Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

দুঃস্বপ্নের চোরাবালিতে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৩১, ২০২১, ১২:৫০ পিএম


দুঃস্বপ্নের চোরাবালিতে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে পাড়ি জমানো মানুষগুলো এখন দুঃস্বপ্নের চোরাবালি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন। মালয়েশিয়ায় চলমান কঠোর লকডাউনে ঘরে বসে থাকা অনেকে বেকার সময় পার করছেন। চলমান সময়ে বহুমাত্রিক সংকটে তাদের সবারই এখন আয়ের পথ বন্ধ। অর্থ সংকটে আর মহামারি আতঙ্কে চারিদিক  ঘিরেই যেন অন্ধকার নেমে আসছে। এদিকে দেশে থাকা অনেক প্রবাসী শ্রমিকের পরিবারেও নেমে এসেছে দুর্দশা।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর  শহরে থাকেন মালেক মিয়া। প্রায় চার বছর ধরে দেশটিতে থাকলেও পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে বৈধ ভিসা থাকলেও কাজ হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন।  তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরা লাগবো। দেশে টেহা (টাকা) পাঠাইতে পারিনা, ফোনে কথা কইতেও লজ্জা করে।

কুমিল্লার সাগর, জহুর বারু রাজ্যের তামান ডায়াতে থাকেন ক্ষোভ প্রকাশ করে সে বলেন, ভাই কি কইতাম লক ডাউন এর জইন্যে বাজার ঘাট সব বন্ধ। রান্না বান্না করতাম! কেমনে করতাম? দোকন পাটে যাইতে গেলে এক করোনার ভয় অন্য দিকে পুলিশের ভয়। আল্লাহ কবে যে মুক্তি দিব।

কুয়ালালামপুর ও মালাক্কা এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী টাঙ্গাইলের এহসানুল হক বাবু বলেন, এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে না। আয় নেই যা পুঁজি ছিল সব শেষের দিকে। ইচ্ছে করে ব্যবসা বন্ধ করে দেশে ফিরে যাই। 

ওয়াসীস ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশী ছাত্র নেতা মোবারক আকন্দ বলেন, আমরা যারা অনলাইন নির্ভর চাকরি করি তারা বেশ ভালই আছি।  কিন্তু যারা অন্যান্য সেক্টরে কাজ করে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। বাংলাদেশ সরকার ও মালয়েশিয়া সরকারের যৌথ ভূমিকা কামনা করছি।

 

অন্যদিকে, কঠোর লকডাউনেও চলমান রয়েছে ধরপাকড় অভিযান।  দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদিন স্থানীয় গণমাধ্যমে বলছে, চলমান লকডাউনের মধ্যেও অবৈধ বিদেশি অভিবাসীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। জাতীয় নিবন্ধকরণ বিভাগ (এনআরডি) ও পুলিশদের সঙ্গে যৌথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ। 

একে তো কাজ নেই, তার ওপর ধরপাকড় অব্যাহত থাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে।

বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস্ ক্লাব অব মালয়েশিয়া এর সভাপতি সাইদুর রহমান সুমন বলেন, আমরা আমাদের ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করছি এবং খাদ্য সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সদা তৎপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, তারা একসঙ্গে ০৮ জন একটি বাসায় থাকেন। কারও বৈধ ভিসা নেই। পূর্বের কোম্পানির কাজ ভাল না লাগায় অবৈধ হওয়ার পথ বেছে নেন। করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই তারা কাজ হারিয়েছেন। ধরপাকড় অব্যাহত থাকলে আরও বেকায়দায় পড়তে হবে।

বর্তমানে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা দিতে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করে দেশটির সরকার। রিক্যালিব্রেসি প্রক্রিয়ায় প্রথমে শুধু নির্মাণ, উৎপাদন, চাষ ও কৃষি খাতে নির্ধারিত সময়ে সোর্সকান্ট্রি  বাংলাদেশ সহ ১৫টি দেশের অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধতার জন্য অনলাইনে আবেদন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রকৃয়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ কমিউনিটি অব জহুর মালয়েশিয়া এর সিনিয়র সহ-সভাপতি সভাপতি- মোহাম্মদ ফাহিম প্রধান বলেন, আমরা লকডাউনের শুরু থেকেই মানুষ কে সাহায্য করে আসছি। ১ম, ২য় ধাপে আমরা বন্ধুরা মিলে এবং ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে ও দলীয় ভাবে মালাই (মালয়েশিয়ান নাগরিক) ও বাংলাদেশীদের সাহায্য করে আসছিলাম কিন্তু করোনা যে ২ বছরেও শেষ হবে না কে জানতো, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মানুষ কে সাহায্য করেছি। বর্তমানে আমরাও বিপাকে আমাদের ব্যবসা বন্ধ।  স্টাফ'দের বেতন দিতে হচ্ছে, তাদের আবাসন সহ সকল খরচ বহন করতে হচ্ছে। তৃতীয় ধাপের এ লকডাউনে তেমন সাহায্য করতে না পারলেও শুরু থেকে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। 

তিনি আরও বলেন, লকডাউনে যাদের কাজ নেই তাদের কোম্পানি গুলো খাবার খরচ বহন করছে। কোন কোন কোম্পানি বেসিক বেতনও দিচ্ছে। আবার অনেকেই কোন টাকাও পাচ্ছে না। 

মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন লকডাউনে বন্ধ থাকলেও অনলাইনে তাদের সেবা কর্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কুরিয়ার সির্ভিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন সংগ্রহ ও পাসপোর্ট বিতরন করা হচ্ছে।এতে সন্তুষ্ট মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

আমারসংবাদ/ইএফ