Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় আলী যাকের

বিনোদন প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৭, ২০২০, ০৪:১০ পিএম


বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় আলী যাকের

বরেণ্য অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী আলী যাকেরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বাদ আসর তার দাফন সম্পন্ন হয়।

আলী যাকেরের শেষ বিদায়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

তার দাফনের পর এই প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আলী যাকেরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। প্রিয় অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানাতে থিয়েটার, টিভি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে উপস্থিত হয়েছিলেন।

এর আগে, শুক্রবার সকাল ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নেওয়া হয় আলী যাকেরের মরদেহ। সেখানে বিউগলের করুণ সুরে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই মুক্তিযুদ্ধাকে। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে বেলা ১টার দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আলী যাকেরের কর্মস্থল এশিয়াটিকে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। বনানী কবরস্থান মসজিদে বাদ আসর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৪ বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত অভিনেতা আলী যাকের করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সপ্তাহ দুয়েক আগে। রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে গত রোববার বাসায়ও ফিরে গিয়েছিলেন। পরে আবার অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে সেখানেই মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

গত শতকের সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ আর টেলিভিশনে দাপুটে অভিনয়ের জন্য দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন নিয়ে আছেন আলী যাকের। তার স্ত্রী সারা যাকেরও মঞ্চ আর টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। তাদের দুই ছেলেমেয়ে ইরেশ যাকের ও শ্রেয়া সর্বজয়াও অভিনয়শিল্পী।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই নাট্যজনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকের ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আলী যাকেরের মরদেহ শুক্রবার বেলা ১১টায় নিয়ে যাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে। একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিককে সেখানে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আলী যাকেরের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে বাদ আসর কবরস্থান মসজিদে জানাজার পর তাকে দাফন করা হয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসংগ্রামী ছিলেন অভিনেতা আলী যাকের। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে আরণ্যক নাট্যদলে যোগ দেন। 

এরপর ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকের। ওই বছরেরই জুন মাসে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তার নাটকসংক্রান্ত ঠিকানা। একে একে বাকি ইতিহাস, সৎ মানুষের খোঁজে, দেওয়ান গাজীর কিসসা, কোপেনিকের ক্যাপটেন, গ্যালিলিও, ম্যাকবেথসহ অনেক মঞ্চসফল নাটকের সঙ্গে নির্দেশনা বা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বিশ্বখ্যাত মঞ্চনাটক রূপান্তর করেছেন। 

এদিকে মঞ্চের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। টেলিভিশনে আজ রবিবার, বহুব্রীহি, তথাপি, পাথর দেয়ালসহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ৫০টির বেশি বেতার নাটক করেছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও করেছেন অভিনয়। টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। সমসাময়িক বিষয়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেন। বের হয়েছে বই, যার মধ্যে আছে সেই অরুণোদয় থেকে, নির্মল জ্যোতির জয়সহ বই। একজন শৌখিন ফটোগ্রাফারও তিনি।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। যুক্তরাজ্যের রয়াল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার। স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, পুত্র ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রেয়া সর্বজয়াকে নিয়ে তার সংসার।

আমারসংবাদ/জেডআই