হাবিবুল্লাহ বেলালি
মে ২, ২০২১, ০৬:৫০ এএম
করোনা কালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর তুলনায় পিছিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। গত বছর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।
সরকারের নির্দেশনা অনুসারে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম(ক্লাস) চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কোন নির্দেশনা না থাকায় কোন অগ্রগতি নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে।
ফলে অনিশ্চয়তায় ঝুঁকছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সেই সাথে দীর্ঘ সেশন জটের সম্ভাবনাও রয়েছে।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনলাইনে ক্লাসগুলো সম্পন্ন হলেও পরীক্ষা না হওয়ায় থমকে গেছে লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।
অপরদিকে দিকে করোনা কালীনও থেমে নেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কার্যক্রম। নিয়মিত চলছে ক্লাস পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম। অনলাইনেই হচ্ছে পরীক্ষাসহ প্রেজেন্টেশন ফলে থেমে নেই শিক্ষার্থীদের গ্রেজুয়েশন। শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ তৌফিক ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার কার্যক্রমসমূহ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউজিসি থেকে দেয়া নির্দেশনা অনুসারে পরীক্ষাগুলো নেয়া হয়েছে। আমাদের একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবে কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, ভাইবা, ল্যাব, মিড, ফাইনাল সবকিছু অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়েছিল।
প্রতিটি পরীক্ষায় ভিডিও ক্যামেরা অন করার পাশাপাশি ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ঘুরাতে বলতেন। আমরা সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে পরীক্ষা গুলো সম্পন্ন করেছি। করোনা কালীন ক্লাস পরীক্ষা চলমান থাকায় শিক্ষার্থীদের সেশন জটে পড়তে হচ্ছে না।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি থাকলেও পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। যদিও সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে মোবাইল ফোন ক্রয় করতে সফট্ লোন প্রদান করেছেন। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অনলাইন ক্লাসেও তৎপরতা নেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষায় এখনো ভালোভাবে অভ্যস্ত নয়, এমনকি শিক্ষকদের মাঝেও রয়েছে অনেক অনাগ্রহ, অসহযোগিতা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভংগী, যা অনলাইন শিক্ষা ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী।
তবে অনেকেই মনে করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সকল কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করার সদিচ্ছা নেই বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। যার ফলে নামে মাত্র অনলাইন ক্লাস চালু রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের একবছর পেরিয়ে গেলেও অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিপূর্ণ নির্দেশনা কাঠামো তৈরি করতে পারেনি ইউজিসি। শুধুমাত্র অনলাইনে ক্লাসে হয় না পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে সেটা হয়তো উপলব্ধি করতে পারেন না বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইউজিসি।
বান্দরবান জেলার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রবীন ত্রিপুরা বলেন দীর্ঘদিন যাবৎ পরীক্ষা না হওয়ায় দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের অঞ্চলগুলোতে ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত সমস্যা মোটামুটি সবারই রয়েছে। তারপরও যদি নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ দিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সমস্যা মোকাবেলা সম্ভব। দীর্ঘ সেশনজটের থেকে একটু কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে পারলে সকলের জন্যই তা মঙ্গল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনারুল ইসলাম বলেন, মহামারী করোনার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে আছে দীর্ঘদিন যাবত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ উদ্যোগে অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত সেমিস্টারগুলো এগিয়ে নিলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে থেমে রয়েছে।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করে।ফলে অনলাইনভিত্তিক ক্লাস-পরীক্ষায় তারা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে পারে না।
তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে নির্দিষ্ট সিলেবাস এবং পরীক্ষার তারিখ দিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারে।পরীক্ষা পূর্বঘোষিত হলে যারা নেটওয়ার্ক সমস্যায় থাকে তারাও সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে।এতে করে যেমন সেশনজটও কমবে,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মানসিক মুক্তিও পাবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব আইন রয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী অনলাইন পরীক্ষা নেয়া সুযোগ নেই।
করোনার কারনে নিয়ম শিথিল করা হলেও শিক্ষার্থীদের নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও ডিভাইস সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। পরীক্ষা নিতে হলে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ইন্টারনেট কিংবা ডিভাইস সংক্রান্ত অসুবিধার কারনে কেউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে আসবে।এই সকল বিভিন্ন কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।
আমারসংবাদ/এআই