Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের 

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০২:২৫ পিএম


অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের 
  • অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন
  • অধ্যক্ষের জবাবে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষা বোর্ড 
  • আমরা কমিটিকে নোটিস করবো, কমিটি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, না নিলে আমরা কমিটি বাতিল করে দিব এটাই নিয়ম: প্রফেসর আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, কলেজ পরিদর্শক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড

একাধিক অভিযোগের তদন্ত শেষে রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার ‘শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়’-এর অধ্যক্ষ মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিচালনা পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এর আগে অভিযোগ তদন্ত শেষে কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের আলোকে অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়; তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদের আদেশে কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত একটি পত্রে অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়।

[media type="image" fid="157110" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিচালনা পরিষদে পাঠানো শিক্ষা বোর্ডের ওই পত্রের সূত্রে জানা যায়, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত বিধিমালা/পিপিআর-২০০৮ অনুয়ায়ী ১০ লাখ টাকার খাতা ক্রয় না করা, ১৪ জন খ-কালীন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বেসরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ শিক্ষক চাকরির শর্ত সীমাবিধি ১৯৭৯ এর ধারা ৩ (২) মোতাবেক নিয়মাবলি অনুসরণ না করা এবং শহীদ শেখ রাসেল দিবস অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে জয়বাংলা স্লোগান না বলা ও অফিস কক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি না টানানোর অভিযোগ ছাড়াও আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে করা ডা. বিপুল চন্দ্র দাশের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করে বোর্ড। কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের আলোকে গত ২৬ ডিসেম্বর মনোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৬ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের দেয়া জবাব পর্যালোচনা করে বোর্ড জানায়, তার জবাব সন্তোষজনক নয়। যে কারণে তার বিরুদ্ধে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১৮ (খ) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। সরকারের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১৮ (খ) অনুযায়ী- সরকার বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক হিসাব সংরক্ষণ ও আয়-ব্যয় নিরীক্ষা না করলে/সরকারের নির্দেশনা প্রতিফলন না করলে/ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পিপিআর অনুসরণ না করলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন-ভাতা স্থগিত/বাতিল এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ শূন্য ঘোষণাসহ তাদের বিরুদ্ধেও আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রফেসর আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়। 

এ ছাড়াও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ শিক্ষক চাকরির শর্ত সীমাবিধি ১৯৭৯ এর ধারা ১১ অনুযায়ী- যদি কোনো শিক্ষক এ বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন অথবা অদক্ষতা, দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন অথবা স্কুলের স্বার্থের হানিকর কোনো কাজ করেন অথবা পেশাগত অসদাচরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তবে তাকে তিরস্কার, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইনক্রিমেন্ট স্থগিত রাখা, চাকরি হতে অপসারণ, চাকরি হতে বরখাস্ত এক বা একাধিক শাস্তিও দেয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। নির্দিষ্ট কয়েকটি আল্টিমেটামের পরও যদি পরিচালনা পরিষদ তা না করে তাহলে শিক্ষা বোর্ড ওই কমিটিকেই বাতিল করে দেয়ার বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। 

শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যে বিধিমালা রয়েছে, তাদের যে গাইড লাইন রয়েছে, এটা অনুযায়ী তারা (পরিচালনা পরিষদ) অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর আমরা কমিটিকেই নোটিস করবো- এটাই নিয়ম। কমিটি ব্যবস্থা না নিলে আমরা কমিটি বাতিল করে দেব। 

তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কয়েকটা আল্টিমেটামের পরও যখন কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না, তখন কমিটি বাতিল করা হবে এবং এটাই নিয়ম। যে কারণে সকল প্রক্রিয়া শেষে এখন অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করার জন্যও বলা হয়েছে পরিচালনা পরিষদকে।

ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, আমরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নোটিস প্রাপ্তির পর জরুরি সভা ডেকেছি। 

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ওই সভা হওয়ার কথা রয়েছে। পরিচালনা পরিষদের আজকের জরুরি সভাতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।  

[media type="image" fid="157107" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এদিকে অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মাঝে আরও একাধিক অভিযোগের চাউর রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত না হওয়া, শিক্ষার্থীদের লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের ষষ্ট তলায় উঠানো, আয়া, বুয়া, পিয়ন- এসব পদে ৯০ শতাংশই নিজে নিয়োগ দেয়া, আবার এদের দিয়েই বাসায় এবং ব্যক্তিগত অন্যান্য কাজ করানোসহ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, পিয়ন ও কম্পিউটার অপারটেরদের নিয়ে অনিয়মের একটি সিন্ডিকেট করা, স্কুলের ৪২ জোড়া টেবিল রাতের আঁধারে টাঙ্গাইলে বিক্রি করে দেয়া, দারোয়ানকে দিয়েও স্কুল ডিউটির পর নিজ বাসায় কাজ করানো, অপরাগতায় বেতন কেটে রাখা, করোনাকালে শিক্ষকদের জন্য সরকারের দেয়া প্রণোদনার টাকা না দিয়ে উল্টো বেতন কেটে রাখা, স্কুলের টাকায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিবিহীন ক্যালেন্ডার ছাপানো, মানহীন টিফিন ও ১৭ শিক্ষককে ব্যাকডেট নিয়োগপত্র দিয়ে নিয়োগের বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেয়া, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের দুটি গাড়ির রংসহ প্রধানমন্ত্রীর নামই মুছে যাওয়ার মত অবস্থা এবং গত বছর প্রতিষ্ঠানটির নামে করা বাৎসরিক ক্যালেন্ডারও মুজিববর্ষের লগো ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়াই ক্যালেন্ডার ছাপানোর অভিযোগের চাউর রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

[media type="image" fid="157106" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

গত বছর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছরই তাদের ক্যালেন্ডার হয়, গত বছরও হয়েছে। তবে তাকে ওইভাবে জানানো হয়নি, এসব বিষয়ে জানিও না।  

সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেনের দুটি মুঠোফোনের একটিতে ফোন করলে প্রথমবার তিনি রিসিভ করেননি, দ্বিতীয়বার আর সংযোগ পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত অন্য নম্বরেও ফোন করলে নারী কণ্ঠের একজন রিসিভ করে পরিচয় জানতে চান, পরিচয় দিলে তিনি রং নম্বর জানিয়ে ফোনকল কেটে দেন। 

আমারসংবাদ/কেএস