Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

২০২১ সালের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় 

ডিসেম্বর ৩১, ২০২১, ০৫:৫০ এএম


২০২১ সালের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় 

করোনার কারণে ২০২১ সালের অধিকাংশ সময়ে সশরীরে শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও নতুন উপাচার্য নিয়োগ, 'পরীক্ষা চাই' আন্দোলন, বন্ধ হলে চুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাড়ি ফেরা, হল খুলে দেয়া এবং সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা চালুসহ নানাবিধ  আলোচিত ঘটনাময় সময় পার করেছে হাবিপ্রবি। 

১৩৯ শিক্ষার্থীর এনএসটি ফেলোশিপ প্রাপ্তি: 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ পেয়েছে হাবিপ্রবির ১৩৯ জন শিক্ষার্থী। ভৌতবিজ্ঞান, খাদ্য ও কৃষি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান এই তিন ক্যাটাগরিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ৩ হাজার ২৪৯ জন ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হয়েছেন। 

পরীক্ষা চাই: 
বছরজুড়ে আলোচিত আন্দোলন ছিলো 'পরীক্ষা চাই'। বছরের শুরুতে অনলাইন পরীক্ষার দাবি এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সশরীরে পরীক্ষার দাবিতে থেমে থেমে বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলো শিক্ষার্থীরা। পুরো দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে  সশরীরে এবং অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে হওয়া আন্দোলনের জন্য ভালো ভূমিকা পালন করায় ছাত্রসমাজের কাছে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন হাবিপ্রবির এসব শিক্ষার্থীরা। 

বন্ধ হলে চুরি: 
মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে চুরির ঘটনা ঘটে। বন্ধ হলে এমন চুরির ঘটনায় বিস্মিত হয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও গত ২৬ জুন নির্মাণাধীন দশ তলা ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের স্টোর রুম থেকে ২৪৬ কয়েল ইলেকট্রিক তার চুরি হয়েছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে চুরি করতে এসেও ধরা পড়েছিলো এক চোর। পরে তাকে পুলিশে সোপার্দ  করা হয়। 

পরীক্ষা দিতে এসে আটকা পড়লো শিক্ষার্থীরা: 
 ২০২১ সালের জুন মাসে পরীক্ষার ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী। দিনাজপুর সদর উপজেলা লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় ২১ জুন পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত সকল পরীক্ষা স্থগিত করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসেই আটকা পড়েছিলো। এদিকে সারাদেশের বেশিরভাগ জেলা লকডাউনের আওতায় থাকায় বাড়ি ফেরা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছিলো শিক্ষার্থীদের মাঝে।  এ ছাড়াও সেসময়  দিনাজপুর শহর থেকে বিভিন্ন জেলায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। 

ঈদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাড়ি ফেরা: 
লকডাউনে পরীক্ষা দিতে এসে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে ধাপে ধাপে  জেলা এবং বিভাগ পর্যায়ে বাস সুবিধার মাধ্যমে বাড়িতে যেতে সহায়তা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিন্নরকম ঈদ উদযাপন: 
নিজ পরিবার এবং মাতৃভূমি থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশে পড়তে এসে এবছর কিছুটা ভিন্নরকম ঈদ উযযাপন করেছে হাবিপ্রবির বিদেশি শিক্ষার্থীরা । বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো খুলে দেওয়া হবে এই আশায় এবং ঝামেলা এড়াতে নিজ দেশে ফেরেননি হাজী দানেশের এসব শিক্ষার্থী। তাই পরিবার, আত্নীয়-স্বজন ছাড়াই ক্যাম্পাসের বাঙালি বন্ধুদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন তারা। উল্লেখ্য, গত এক দশকে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী  গ্রাজুয়েট তৈরী করেছে হাবিপ্রবি।

হাবিপ্রবির নতুন উপাচার্য নিয়োগ: 
দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ৩০ জুন  নতুন উপাচার্য পেয়েছে হাবিপ্রবি।  সপ্তম উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যোগদান করেছিলেন অধ্যাপক এম কামরুজ্জামান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কাসেমের স্থলাভিষিক্ত হন । অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান ১ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ২০০৯ সালে জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। অধ্যাপক এম কামরুজ্জামান পেশা জীবনের শুরুতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ফাইন্যান্স বিভাগে লেকচারার হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর একই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। সর্বশেষ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।  

অনলাইনে পরীক্ষা শুরু: 
আনুষ্ঠানিকভাবে ৪ আগষ্ট কয়েকটি বিভাগে একযোগে অনলাইন পরীক্ষা শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান। এছাড়াও অনলাইন পরীক্ষার জন্য মোবাইল অপারেটরের সাথে  হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য কম খরচে ইন্টারনেট প্যাকেজের চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

বৃত্তিপ্রাপ্তদের ক্রেডিট ফি মওকুফ: 
বোর্ড বৃত্তিপ্রাপ্ত (উচ্চ-মাধ্যমিক) শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়েছে।  এ বিষয়ে ৩০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক আয়োজিত লাইভ অনুষ্ঠানে ‘সেতুবন্ধন'  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বোর্ড বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা যায়।

চারমাসে সেমিস্টারের মাস্টারপ্ল্যান: 
শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সেশনজট নিরসন ও অ্যাকাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সেমিস্টার ৬ মাস থেকে কমিয়ে ৪ মাসে সম্পন্ন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি প্রতি ৫০ মিনিটের ক্লাসের সময় ২০ মিনিট বাড়িয়ে ৭০ মিনিট করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮ তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষসহ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা।

ফের প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাস: 
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ মাসে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়  প্রশাসন। দীর্ঘ ১৯ মাস পর অবশেষে ২১ অক্টোবর থেকে পুনরায় সশরীরে ক্লাস- পরীক্ষাসহ সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে হাবিপ্রবি। সশরীরে ক্লাস শুরুর আগে গত ১৮ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলি আবাসিক হল খুলে দেয়া হয় এবং ফুল দিয়ে হলে বরণ করে নেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এসময় হবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেবার সার্বিক কার্যক্রম সশরীরে পরিদর্শন করেন।

প্রথমবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ: 
প্রথমবারের মতো গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হাবিপ্রবি। ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের ‘এ’ ইউনিটে, ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগের ‘বি’ ইউনিটে এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট ভিত্তিক নতুন করে আবেদন ফি পরিশোধ, কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল এবং গুচ্ছের পরীক্ষার ফলাফলে ভুল হওয়ার মতো গুরুতর নানান অভিযোগ এসেছে। 

৩০ প্রকল্পে ফেলোশিপ পেলেন ৬০ শিক্ষক: 
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ পেয়েছেন হাবিপ্রবির ৬০ জন শিক্ষক। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়টির ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচি’ খাত হতে এ বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান করা হবে। এ বছর ৬৩৮ টি গবেষণা প্রকল্পের অনুদানের জন্য নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা: 
নিয়মিত  শিক্ষার্থীদেরকে স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা প্রকল্পের আওতায় এনেছে হাবিপ্রবি প্রশাসন। ২৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  প্রত্যেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বিমাসুবিধা পাবেন। এর মধ্যে হাসপাতালে থাকাকালীন কেবিন বা ওয়ার্ডের ভাড়া, হাসপাতাল সেবা, অস্ত্রোপচারজনিত ব্যয়, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি, ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিল বাবদ দৈনিক সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা চিকিৎসা ব্যয় পাবে।

আমারসংবাদ/কেএস