শিক্ষা ডেস্ক
মার্চ ২০, ২০২১, ১২:০০ পিএম
চলতি বছর প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে তোলা হতে পারে। এছাড়াও সিলেবাস ছোট করে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হলেও প্রথম সাময়িক পরীক্ষা না নেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। শুধু দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে তোলা হতে পারে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ২০২০ সালের প্রায় অধিকাংশ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। চলতি বছরও তিন মাস পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হচ্ছে। যেহেতু আমাদের তিন মাস পার হয়ে গেছে, তাই সিলেবাস কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছয়দিন ক্লাস নেয়া হবে। শিক্ষকরা ক্লাসে কী পড়াবেন, কীভাবে পড়াবেন না, কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবেন- এ জন্য একটি লেসন প্ল্যান (পাঠ পরিকল্পনা) ও শিক্ষক নির্দেশিকা গাইড তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তককে (এনসিটিবি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ক্লাস শুরুর আগে পাঠ পরিকল্পনা ও নির্দেশিকার ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান ডিপিই মহাপরিচালক।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ পরিকল্পনা হিসেবে শিক্ষক নির্দেশনা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়ে ওরিয়েন্টশনের (কর্মশালা) আয়োজন করা হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন কী পড়াবেন, পঞ্চম শ্রেণির পিইসি পরীক্ষার প্রস্তুতি কী হবে- সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ক্লাসে শিক্ষকরা সে বিষয়গুলো অনুসরণ করে পাঠদান করাবেন।
তিনি বলেন, নেপ ও এনসিটিবি যৌথভাবে এ ওরিয়েনটেশনের কাজটি করবে। শিক্ষক নির্দেশিকায় একজন শিক্ষক করোনা পরবর্তী সময়ে কীভাবে ক্লাসে পড়াবেন, তার একটি গাইডলাইন থাকবে। সেখানে বিষয়ভিত্তিকভাবে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হবে, শিক্ষক ক্লাসে কোন অধ্যায়গুলোকে গুরুত্ব দেবেন এবং তা কীভাবে পড়াবেন। একই সঙ্গে একটি বিষয়ে বেশি প্রয়োজনীয় নয় এমন বিষয়গুলো না পড়িয়ে রিলেটেড (সম্পর্কিত) একটি অধ্যায়ের সঙ্গে অন্য অধ্যায়ের কাছাকাছি আছে এমন বিষয়কে একসঙ্গে পড়াতে নির্দেশনা দেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম বলেন, আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে এ সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছর সিলেবাসের অনেক বিষয় পড়ানো সম্ভব হয়নি। গত বছরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় চলতি বছর যুক্ত করা হচ্ছে। তবে তিন মাস ক্লাস না হওয়ায় চলতি বছর প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলে নির্ধারিত আছে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা। এর মধ্যে এসএসসির পরীক্ষার্থীরা একটি বছর বাসায় বসেই কাটিয়ে দিয়েছে। এমনকি দশম শ্রেণিতেও তিনটি মাস চলে গেছে। গত আগস্টে ভর্তি করা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার অপেক্ষায় আছে। উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই এখন পর্যন্ত সরাসরি পদ্ধতির পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় তাদের সিলেবাসও ছোট করে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে নেওয়ার চিন্তা আছে সরকারের। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। সেটি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থী যথাসম্ভব অনলাইন ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।
এরপরও এসব শিক্ষার্থীর সরাসরি পদ্ধতির পাঠদান শুরুর চিন্তা আছে সরকারের। ৩০ মার্চ খোলা সম্ভব হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ক্লাস নেওয়া হবে। আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে ৮৪ দিন। এসব পরীক্ষার্থীকে সপ্তাহে ৬ দিনই ক্লাসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এই দুটি পরীক্ষায় প্রায় ৩২ লাখ পরীক্ষার্থী আছে বলে জানা গেছে।
এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ২০২২ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তারা এখন দশম শ্রেণিতে। নবম শ্রেণিতে তাদের সরাসরি পাঠদান হয়নি। আর ওই বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও একই পরিস্থিতি। তবে তাদের পরীক্ষার সময়টা একেবারে কাছে নয়। যে কর্মদিবস আছে, সেটাই বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এনসিটিবি থেকে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওপর একটি সিলেবাস অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অনুমোদনের পর এটি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পাঠানো হবে। বোর্ডগুলো তা প্রকাশ করবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত সিলেবাসটি কর্মদিবস ধরে তৈরি হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫০ কর্মদিবস শ্রেণিকাজ হবে। আর এইচএসসির ক্ষেত্রে ১৮০ কর্মদিবস ক্লাস নেওয়া হবে। যদি ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়, তাহলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস নেওয়া হবে তাদের। দিন ধরে পরিকল্পনা তৈরি করায় ২০ শতাংশের মতো সিলেবাস কমছে বলে জানা গেছে। এই দুটি পরীক্ষায় প্রায় ৩৩ লাখ পরীক্ষার্থী আছে বলে জানা গেছে।
সূত্র নিশ্চিত করেছে, জেএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে সরকারের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ঘোষিত পরিকল্পনায় মনে হচ্ছে, সরকার এবার এই পরীক্ষাটি নিতে চাচ্ছে না। যে কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মতোই তাদেরকেও (অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী) সপ্তাহে একদিন স্কুল-মাদ্রাসায় আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
তবে পিইসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অনড় আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যে কারণে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে এবারের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পিইসি পরীক্ষার্থীদেরও সপ্তাহে ৬ দিন স্কুলে আনার কথা বলা হয়েছে। পরে আলাপকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পিইসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশের শিক্ষাঙ্গনে। আগামী ৩০ মার্চ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা আছে। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আমারসংবাদ/জেআই