Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

সাইনা: অজানা গল্পগুলো জানা হলো না আর!

মার্চ ২৭, ২০২১, ০৫:৫০ এএম


সাইনা: অজানা গল্পগুলো জানা হলো না আর!

ভারতের ক্রিকেট টিমের শক্তি তো পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত। কিন্তু ব্যাডমিন্টনেও যে কোনো অংশে কম নয় তা প্রমাণ করেছে একটি নাম,সাইনা নেহওয়াল। "ভোলেছি সুরাজ, আখো মে মাস্তি" সাইনা নেহওয়াল দেখতে সাদা-সিদে হলেও, ময়দানে নামলে তিনি এক অন্য শক্তি। সামনে যেই থাকুক " জিত তো সাইনা কী পাক্কি হে"।

এবার সেই সাইনা নেহওয়ালকে পর্দায় তুলে আনা হয়েছে। বানানো হয়েছে বায়োপিক। বাস্তব জীবনে তো সাইনা পুরোপুরি সুপারহিট, কিন্তু পর্দায় আসলে কতোটুকু ফিট! চলুন পুরো সিনেমার ময়নাতদন্ত করা যাক তাহলে--

শুরুতে সাইনা নেহওয়ালের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই একটু। সাইনা কেবল একটি নাম নয়, এক অন্যরকম শক্তি। পুরো দুনিয়ায় নাম্বার ওয়ান ব্যাডমিন্টন খেলোয়ার হওয়া যেসব নারীদের স্বপ্ন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম সাইনা। ২০১৫ সালে ম্যাডামের মাথায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তাজ সেজেছিল, সেই থেকে সাইনার একটিই শখ ঘরের দেওয়ালে ট্রফি আর মেডেল সাজানো। 

শুধু এই সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠার গল্পকে পর্দায় সাজিয়ে তোলার গুরুদায়িত্ব নিয়েছে অমোল গুপ্তে। যেখানে পরিনীতি চোপড়া সাইনা চরিত্রে ফিট বসার জন্য পুরোদমে চেষ্টা করে গেছেন। " কৌশিস কারনোকে কাভী হার নেহি হোতি"-এই কনস্পেটে সিনেমার সাইনার জীবনের গল্প ধীরে ধীরে চলতে থাকে। 

প্রথমে নিজের প্রতিভাকে দুনিয়ার সামনে আনা, সামনে দাঁড়ানো শত্রুর মোকাবিলা করা, পরে প্রেম-ভালোবাসাকে কুরবানি দিয়ে শেষমেষ নিজের নামের আগে চ্যাম্পিয়ন লেখানো। ব্যাস, পুরো সিনেমা শেষ। 

কিন্তু বায়োগ্রাফির মতোই বায়োপিককেও হতে হয় সৎ, সত্যনির্ভর। সাফ্যেলের গল্পের আবেগের আতিশয্যে যদি চিত্রনাট্য সত্যনিষ্ঠ থাকতে না পারে কিংবা বাদ পড়ে যায় না জানা কথাগুলোই, তবে তাকে কী সার্থক জীবনীচিত্র বলা চলে? 


 সাইনা সিনেমার মূল সমস্যা সেখানেই। যে গল্প গুলো সবার জানা, সেই গল্প গুলোকেই বার বার তুলে ধরা হয়েছে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু, অ্যাকাডেমির কঠিন ট্রেনিং, পরিবারের ত্যাগ, সহখেলোয়াড়ের সঙ্গে সম্পর্ক, চোট পাওয়া, কোচের সঙ্গে টানাপড়েনের গল্প বলতে বলতে সাইনার ‘সাইনা নেহওয়াল’ হয়ে উঠার না-বলা গল্পগুলোই যে শোনা হল না আর! 

[media type="image" fid="117116" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এছাড়াও বাদ রয়ে গেছে সাইনার গোপী স্যরের (কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দ) অধ্যায়ের অনেকটাই। সিনেমায় অবশ্য গোপীচন্দ পাল্টে গিয়েছেন কোচ রাজনে। যার একাডেমি থেকে শুধু চ্যাম্পিয়নরা বেরোয়, তাকেই দেখা গেলো না কোর্টের চৌহদ্দির মধ্যে। 

অথচ সাইনা নেহওয়ালের দুর্দান্ত ফুটওয়ার্ক, নেট ড্রিবলিং হাতে ধরে তাকে শিখিয়েছিলেন গোপীচন্দ। কিন্তু সিনেমায় সেই জান কবুল করা ট্রেনিংয়ের কোনও দৃশ্যই সে ভাবে নেই! সিনেমায় সাইনার গুরুত্বপূর্ণ টুরগুলির একটিতেও উপস্থিত নেই রাজন। বাস্তবে কমনওয়েলথ-সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যখন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সাইনা নেহওয়াল, কোর্টের পাশে বসে থাকা সদাহাস্যময় গোপীচন্দকে মনে পড়ে যায়।  

এছাড়াও সাইনার প্লেয়িং স্টাইলের খুঁটিনাটি এড়াতে বারবার লং শটের ব্যবহারও ক্লান্ত করে।  প্রথম ভারতীয় হিসেবে অলিম্পিক্সে ব্যাডমিন্টনে দেশকে পদক এনে দিয়েছিলেন যে সাইনা, তার বায়োপিকে লন্ডন অলিম্পিক্সের পর্ব এক লাইনে সারা হল কেন! প্রতিপক্ষ চোট পেয়ে জমি ছেড়ে দেওয়ায় সাইনা ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন, তা দেখাতে চাননি বলেই কি এড়িয়ে যাওয়া হল সেই অধ্যায়?

এরপর আসা যাক পরিণীতি চোপড়ার কথাই। পর্দায় ঠিক কতটা সাইনা নেহওয়াল হয়ে উঠতে পারলেন তিনি?

পরিণীতি ভালো অভিনেত্রী এই কথাই কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সাইনা চরিত্রে একদমই ফিট না তিনি। পরিণীতির কথা বলার স্টাইল, হাঁটাচলার ধরন কিংবা ব্যাডমিন্টেনের প্রতি ভালোবাসা কোথাও আসল সাইনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। 

"এম এস ধোনি" সিনেমার কথা মনে আছে? যেখানে সুশান্ত সিং রাজপুত ধোনির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিল ধোনির জন্য, কিন্তু সিনেমা শেষে বের হয়েছিল সুশান্তের ভক্ত হয়ে। এই জাদুই দেখাতে ব্যর্থ পরিণীতি।

যেভাবে "এম এস ধোনি" সিনেমায় ধোনিকে হিরো না বানিয়ে শুধু ধোনি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই বিষয়টি পুরো ভিন্ন সাইনা সিনেমায়। জীবনের কোনো চড়াই-উতরাই দেখানো হয়নি। শুধু ৫ মিনিট পর পর একটি করে ব্যাডমিন্টন ম্যাচ দেখানো হয়েছে, যেটা জিতে সাইনা এগিয়ে যেতে থাকে। মানুষ ট্যালেন্ট নিয়ে জন্ম নিলেও সেটাকে দীর্ঘ অধ্যাবসায়ের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় সেটাই শক্তিম্যানের মতো উধাও করে দেওয়া হয়েছে। 

স্পোর্টস বায়োপিকের স্বার্থে খেলোয়াড়সুলভ চেহারা তৈরির যে দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক হিন্দি সিনেমায় বারবার দেখা গিয়েছে, সেখানে পরিণীতি তার অ্যাপিয়ারেন্সে বেশ হতাশই করেছেন। সিনেমার সাইনার ওজন ঝরানোর পর্ব দেখানো হয়েছে। তবে সেখানেও নায়িকার চেহারার পরিবর্তন বিশেষ বোঝা যায়নি। চাবুকের মতো সাইনার সঙ্গে মেলানো যায় না ভারী চেহারার পরিণীতিকে।

এছাড়াও সিনেমায়  সাইনার মা ঊষারানির চরিত্রে মেঘনা মালিকের অতি-অভিনয় চোখে লাগে। কাজে লাগানো হয়নি মানবের মতো অভিনেতাকেও। এছাড়াও সিনেমায় প্রায় উহ্য সাইনার দিদি, সাইনার মার্শাল আর্টস শিক্ষা, পরবর্তী কালে বিজেপির সদস্যপদ নেওয়া-সহ অনেক কিছুই। চিত্রনাট্যে আসেননি পি ভি সিন্ধুও। প্রেমিক পারুপল্লি কাশ্যপ অবশ্য জায়গা পেয়েছেন, সেই চরিত্রে ঈশান নকভিও সুন্দর। তবে বাদ পড়েছে তাদের বিবাহ-পর্ব।

সাফল্যেগাঁথার এই সিনেমায় অজানা গল্প গুলোই আর জানা হলো না। তবে যারা জীবনে হতাশায় ভুগছেন। রাত জেগে ইউটিউবে অনুপ্রেরণার বার্তা শুনেন তাদের জন্য এই সিনেমাটা দেখা জরুরী। সব নেগেটেভিটির মধ্যে সাইনার অনুপ্রেরণাই পজেটিভ।

আমারসংবাদ/এডি