। 

দাবির প্রেক্ষিতে ১৩ জুন সংকট নিরসনে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে নিয়ে এক সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি গঠনের ২৩ দিন পর গত ৭ জুলাই শিক্ষাবৃত্তির প্রস্তাব দিয়ে প্রস্তাবনা দেয় তদন্ত কমিটি। যে কমিটির সাত মাস পূর্ণ হলেও যার এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

এদিকে গত বছর (২০২০ সালের ৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল বাকি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। যেখানে মেস ভাড়া সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে একটি ফরম সংগ্রহ করতে বলা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সমালোচনার মুখে তাৎক্ষণিক বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ২৫ জুন শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত ৫ দফা দাবি জানান শাখা ছাত্রলীগ। তাদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন, তাদের মালপত্র সরাতে মাঠে সক্রিয় কাজ করে আসছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্পষ্ট কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের ৫ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অনশনে বসেন। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এ বিষয়ে সংকট নিরসন কমিটির একমাত্র সদস্য মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুর মোহাম্মদ  জানান, আমাকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে, আমি শিক্ষাবৃত্তির প্রস্তাবনা দিয়ে রিপোর্ট সাবমিট করেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। তবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসলে তখন শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হবে।

কমিটি গঠনের ও রিপোর্ট প্রদানের সাত মাস পার হবার পরেও এ বিষয়ে কেনো  কার্যক্রম নেই? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা ভিসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, কমিটি একটা রিপোর্ট সাবমিট করেছে সেটা আমি উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি এ বিষয়ে। এবং কোন একাডেমিক মিটিংও হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের সব কিছু রেডি করা আছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে, পারিবারিক অবস্থা যাচাই করে ডিপার্ট্মেন্টের চেয়ারম্যানের সুপারিশ ক্রমে। আমরা যে পরিমান ছাত্রকে শিক্ষাবৃত্তি দিতাম তার থেকে অধিক পরিমান শিক্ষার্থীকে দিবো।

আমারসংবাদ/কেএস