Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা, শাবিপ্রবির সমাধান কোন পথে?

তানভির হাসান, শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২৫, ২০২২, ১২:৪০ পিএম


দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা, শাবিপ্রবির সমাধান কোন পথে?
  • উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের আলোচনায় বসার আহবান জানান।
  • নিরাপত্তাকর্মী হাতে শিক্ষকদের আনা খাবার উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দিলো শিক্ষার্থীরা।
  • আন্দোলনের সাথে সিলেট-২ আসনের সাংসদ ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খাঁনের সংহতি।
  • করোনা ঝুঁকিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা।
  • মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা এখন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে' চলে গেছেন। তাই সরকারের উচিত হবে দ্রুত একটি সমাধানে যাওয়া। অন্যথায়, যেকোনো সময় পারিস্থতি আরও জটিল হতে পারে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। গত রোববার থেকে পুলিশ ও সাংবাদিক বাদে অন্যদের ভিসি বাসভবনে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে অবরুদ্ধ ভিসির সাথে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা চেষ্টা করেও দেখা করতে পারেননি কেউ।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় বিশ্বববিদ্যালয়ের  শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসি কুমার দাশ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহিবুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভিসির বাস ভবনের প্রধান ফটকে আসেন এবং ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। 

কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা প্রদান করেন। এসময় শিক্ষকরা আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য আহবান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকায় শিক্ষকরা ফিরে যান।

এসময় শিক্ষকরা কিছু খাবার নিয়ে এলে শিক্ষার্থীরা বলেন, খাবার বা অন্যান্য জিনিসপত্র নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে দেয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষক কেউ যেতে পারেন না। পরবর্তীতে খাবারের প্যাকেট যাচাই করে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে উপচার্যের জন্য ভেতরে পাঠানো হয়।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সিলেট-২ আসনের সাংসদ ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খাঁন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুরাইয়া বেগমসহ কয়েকজন নেতাকর্মী অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেন। 

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি শিক্ষার্থীদের দেখতে এসেছি। তাদের দুরবস্থা ও দাবিগুলো আমি সংসদে তুলে ধরবো। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে আমি এখানে এসেছি। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে ড. কামাল হোসেনের সাথে মোবাইলে কথা বলার জন্য বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে কামাল হোসেন গণমাধ্যমে মোবাইলে কথা বলেন।

এদিকে, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া আমরণ অনশনের আজকে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৪৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও কোনো সমাধান না আসায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ জন অনশনরতদের মধ্যে ১৯ জনের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ৯ জন ক্যাম্পাসে অনশন করছে।

করোনা ঝুঁকিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা ভিসির পদত্যাগ দাবিতে অনশনস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তারা সবাই খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশার সহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন। তারা অর্গান ড্যামেজের ঝুঁকিতে আছেন।

তিনি আরও বলেন, অনশনকারীদের মেডিকেল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিনিয়র চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, অনশন দীর্ঘায়িত হলে যেকোনো মুহূর্তে হার্ট ফেইলিওর সহ কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন এই শিক্ষার্থীরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসেও মেডিকেল সাপোর্ট পাচ্ছেন না তা নিয়ে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সও আছে বলে আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান।

মেডিক্যাল টিমের সমন্বয়ক ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘অনশনকারীদের অনেকেরই করোনার উপসর্গ আছে, কিন্তু তারা টেস্ট করাতে রাজি হচ্ছেন না। সেভাবে স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না। এতে আমরা ঝুঁকিতে পড়ছি। আমাদের অনেককেই আবার হাসপাতালে ফিরতে হয়। ফলে অন্যরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ
আর্থিক লেনদেন বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীর শারীরিক বা অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে সাবেক শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন সংকটময় মুহূর্তে সাবেক শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছেন এবং তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে আর্থিক ও মানসিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন।

কিন্তু ২৪ জানুয়ারি দুপুর থেকে যে-সব মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে অর্থ পাঠানো হচ্ছিল, সেই নম্বরগুলো আর কাজ করছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় ২ সাবেক শিক্ষার্থী রেজা নূর মুঈন ও হাবিবুর রহমানকে আটকের অভিযোগ ওঠেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিরুদ্ধে।

একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার সবকটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর সোমবার দুপুরের পর থেকে কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন তারা। গত রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আয়োজিত জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানানো হয়। সেসময় তারা আন্দোলন বিষয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন এবং অনশনকারীদের জীবনঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ, ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে শুরু হওয়া প্রভোস্টবিরোধী আন্দোলনে ১৬ জানুয়ারি পুলিশের হামলা চালিয়ে ৩০ শিক্ষার্থীকে আহত করলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।