Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনাক্রান্ত শিক্ষার্থী, স্কুল বন্ধের বিষয়ে যা বললেন মন্ত্রী

শিক্ষা ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, ১০:৩০ এএম


করোনাক্রান্ত শিক্ষার্থী, স্কুল বন্ধের বিষয়ে যা বললেন মন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, স্কুল শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হবার ঘটনায় স্কুলগুলো মনিটর করা হচ্ছে। এ ঘটনায় স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

মানিকগঞ্জে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বিষয় আমরা খোঁজ নিয়েছি। তার সহপাঠীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সবারই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বিষয়টি আমাদের সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছে।

তিনি বলেন, করোনা এমন একটি ভাইরাস যে কেউ, যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে আক্রান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অভিভাবক, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহ্বান, সবাই যেন নিয়ম মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেন এবং ক্লাস নেন।

স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর মাঝে যদি বিন্দুমাত্র করোনার উপসর্গ দেখা দেয় অভিভাবকরা যেন সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিষয়টি অবগত করেন। শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। 

করোনা উপসর্গে মানিকগঞ্জে মৃত্যু হওয়া শিক্ষার্থীর নাম সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা। জেলার বেউথা এলাকার বশির উদ্দিন মোল্লার মেয়ে এবং এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে সুর্বণার জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও খেয়েছে। কিন্তু গত শনিবারে শ্বাসকষ্ট, গলা ও বুকে ব্যথা উঠে অচেতন হয়ে পড়ে সে। পরে তাকে দ্রুত মুন্নু জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে গাবতলী এলাকায় সে অ্যাম্বুলেন্সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ সময় ইবনে সিনা হাসপাতালে তাৎক্ষণিক নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, মেয়েটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। তখন তার শরীরে কোনো সমস্যা ছিল না। গত তিনদিন ধরে তার জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। গত শনিবার দুপুরে তাকে মুন্নু হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সে করোনায় আক্রান্ত ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা পজিটিভ হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার ৫৮ সহপাঠীকে করোনা পরীক্ষা করোনো হয়েছিল। তবে কারও দেহে করোনা শনাক্ত না হওয়ায় এবং আক্রান্ত শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ওই শ্রেণির পাঠদান পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায় ৪নং ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী কারোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গোপলগঞ্জের বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। সে ঘরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার ওই ছাত্রীদের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পরে তাদের হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। 

ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) কলেজ ছাত্রীবাসে থাকতে ইচ্ছুক এমন ৫০ জন শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। বুধবার এরমধ্যে ৩ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে।

শহীদুল ইসলাম বলেন, রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই ওই তিন ছাত্রীর অভিভাবকদের বিষয়টি জানিয়ে তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই তিন শিক্ষার্থী এখনও সুস্থ্য আছে। আমরা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি।

তিন শিক্ষার্থীর পজিটিভ রিপোর্ট আসলেও অন্যদের এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে কলেজে প্রবেশ করানো হয়। কারো তাপমাত্রা একটু বেশি হলেই আমরা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ক্লাসও পরিচালনা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

বাগেরহাটের মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক ও তার স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি জানার পর থেকে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার স্কুলটি পরিদর্শন করে মোংলার ইউএনও কমলেশ মজুমদার জানান, এক শিক্ষকের আক্রান্তের খবর জানার পরে ওই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে করোনা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওই শিক্ষক স্কুলে আসায় সংক্রমণ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এজন্য স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী ও আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর সবার করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইউএনও কমলেশ মজুমদার জানান, কারও উপসর্গ দেখা দিলে তাকেও স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষকে স্কুল চলাকালে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই