Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

ঠিকাদারির হাতে জিম্মি নোবিপ্রবির সর্ববৃহৎ একাডেমিক ভবন

মাইনুদ্দিন পাঠান, নোবিপ্রবি

জুন ১২, ২০২১, ১১:২৫ এএম


ঠিকাদারির হাতে জিম্মি নোবিপ্রবির সর্ববৃহৎ একাডেমিক ভবন

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সর্ববৃহৎ একাডেমিক ভবন-৩ এর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ২০ শতাংশ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে টেন্ডার আহ্বান করে জি কে স্বপনের একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পটির কাজ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেটি জিকে সামিমের সুপারিশে টেন্ডার নেওয়া হয়। এতে ৩০ মাস সময় বেঁধে দিলেও ৩৭ মাস সময় পার করে এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

এমনকি দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করলেও এখন পর্যন্ত ভবনের দুই তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করে তৃতীয় তলার আংশিক কাজ শুরু হয়েছে। তবে এমন বিলম্বিত হওয়ার জন্য শ্রমিকদের অনুপস্থিতির ওপর দায় চাপাচ্ছেন প্রকল্পটির তদারক আবু মুসা ফাতহুলবারী টুটুল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য যেসকল সামগ্রী ক্রয় করতে হয় তার জন্য ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি নিতে হয়।। পরবর্তীতে উক্ত পারফর্মেন্স গ্যারান্টি দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তর থেকে বিল নিতে হয়। 

কিন্তু বর্তমান প্রকল্পটির পারফর্মেন্স গ্যারান্টির মেয়াদ কয়েকমাস আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নতুনভাবে ব্যাংক থেকে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি নেয়নি প্রকল্পটির প্রতিষ্ঠান। যতদিন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি না নিবে ততদিন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য বিল নিতে পারবেনা প্রতিষ্ঠান টি। 

আরও জানা যায়, নতুনভাবে বিল না নিতে পারায় ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠান। যার ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ এমনভাবে কাজ অগ্রসর হচ্ছে যেটিকে বন্ধ বললেই চলে। এমনকি কয়েক লক্ষ টাকার সিমেন্ট ও রড অযত্নে পড়ে আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এগুলো কাজে লাগাতে না পারলে জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দুই তলার কাজ আংশিক সম্পন্ন হলেও সেটি অপূর্ণাঙ্গ এবং তিন তলার কাজ কিছুটা করা হলেও হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে খুড়িয়ে চলছে প্রকল্পটি। আবার অধিকাংশ শ্রমিকের অভাবে বন্ধ থাকতে দেখা যায় নির্মাণ কাজ। 

জানা যায়, মূল প্রকল্পের ঠিকাদারি জিকেবিএল (জে.ভি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিলেও প্রকল্পের ইনচার্জ মইনুদ্দিন চৌধুরীর সাথে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি প্রতিষ্ঠানটির মালিক জিকে স্বপন।

বিলম্বিত হওয়া প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গেলে আবু মুসা ফাতহুলবারী টুটুল জানান, করোনার পূর্ব পর্যন্ত কাজ ঠিকমত চললেও করোনার পরবর্তীতে কাজ খুবই ধীরে চলছে। কাজের ধীরগতির জন্য তিনি শ্রমিকদের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন। 

শ্রমিকরা কেন অনুপস্থিত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর তারা বাড়িতে চলে গেছে এখনো তারা ফিরে আসেনি তারা আসলেই কাজগুলো খুব দ্রুতভাবে অগ্রসর হবে।

এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ম্যানেজার মোহাম্মদ আরিফ জানান, নোবিপ্রবির প্রকল্পটির জন্য খুব শিগগিরই হেড অফিসে মিটিং করবেন। এছাড়া খুব শিগগিরই নতুনভাবে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিন হায়দার জানান, আমরা কাজ শুরু করার জন্য প্রকল্পের সাথে বারবার যোগাযোগ করেছি। তারা আমদের প্রতিবার আশ্বাস দিয়েও কাজ শুরু করেনি। গত কয়েকদিন আগে ফার্মের কাছে অফিসিয়াল নোটিশ দিয়েছি সেই নোটিশের ফলাফল এখনো আমাদের নিকট পৌছায়নি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের কাছে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বিভিন্ন মেয়াদে সময় বেঁধে দিয়েও এখন কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি পাইনি। 

আমরা প্রস্তাব করেছি তারা যদি কাজ করতে না পারে তাদের পরিচিত অন্য প্রকল্পের কাছে হস্তান্তর করে দিতে এবং বর্তমানে যে ৩ তলা নির্মাণ করা হয়েছে এটি ক্লাসরুমের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য। দুটি প্রস্তাবের কোনো প্রস্তাবে তারা সাড়া দেয়নি। এছাড়া কাজটি দ্রুত শুরু করতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন বলে জানান উপাচার্য প্রফেসর দিদার-উল-আলম।

আমারসংবাদ/এআই