Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ঢাবির ভর্তি আবেদন শুরু

ঢাবি প্রতিনিধি 

মার্চ ৮, ২০২১, ১২:৫০ পিএম


ঢাবির ভর্তি আবেদন শুরু

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়েছে। সোমবার (৮ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশাসনিক ভবনস্থ কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে (কক্ষ নং-২১৪) আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনলাইনে ভর্তির আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া উদ্বোধন করেন। এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও ভর্তি কমিটির সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতো। এর ফলে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের পক্ষ নানা ভোগান্তির কথা উঠে আসে। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতিও এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব বিষয়কে বিবেচনায় রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এবার বিভাগভিত্তিক পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এবার শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রের স্থান বেঁচে নিতে পারবে। তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুরোধ থাকবে, নিজেদের বিভাগীয় শহরে যাতে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রের পছন্দ চিহ্নিত করে। ভৌগলিক কারণে কখনো নিজের বিভাগের চেয়ে অন্য জায়গা ভাল হয়। সেজন্য শিক্ষার্থীরা পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় পরীক্ষার কেন্দ্র পছন্দ করতে পারবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর মোট পাঁচটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেগুলো হলো- ক-ইউনিট, খ-ইউনিট, গ-ইউনিট, ঘ-ইউনিট এবং চ-ইউনিট। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার আবেদন আজ সোমবার বিকেল ৫টার পর শুরু হয়েছে চলবে ৩১ মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা (https://admission.eis.du.ac.bd) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। এসব ইউনিটের মধ্যে ক-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২১ মে, খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২২ মে, গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ২৭ মে, ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৮ মে এবং চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান) অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষা ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

আবেদন যোগ্যতা
ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীদের ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে ‘ক' ইউনিটের জন্য মাধ্যমিক ও সমমান এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৮.৫ (আলাদাভাবে জিপিএ ৩.৫), ‘খ' ইউনিটের জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৮.০ (আলাদাভাবে ৩.০), ‘গ' ইউনিটের জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৮.০ (আলাদাভাবে ৩.৫), ‘ঘ' ইউনিটের জন্য মানবিক শাখার ক্ষেত্রে জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৮.০ (আলাদাভাবে ৩.০) ও বিজ্ঞান শাখার ক্ষেত্রে জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৮.৫ (আলাদাভাবে ৩.৫) এবং ‘চ' ইউনিটের জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৭.০ (আলাদাভাবে জিপিএ ৩.০) থাকতে হবে।

পরীক্ষার মানববণ্ঠন
‘ক', ‘খ', ‘গ' ও ‘ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুধু ‘চ' ইউনিটের পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘ক', ‘খ', ‘গ' ও ‘ঘ' ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘চ' ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৩০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

অলাইনে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের করণীয়
- যেকোনো ইউনিটে ভর্তির আবেদন https://admission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে করা যাবে।

- ভর্তির আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিকের তথ্য লাগবে।

- বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর, পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (ঐচ্ছিক) লাগবে।

- শিক্ষার্থী যে বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তা লাগবে।

- কোটা এবং স্ক্যান করা একটি ছবির প্রয়োজন পড়বে।

- ভর্তির আবেদন ফি তাৎক্ষণিক অনলাইনে বা চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জমা প্রদান করা যাবে।

- আবেদন ও ফি জমার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উক্ত ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

- এ-লেভেল/ও-লেভেল/সমমান বিদেশী পাঠক্রমে বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সমতা নিরূপণের জন্য https://admission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘সমমান আবেদন' বা ‘Equivalence Application’ মেনুতে আবেদন করে তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। সমতা নিরূপণের পর প্রাপ্ত ‘Equivalence ID’ ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো তারা একই ওয়েবসাইটে লগইন করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে।

কোটায় ভর্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীর ওয়ার্ডকোটা (কেবল ছেলে/মেয়ে/স্বামী/স্ত্রী) উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধি (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ ও শারীরিক) ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/মুক্তিযোদ্ধার নাতি/নাতনিসহ, খেলোয়াড় (শুধু বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র/ছাত্রীদের) কোটায় ভর্তি প্রার্থীদেরকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে ওই ইউনিটের ডিন অফিস থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদর্শনপূর্বক নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করতে হবে।

(ক) ওয়ার্ড কোটার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানের প্রত্যয়নপত্রসহ। 

(খ) উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে স্ব-স্ব উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রধান/জেলা প্রশাসক এর সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ 

(গ) হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় কোটার ক্ষেত্রে হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় সংগঠন প্রধানের সনদপত্রসহ।

(ঘ) প্রতিবন্ধী কোটার (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ ও শারীরিক) ক্ষেত্রে সঠিকতার সনদপত্রসহ।

(ঙ) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/মুক্তিযোদ্ধার নাতি/নাতনিসহ কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সনদপত্র অথবা ১৯৯৭ সন থেকে ২০০১ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অধীনে তৎকালীন  প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রসহ।

(চ)  খেলোয়াড় কোটায় মাত্র বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক সনদপত্র প্রাপ্ত হতে হবে।

উপরোক্ত কোটার নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পূরণ করে যে কোটায় ভর্তি হতে ইচ্ছুক তার প্রত্যয়নপত্র/সনদপত্র/ প্রমাণপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানের অফিসে অফিস চলাকালীন সময়ে জমা দিতে হবে।

যাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সনদ নেই কিন্তু সনদের জন্য আবেদন করেছে তাদের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। তবে ভর্তির জন্য চূড়ান্ত নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সনদপত্র জমা দিতে হবে। 

ভর্তি পরীক্ষায় পূর্বের জিপিএ বহালের দাবিতে ঢাবি ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ২০২০-২১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় পূর্বের জিপিএ বহালের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। 

সোমবার বেলা সাড়ে বারোটা থেকে তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের সামনে জড়ো হয়। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা  মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের অনিচ্ছা সত্বেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের অটো পাস দিয়েছে। আমরা এটি চাইনি। আমরা চেয়েছি পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের যোগ্যতা প্রমাণের সম্ভব হয়নি। এ আশায় আমরা চার মাস রাতদিন পড়াশোনা করেছি। 

ভর্তিচ্ছু এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ বাড়ানো হয়েছে যা অনৈতিক সিদ্ধান্ত। যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী, সঠিক নেতৃত্ব আসে, সব অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করা হয়। সেখানেই অন্যায় করা হচ্ছে। আমরা এ অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আগের জিপিএ পূর্ণবহাল রাখা হোক। আমাদের ভর্তি পরীক্ষায় বসিয়ে আমাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হোক।

পরে দুপুর একটার দিকে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বৈঠক শেষে সরফরাজ নামের আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা উপাচার্য স্যারকে আমাদের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু উনি আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য কোন আশ্বাস দেননি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অবস্থান ছাড়ছি না। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিষয়ক সাধারণ ভর্তি কমিটির এক সভায় আবেদনের যোগ্যতা বাড়ানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির আবেদনের জিপিএ ০.৫০ বৃদ্ধি করে ৮.৫০, বাণিজ্য বিভাগে .৫০ বৃদ্ধি করে ৮.০০ এবং মানবিক বিভাগে ১.০০ বৃদ্ধি করে ৮.০০ করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস