এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৫:৫০ এএম
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ২৩৩৩ তম হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৃষকের ছেলে মোঃ আরিফুল।
সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭১.২৫ নম্বর। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় সে।
মেডিকেলের ফলাফল ঘোষণার পর আরিফুলের পরিবার ও আগনুকালী গ্রাম জুড়ে আনন্দের জোয়ার বইছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাকে সফলতার পথ দেখিয়েছে বলেন আরিফুল। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল আরিফুলের নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
আরিফুল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামের মোঃ আবুল কাশেম ও রেনু বেগমের ছেলে। কাশেম-রেনু দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে আরিফুল সবার ছোট।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আরিফুলের পিতা একজন কৃষক। বাড়িতে রয়েছে একটি টিনের ঘর। সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। খুব কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন দুইটা মেয়ের, আরিফুলের বড় ভাই আবু রায়হান পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
আরিফুল ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে আগনুকালী পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩, খাষসাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও ট্যানেলপুলে বৃত্তি পান।
এসএসসিতে জিপিএ ৫ ও রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো আরিফুল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন।
আরিফুল আমার সংবাদকে জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন আমি তাতেই খুশি থাকতাম।
স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করা অবস্থায় বিভিন্ন দিক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় সকল স্যার। আর এজন্য সকল স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত মামুন বিশ্বাস আমার সংবাদকে জানান, আরিফুল আমার গ্রামের ছেলে, ছোট বেলা থেকেই দেখেছি খুব ভাল ও ভদ্র ছেলে সে। আরিফুলের বাবা অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। আরিফুল পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।
আগনুকালী পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (অবসর প্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মাহবুবুল হোসেন জোস্না আমার সংবাদকে বলেন, আরিফুল অত্যন্ত মেধাবী ছেলে সে সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। সে আমাদের বিদ্যালয়সহ ইউনিয়নবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।
পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন যেন কাজ করতে পারে আরিফুল ও তার পরিবার দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আমারসংবাদ/এআই