Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

গ্রীসে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা

এম.মুজিবুর রহমান, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০, ০৭:৩৯ এএম


গ্রীসে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা

ইউরোপের দেশ গ্রীসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন নবীগঞ্জের দুই র‌্যামিটেন্স যোদ্ধা। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকায় এ ঘটনাটি ঘঠেছে। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে গ্রীস পুলিশ।

নিহত দু'জনই নবীগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের বাসিন্দা। এই হত্যাকান্ডের খবরে নিহতের বাড়িতে চলছে স্বজনদের মধ্যে শোকের মাতম। ছেলের শোকে নিহতের পিতা মাতা অচেতন হয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলের লাশ বাড়ি ফিরবে।

সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার কামড়াখাই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল মমিন (৪০) ও একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া (২৫) পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরে গ্রীসে বসবাস করছিলেন। সেখানের আসপোগিরগো এলাকায় একটি কন্টেইনার কোম্পানিতে পাহাড়াদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আব্দুল মমিন। আব্দুল মমিন প্রায় ১৪ বছর ধরে প্রবাসে বসবাস করছেন। ইরান, তরস্ক হয়ে প্রায় ২ বছর পূর্বে গ্রীসে যান শাহীন। মমিনের সেখানে কাজে যোগ দেন শাহীনও।

মঙ্গলবার রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা একজনের মাথায় এবং অন্যজনের গলায় গুলি করে হত্যা করে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা দুই মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।

সেখানে বসবাসরত প্রবাসীরা জানান, দু'টি কন্টেইনারে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় মমিন ও শাহীন বাঁধা দিলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এনিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে এবং মরদেহগুলো বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানা গেছে৷
এদিকে নিহত দুইজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তারা বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য টাকা জমা করেছিল। তাদেরকে খুন করে তাদের টাকা পয়সা লুট করেছে ডাকাতদল।

নিহত আব্দুল মমিনের ২ ছেলে ১ মেয়ে। বাবা হত্যার বিচার দাবী করে তারা দেশে লাশ আনার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নিহত আব্দুল মমিনের মা গোলেছা বিবি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে আমি এর বিচার চাই, সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী 'আমি আমার ছেলেরে শেষ দেখা দেখতাম চাই' ।

নিহত আব্দুল মমিনের চাচাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রফিক জানান, দীর্ঘ ১৪বছর ধরে মমিন প্রবাসে বসবাস করে আসছে, সে প্রথমে ১ বছর ইরান, তুরষ্ক ২বছর ও গত ১০ বছর ধরে গ্রীসে বসবাস করে আসছে, হঠাৎ করে এমর ঘটনায় আমরা শোকে কাতর, এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানাই একই সাথে নিহতদের দেশে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতা কামনা করছি।

নিহত আব্দুল মমিনের ভাতিজা মিজানুর রহমান জানান, 'আমার চাচা দেশে থাকতে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন, অনেক ভদ্র ছিলেন, প্রবাসে গিয়ে এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হবেন আমরা চিন্তাও করতে পারি নাই৷ এঘটনায় আমাদের পুরো এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে, আমরা এঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানাই।

অপরদিকে নিহত শাহীন মিয়া পিতা নুর হোসেন জানান, 'অবিবাহিত শাহিন পরিবারের কথা চিন্তা করে বিগত ৭বছর পূর্বে প্রবাসে যায়, সেখানে ইরান ৪বছর, তুরষ্ক ১ বছর ও ২ বছর ধরে গ্রীস বসবাস করে আসছে, এ দুর্ঘটনার আগের আমাদের সাথে কথা হয়েছে শাহীনের এমন ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ- আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, এবং আমার ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে চাই। লাশ দেশে ফেরাতে সরকারের সহযোগীতাও চান নিহত শাহীনের পরিবার।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন জানান- খবরটি শুনে তিনিও শোকাহত। লাশ দেশে ফেরাতে সরকারীভাবে যা কিছু করতে হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন৷

এই দুই রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যুতে উপজেলা সহ প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের সর্বত্র যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷

আমারসংবাদ/এমআর