Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

এটিএম শামসুজ্জামানের শুরু থেকে শেষ

বিনোদন ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১, ০৫:৫০ এএম


এটিএম শামসুজ্জামানের শুরু থেকে শেষ

হাজার বছর ধরে সিনেমার সেই বুড়া মকবুল হোক কিংবা দায়ী কে সিনেমার কদম আলী, পর্দায় যে চরিত্রেই তিনি হাজির হয়েছেন প্রতিটি চরিত্রেই মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন সরব। রুপালী পর্দায় দাপুটে অভিনয় দিয়ে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছেন অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। তিনি কেবল একজন গুণী অভিনেতা নন, তিনি একাধারে একজন পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। বাংলা চলচ্চিত্র এবং নাটকে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তবে আজ সবই অতীত।পর্দার সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রটি আজ সব পেছনে ফেলে পাড়ি জমিয়েছেন দূর আকাশে। 

শুরুটা হয়েছিল চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। এরপর কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। তার প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্যেই চলচ্চিত্রে প্রথম অভিষেক হয় অভিনেতা ফারুকের। তবে এই গুণী  কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকারের মাঝে যে লুকিয়ে আছে একজন গুণী অভিনেতা সেই বিষয়টি সামনে আসে ১৯৬৫ সালের দিকে। শুরুটা  কৌতুক অভিনেতা হিসেবে হলেও তিনি খলনায়কেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। 

‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্র ছাড়াও কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘জলছবি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।

শুরুতে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করলেও আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রটিতে খল চরিত্র তাকে অভিনেতার তকমা এনে দেয়। এরপর তিনি ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মণিকোঠায় স্থান করে নেন। 

খল চরিত্র ছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ে পারদর্শী ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘চোরাবালি’ উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। 

দীর্ঘ এই কর্মজীবনে তার ঝুলিতে এসেছে অসংখ্য পুরস্কার। ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও  ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ চলচ্চিত্রে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’তে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৭ সালের ৪২ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয় তাকে। 

শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকের ভূষিত করা হয়। একই সালে তিনি ঢাকা মডেল এজেন্সি এ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননা ভূষিত হন। এছাড়া অভিনেতা বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক অর্জন করেন এটিএম শামসুজ্জামান।

গুণী এই অভিনেতা ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নূরুজ্জামানের পৈতৃক নিবাস লক্ষীপুরের ভোলাকোটের বড় বাড়িতে। 

আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই গুণী অভিনেতা। কিন্তু চলচ্চিত্রে তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সব সময়। 

আমারসংবাদ/এডি