মোতাহার হোসেন, ঢাবি
মার্চ ১৯, ২০২১, ০১:১৫ পিএম
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে গত বছরের ১৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তবে, গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হলেও চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো এখনো আটকে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেলেও হল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে এখনো কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বছর খানেক ধরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকার কারণে তারা অস্থির হয়ে পড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় যখন বন্ধ হয় সে সময় শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবার হলগুলো খুলে দেয়া হবে। সেসময় অনেকে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রেখে যান।
তবে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে থাকলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় একদিকে সেশনজট, অন্যদিকে আর্থিক চাপেও পড়ে যান বহু শিক্ষার্থী।
করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই চাকরির নিয়োগ। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেমে নেই। অথচ পড়াশোনা করতে নানা সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা জানিয়েছেন, বাসায় থেকে অনেকের পড়াশোনা নানা কারণে হয় না। আবার অনেকের বইখাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অনেকে আবার শহরে থেকে পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। অনেকের বাসায় থেকে নেটের কারণে ক্লাস করতে সমস্যা হয়।
অনেকে আবার প্রতিবেশীর রোষানলে পড়ে বাসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শহরের আশপাশ বাসা বা মেস ভাড়া করে থাকছেন। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায় সেখানে থাকতেও নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল খোলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিমা সুমাইয়া বলেন, এতদিন বাড়িতে একনাগাড়ে থেকে মনে হচ্ছে মস্তিষ্ক ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। বাসায় থেকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পড়াশুনার নিড়িবিলি পরিবেশ ঠিক মতো পাওয়া যায় না, ইন্টারনেট সমস্যা তো রয়েছেই। অনেক কষ্টে ক্লাসগুলো করা লাগে। কবে পড়াশুনা শেষ করে মেয়ে কোনো চাকরি করবে এই নিয়ে বাবা মা কে প্রায় সময়ই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ দেখতে হয়।
তিনি আরো বলেন, পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। হলে থাকলে আশেপাশে থেকে অনেক বই জোগাড় করে পড়া যায় যা বাড়িতে থেকে সম্ভব হচ্ছে না। তাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুব দ্রুত হল খুলে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ তমাল বলেন, বাসায় থেকে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছি। পড়াশোনা আদৌ শেষ করতে পারব কিনা, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়তই। হল খুলে না দেয়ায় আর্থিক মানসিক পারিবারিক সব দিক দিয়েই ভেঙ্গে পরছি।
তিনি আরো বলেন, স্টুডেন্টদের মধ্যে অধিকাংশ যারা হলে থাকতো তারা বেশির ভাগই টিউশন করিয়ে নিজের খরচ পাশাপাশি পরিবারের খরচ বহন করতো। অনেকে নানা ধরনের কাজের সাথে জড়িত ছিলো। হলে না থেকে যা করা কষ্ট সাধ্য। আবার অনেকের বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ নেই।
হলে তারা পড়াশোনা করতে পারতো শান্তিতে। অনেকে একাডেমিক কাজের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। যা বেশিরভাগ ছাত্রদের জন্য কষ্ট সাধ্য। এসব দিক বিবেচনায় হল খোলা জরুরী বলে আমি মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রথমে মনে করছিলাম যে কিছু দিন পর হল খোলে দিবে কিন্তু দীর্ঘদিন হল বন্ধ থাকার কারণে মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও অনলাইনে ক্লাস হয়েছে কিন্তু নেট প্রোবলেমের কারনে বেশির ভাগ ক্লাসই করতে পারছি নাহ। আর বাড়িতে থেকে কোন প্রকার পড়াশোনাই হয়নি। তাই আমি চাই অতিদ্রুত হল খোলে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আমারসংবাদ/এআই