Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে বাড়ছে ইন্টারনেট আসক্তি

জুন ৯, ২০২১, ০৮:৫৫ এএম


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে বাড়ছে ইন্টারনেট আসক্তি

ফ্রি-ফায়ার গেম খেলবে, তাই মায়ের কাছ থেকে এমবি কেনার ৫০ টাকা চায় কিশোর মামুন (১৪)। মা পরে টাকা দেওয়ার কথা জানালে মামুন পিড়াপিড়ি করে। শেষে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মামুনের মা ঘরে ঢুকে দেখে আদরের সন্তান অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

গত ২১ মে চাদঁপুর জেলার মতলব থানার দক্ষিণে উপাদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শুধু মামুন নয়, অহরহ ঘটে চলেছে এমন ঘটনা। শুধু মামুনের মতো শিশু কিংবা কিশোর নয়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ইন্টারনেট আসক্তিতে ভুগছে। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ তেমন সুবিধাজনক নয় বলে পাড়া বা মহল্লার যেখানেই ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে সেখানেই দল বেঁধে বসে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ জটলা দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন বিশেষ কোন আলাপ আলোচনা বা শিক্ষামূলক কোন ইভেন্ট। কিন্ত তা নয় মোবাইলে পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো গেমে আসক্ত তারা।

করোনা সংক্রমণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠ্যবই থেকে দূরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তারা হাতে তুলে নিয়েছে ইন্টারনেট যুক্ত মোবাইল ফোন, কম্পিউটার। যে সময়ে শিশু-কিশোর ছেলেমেয়েদের অধিংকাশ সময় কাটে ক্লাসের রুটিন মাফিক পড়াশোনা, হোম টিউটরে কাছে পড়ে সেই সময়টা দখলে নিয়েছে ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন।

ইন্টারনেটের এমন আসক্তির ফলে ঘটছে নানান মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। বিশ্লেষকরা ভাবছেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একনাগাড়ে বাসায় থেকে শিক্ষার্থীরা সময় কাটাতে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন বেছে নিচ্ছে। আর এমন ইন্টারনেট আসক্তি শিশু-কিশোরসহ সবার জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির তথ্যমতে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে প্রায় ৯ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ ইন্টারনেটের গ্রাহক, আর তাদের মধ্যে আট কোটি ৭৯ লাখ ব্যবহারকারী মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়।

২০১৬ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরী। এরাই কিন্তু গেমিংয়ে আসক্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। করোনাকালে বিগত বছরের চেয়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে ক্ষতিকর গেইম খেলার অ্যাপসের পরিমাণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অনলাইন গেম, মুঠোফোন, কম্পিউটার বা ভিডিও গেমের ক্ষতিকর ব্যবহারকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর আগে ২০১৩ সালে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত মানসিক রোগ নির্ণয়-বিষয়ক গাইডলাইনে (ডিএসএম-৫) বিষয়টিকে ‘ইন্টারনেট গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করে গবেষণার ভিত্তিতে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করার সুপারিশ করা হয়েছিল।

অভিভাবকরা বলছেন, করোনার শুরুতে স্কুল কলেজ বন্ধ হওয়ার পর অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। তখন বাচ্চাদের হাতে তুলে দিতে হয় মোবাইল। কিন্তু বুঝতে পারিনি, মোবাইল একবার হাতে উঠলে তা দুঃশ্চিন্তার কারন হয়ে দাড়াবে। বাচ্চারা এখন হাত থেকে মোবাইল নামাতেই চায় না। মোবাইল নিয়ে গেলে উদ্ভট আচরণ করে। ঘরের জিনিস ভাংচুরসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন যেহেতু স্কুল কলেজ বন্ধ সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময় ঘরবন্দী থাকছে। আগে দিনের একটা বড় অংশ কেটে যেতে পড়াশোনা করে আর এখন স্কুলে কলেজের শিক্ষার্থীরা সময় কাটায় স্মার্টফোনে বিভিন্ন গেম খেলে, যা তাদের মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি ইত্যাদি করে সময় কাটাতেই অভ্যস্ত। কিন্তু এখন তারা সে সুযোগটা পাচ্ছে না। তাই মোবাইলের প্রতি আসক্তি হচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে বিষণ্নতা, একাকিত্ব, সিজোফ্রেনিয়া এবং মানসিক ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের মতে, মোবাইল, ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে গেছে। এখন চাইলেও আমরা মোবাইল ব্যবহার না করে থাকতে পারি না। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বেশি ব্যবহার করাই ক্ষতির কারণ।

তাই বাবা-মায়েরও প্রয়োজনের বেশি মোবাইল ব্যবহার না করা এবং সন্তানকেও এর ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতি সচেতন করা উচিত বলেও মনে করেন এস এম আবুল কালাম।