মোতাহার হোসেন, ঢাবি
মার্চ ২২, ২০২১, ০১:৩০ পিএম
সোমবার ছিলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন। মেলা শুরুর পাঁচ দিন হয়ে গেলেও মেলা এখনো জমেনি। বেশ ঢিলেঢালাভাবেই চলছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে, আগামী শুক্রবার থেকে মেলা জমতে পারে বলে জানিয়েছেন আয়োজন ও প্রকাশকরা। মেলায় পাঠকের উপস্থিতি কম থাকায় অনেক স্টলের বিক্রেতারা অবসর সময় কাটাচ্ছেন।
বাংলা একাডেমীর বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, এখনো পাঠক অনেক কম। তবে, আগামী ছুটির দিন শুক্রবার থেকে মেলা জমতে পারে। তবে, যতটুকু শুনেছি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে পাঠক আবার কমে যেতে পারে।
সোমবার (২২ মার্চ) মেলার দুই প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় পাঠকের উপস্থিতি বেড়েছে। তবে, বিকাল ৩টায় মেলা শুরুর সময় থেকে কয়েক ঘন্টা পাঠক একদম ছিলো না। তবে, আসরের নামাযের পড় থেকে পাঠক বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজধানীর কাটাবন থেকে আসা আল আমিন বলেন, এবারের বইমেলায় আগের বছরের আমেজ পাচ্ছি না। শীতের সময় ছাড়া বইমেলা জমে না। তবে, এবার বিশাল জায়গা নিয়ে বইমেলা হচ্ছে। সেটা করোনার প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে অনেক পাঠক হয়ত মেলায় আসবে না।
[media type="image" fid="116332" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
মূলমঞ্চের আয়োজন: সোমবার বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারেক রেজা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাসির আহমেদ, খালেদ হোসাইন এবং মিনার মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি অসীম সাহা।
এ সময় প্রাবন্ধিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-নির্ভর সাহিত্যকর্ম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও অর্জনকে আনুষ্ঠানিকতার ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি দিয়ে পাঠকের মগজে মুদ্রিত করে দেয়, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সৌরভ ও সমৃদ্ধিকে জীবন ও যাপনের সঙ্গে একীভূত করতে চায়। বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে উপস্থিত জনমানসে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ানো নয়, ক্ষমতার দম্ভে শেকড়ের টানকে উপেক্ষা করা নয়, মানুষ্যত্বের সকল দুয়ার খুলে দিয়ে মুক্তির আনন্দ সঞ্চারই কালজয়ী সাহিত্যের কাজ। মুক্তিযুদ্ধ-আশ্রয়ী সাহিত্য আমাদের সেই দর্পণের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়, যেখানে আমরা অতীতের জীবন্ত জলছবি দেখি, বর্তমানকে ইচ্ছের অনুকূলে বিনির্মাণ করতে শিখি এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলোকে বুক-পকেটে আগলে রেখে ভাবি: ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির দীর্ঘ দিনের মুক্তির আকাক্সক্ষা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। আর মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও চেতনাকে ধারণ করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য নামক নতুন সাহিত্যধারা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ যেমন নানা দিক দিয়ে দ্রুত উন্নতির শিখরে এগিয়ে চলেছে, তেমনি আমাদের শিল্প-সাহিত্যকেও সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল রেখে এগিয়ে নিতে হবে। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন হুমায়ূন কবির ঢালী, জয়দীপ দে এবং রাহেল রাজিব।
নতুন বই: মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৯টি। তার মধ্যে গল্পের বই ২০টি, উপন্যাস ২৮টি, প্রবন্ধ ১৩টি, কবিতা ৫০টি, ছড়া ৩টি, শিশুসাহিত্য ২টি, জীবনী গ্রন্থ ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৪টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ১টি, ইতিহাস বিষয়ক ২টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ৪টি, ধর্মীয় বিষয়ক ১টি, অন্যান্য ৪টি সহ মোট ১৩৯টি বই নতু এসেছে।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি: মঙ্গলবার (২২ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: মুক্তিযুদ্ধ ও নারী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মনিরুজ্জামান শাহীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোহাম্মদ জাকীর হোসেন এবং একেএম জসীমউদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সেলিনা হোসেন।
আমারসংবাদ/কেএস