Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজধানীতে ভূমিকম্পসহ বড় দুর্যোগের শঙ্কা বাড়ছে

জাবি প্রতিনিধি

জাবি প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম


রাজধানীতে ভূমিকম্পসহ বড় দুর্যোগের শঙ্কা বাড়ছে
রাজধানী ঢাকা। ছবি: সংগ্রহীত

বাংলাদেশের নগরায়ন ও নগর পরিকল্পনায় মাটির প্রকৃতি, ভূমিতলের উচ্চতা, ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতিকে যথাযথগুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকার নগরায়ন প্রক্রিয়ায় জলাশয়-জলাভূমিকে ভরাট করে আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য নগর দুর্যোগের শঙ্কা বাড়ছে বহুলাংশে।

বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে ভূমির যথাযথ ব্যবহার এর মাধ্যমে টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত করবার পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা শহরের ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক বিন্যাস এর নগর পরিকল্পনাগত প্রভাব’ শীর্ষক পরিকল্পনা সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা উপরোক্ত মতামত দেন।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহফুজুল হক বলেন, গত দুই দশকে ঢাকার নগরায়ন প্রক্রিয়ায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের যেসব এলাকায় নগরায়ন হয়েছে সেসব এলাকার মাটির বৈশিষ্ট্য ও ভূতাত্ত্বিক গঠন নগরায়নের উপযোগী নয়। ফলে ভূমিকম্প হলে বছিলার মত এলাকায়  দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেশি থেকে যায়।

তিনি আরো বলেন, ঢাকার ভূমিতলের উচ্চতা ৫ থেকে ১৮ মিটার এর মধ্যে এবং এই অঞ্চলের অনেক স্থানে ভবন নির্মাণ ও নগরায়নের জন্য উপযোগী লালমাটি বিদ্যমান আছে। আবার অনেক এলাকায় প্রাকৃতিকভাবেই নিচুভূমি, জলাশয় ও ভূ অভ্যন্তরে পানি ধারণ অঞ্চল বা একুইফার আছে। যথাযথভাবে ‘ভূমি উপযোগিতা বিশ্লেষণ’ না করে বর্তমানে নগরায়ন হওয়াতে সামনের দিনে নগর দুর্যোগের শঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য যথাযথ বিবেচনায় না নেয়াতে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প ও উদ্যোগ চলমান আছে, সেগুলোর মাধ্যমে কার্যকর উপযোগিতার পাবার সম্ভাবনা ও কম।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভবন নির্মাণে যেমন বিল্ডিং কোড ও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট আইন মানা হচ্ছেনা, তেমনি প্রভাবশালীদের চাপে নগরায়ন হচ্ছে স্বেচ্ছাচারীভাবে। এতে  সাময়িকভাবে কেউ কেউ লাভবান হতে পারলেও প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে সম্মিলিতভাবে কেউ রেহাই পাবে না।

আজ মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঢাকা শহরের ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক বিন্যাসে নগর পরিকল্পনাগত প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ছবি : আমার সংবাদ

উদাহরণস্বরূপ তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাওর এলাকার বন্যায় সিলেটের কেন্দ্রীয় নগর এলাকাও বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল।

অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) এর মাধ্যমে ঢাকা শহরের মাটির প্রকৃতি ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে  বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন করবার রূপরেখা দেয়া হয়েছে। সামনের দিনের পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই নগরের সম্প্রসারণ ও টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম বলেন, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন নগর দুর্যোগের প্রস্তুতির জন্য সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবার পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের ইমারত নির্মাণ যেন যাবতীয় নির্মাণ মানদণ্ড মেনে করা হয়। এ জন্য জাতীয় বিল্ডিং কোডের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

পরিকল্পনা সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনিসা নূরীকাকন, ড. মেহেদী হাসান, অধ্যাপক কাশফিয়া নাহরিন, ড. ফরহাদুর রেজা, এস এম নওশাদ হোসেন প্রমুখ।

এআরএস

Link copied!