Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সিনেমাতে বন্ধুত্বের কিছু ‍ইতিহাস

আগস্ট ২, ২০১৫, ০৭:৫৯ এএম


সিনেমাতে বন্ধুত্বের কিছু ‍ইতিহাস

   বন্ধুত্ব নিয়ে নির্মিত বলিউড সিনেমার সংখ্যা কম নয়। কখনও দুই বন্ধুর সংঘাত, কখনও সব বাধা জয় করে বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করে তোলা, বন্ধুর জন্য প্রেমের বলী দেওয়া আবার বন্ধুকেই ভালবেসে ফেলার গল্প দেখা গেছে পর্দায়।

কিশোর দুই বন্ধু। একজনকে চলতে হয় ক্রাচে ভর দিয়ে, অন্যজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী । দুজনেই তারা নিরাশ্রয় এবং দুঃখী। গান গেয়ে ভিক্ষা করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোর অর্থ উপার্জন করে এবং অন্য বন্ধুর লেখাপড়ার খরচ জোগায়। একে অপরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। দুই বন্ধুর কাহিনি নিয়ে ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় হিন্দি সিনেমা ‘দোস্তি’। মেলো ড্রামাটিক ছবিটি মুক্তির পর দুর্দান্ত ব্যবসা করে। দর্শক আবেগআপ্লুত হযে পড়ে ছবিটি দেখে। সুশীল কুমার ও সুধীর কুমার নামে দুই কিশোর অভিনয় করেন ছবিটিতে। সত্যেন বোস পরিচালিত এই ছবিটি এখনও বলিউডে বন্ধুত্বের ক্ল্যাসিক ছবি হিসেবে স্বীকৃত। ড.নীহাররঞ্জন গুপ্তর উপন্যাস ‘লালুভুলু’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল ছবিটি। ১৯৬৫ সালে ফিল্মফেয়ার আসরে ছটি পুরস্কার জয় করে ‘দোস্তি’।

‘বুচ ক্যাসিডি এ্যান্ড স্যানড্যান্স কিড’ হলিউডের একটি ক্ল্যাসিক ছবি। সিনেমাটি দুই অপরাধী বন্ধুর অমর উপাখ্যান। পল নিউম্যান ও রবার্ট রেডফোর্ডের অনবদ্য বন্ধুত্বের সিনেমার বলিউডি রিমেক ছিল ‘শোলে’। সেখানে অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্র জয় ও বীরু নামে দুই বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শোলে’কে বলা হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা হিন্দি সিনেমা। জয়-বীরু এখন পর্যন্ত বলিউডে সবচেয়ে জনপ্রিয় বন্ধু জুটি।

পর্দায় আরও একবার অমর বন্ধুত্বের আখ্যান তুলে ধরে অমিতাভ বচ্চন-আমজাদ খান অভিনীত ‘ইয়ারানা’ ছবিটি। রাজেশ খান্না-অমিতাভ অভিনীত ‘আনন্দ’ সিনেমাতেও বন্ধুত্বের চমৎকার ছবি চোখে পড়ে।

কোটিপতি মিল মালিকের ছেলে অমিতাভ এবং তার মধ্যবিত্ত শ্রমিক নেতা বন্ধু রাজেশ খান্নার অনবদ্য বন্ধুত্বের ছবি ‘নিমক হারাম’।

অমিতাভ বচ্চন ও শত্রুঘ্ন সিনহার বন্ধুত্বের ছবি ‘দোস্তানা’, ‘নসিব’। অমিতাভ বচ্চন ও শত্রুঘ্ন সিনহা অভিনীত আরও একটি বন্ধুত্বের ছবি ‘ইয়ার মেরি জিন্দেগি’। অমিতাভ ও শশী কাপুরের বন্ধুত্ব এক সময় পর্দায় বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এই জুটির ‘ইমান ধরম’, ‘নিমক হালাল’, ‘সুহাগ’, ‘দো আউর দো পাঁচ’ ব্যবসাসফল হয়। অমিতাভ-বিনোদ খান্নার পর্দা বন্ধুত্বও সত্তর এবং আশির দশকে অনেক হিট হিন্দি সিনেমার কাহিনির মূল ভিত্তি হয়েছে। ‘হেরা ফেরি’, ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’, ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’ ইত্যাদি সিনেমায় এই জুটির বন্ধুত্ব দেখা গেছে। সঞ্জয় দত্ত ও আদিত্য পাঞ্চালি অভিনীত ‘আতিশ’, অক্ষয় কুমার ও সাইফ আলি খান অভিনীত ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’ দুই বন্ধুর গল্প।

‘জাঞ্জির’ সিনেমায় মাস্তান প্রাণ ও পুলিশ অফিসার অমিতাভের বন্ধুত্বও অসাধারণ। পর্দায় প্রাণের মুখে সেই গান ‘ইয়ার মেরা জিন্দেগি’ বন্ধুত্বের দারুণ চিত্রায়ন। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডন’ ছবিতে অমিতাভ-প্রাণ জুটির বন্ধুত্ব দর্শকদের মন জয় করে। ‘খুদা গাওয়া’ সিনেমায় বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখতে জান বাজি রাখা কাবুলি বাদশাহ খানের ভূমিকায় অমিতাভের অভিনয়ও দুর্দান্ত। অন্যদিকে ‘ভূতনাথ’ সিনেমায় ভূতরূপী অমিতাভের সঙ্গে শিশুর বন্ধুত্বও দারুণ।

মাধুরী  দীক্ষিত, সঞ্জয় দত্ত এবং সালমান খান অভিনীত ‘সাজন’ ছবিটিও বন্ধুর জন্য আত্মত্যাগের কাহিনি।  ছবিতে দেখা যায় শারিরীক প্রতিবন্ধী আমন(সঞ্জয় দত্ত) ছোটবেলায় আশ্রয় পায় ধনীর ছেলে আকাশের (সালমান খান) বাড়িতে। পরবর্তিতে বন্ধুর জন্য নিজের প্রেমকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয় আমন। যদিও ছবির শেষে আত্মত্যাগ করে আকাশ।
 
‘থ্রি ইডিয়টস’ সমকালীন বন্ধুত্বের ক্ল্যাসিক ছবি। আমির খান, মাধবন এবং শারমান যোশি তিন বন্ধুর ভূমিকায় দারুণ অভিনয় করেছেন। আমির খান অভিনীত ‘রং দে বাসন্তি’ বন্ধুদের মধ্যকার টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের গল্প। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যে বন্ধুর মৃত্যুর শোধ নিতে অন্য বন্ধুদের আত্মত্যাগ ছিল অসাধারণ।

যোয়া আখতার পরিচালিত ২০১১ সালের সিনেমা ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ফারহান আখতার, অভয় দেওল ও হৃত্বিক রোশান অভিনীত তিন বন্ধুর গল্প। এর আগে ফারহান আখতার পরিচালিত ‘দিল চাহতা হ্যায়’ ছবিটিও ছিল তিন বন্ধুর জীবনের গল্প। আমির খান, অক্ষয় খান্না, সাইফ আলি খান অভিনীত ছবিটি হিন্দি সিনেমার মোড় ফিরিয়ে দেওয়া ছবি। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জানে তু ইয়া জানে না’ ছবিটি প্রেম ও বন্ধুত্বের গল্প।

তবে প্রেম, বন্ধুত্ব এবং এর পার্থক্য নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ এবং ‘দিল তো পাগল হ্যায়’। কারান জোহার পরিচালিত ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ তে রাহুল(শাহরুখ) ও অঞ্জলির(কাজলের) বন্ধুত্ব ও প্রেম বলিউডের ক্ল্যাসিক। ‘ইস গেহরা দোস্তিকি পিছে কই গেহরা পেয়ার চুপা হ্যায়’ (এই গভীর বন্ধুত্বের পিছনে গভীর প্রেম লুকিয়ে রয়েছে)একটি ক্ল্যাসিক সংলাপ। একইভাবে ইয়াশ চোপড়ার ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ সিনেমায় শাহরুখ-কারিশমা এবং মাধুরী-অক্ষয় কুমারের সম্পর্ক প্রেমের নয়, কিন্তু বন্ধুত্বের।

প্রথমে প্রতিযোগী পরে বন্ধু - হাসির ছবি ‘আন্দাজ আপনা আপনা’তে অমর ও প্রেমরূপী আমির খান ও সালমান খানের বন্ধুত্ব ও পর্দা রসায়ন দর্শকদের মন জয় করে নেয়।'বিল্লু' সিনেমায় চিত্রনায়ক শাকির খান(শাহরুখ) এবং গ্রামের গরীব নাপিত বিল্লুর(ইরফান খান) বন্ধুত্ব চোখ ভেজাবেই।

‘ইশক’ সিনেমাতেও গরীব আমির খান ও ধনী অজয় দেবগন এবং ধনী জুহি চাওলা ও গরীব কাজলের মধ্যে বন্ধুত্ব ও প্রেম সিনেমার মূল ঘটনা।

‘কোই মিল গ্যায়া’তে ভিনগ্রহের প্রাণী জাদুর সঙ্গে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হৃত্বিক এবং একদল শিশুর বন্ধুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাস্তব’ ছবিতে সমাজবিরোধী ও অপরাধী সঞ্জয় দত্ত এবং তার ছোটবেলার বন্ধু পুলিশ অফিসার দীপক তিজোরির সম্পর্কের টানাপোড়েন তুলে ধরা হয়েছে।

বলিউডে বন্ধুত্বের ছবির মধ্যে অন্যতম সেরা হলো ‘বেমিসাল’। ১৯৮২ সালের ছবি এটি। পরিচালক ছিলেন ঋষিকেশ মুখার্জি। বন্ধুত্বের জন্য হাসিমুখে আত্মত্যাগের গল্প ‘বেমিসাল’। দুই বন্ধু প্রশান্ত( বিনোদ মেহরা) এবং সুধীর(অমিতাভ বচ্চন)। তাদের বন্ধুত্ব, পরস্পরের জন্য আত্মত্যাগ সিনেমার মূল কাহিনি। কলকাতার বাংলা সিনেমা ‘আমি, সে ও সখা’র বলিউডি রিমেক ‘বেমিসাল’। বাংলা সিনেমাটিতে সুধীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার।