Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

স্কুইড গেম: মৃত্যুর খেলায় জিতবে কে?

বিনোদন ডেস্ক

অক্টোবর ১৬, ২০২১, ০৯:১০ এএম


স্কুইড গেম: মৃত্যুর খেলায় জিতবে কে?

ছোট বেলার একটি গেইম দিয়েই পর্দা উঠে সিনেমার। এই গেইমে যেইভাবে হোক আপনাকে প্রতি পক্ষের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে। গল্পে সিনেমার মূল চরিত্র সেয়ং জি হুন ছোট বেলার সেই খেলায় জিতে যায় এবং তার মতে, “যখন সে জিতে যায় তখন সে নিজেকে পৃথিবীর রাজা ভাবতে শুরু করে”-আর এভাবেই শুরু হয় সিনেমার মূল কাহিনী।

একদিন সকালে ভাত খাচ্ছিলেন সেয়ং জি হুন। সেই সময় তার মা এসে তাকে হাতে কিছু টাকা দেন আর বলেন যাও আজকে তোমার মেয়ের জন্মদিন পালন কর। 

তখন সেয়ং জি হুন তার মা কে বুঝায় যে ঐ টাকা কম হয়ে যাবে। এবং সে আরও টাকা চেয়ে নেয়। এরপর যখন তার মা চলে যায় তখন সে মায়ের কার্ডটি চুরি করে নিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে ঘোড়ার রেচ দেখতে যায় এবং সে সেই বাজিতে জিতে গিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পায়।

সেয়ং তার সাথে থাকা সঙ্গীকে বুঝায় আজকে তার মেয়ে কে কি কি খাওয়াবে বা গিফট দিবে এমনকি তার মেয়েকেও জানিয়ে দেয়।

এখানে বলে রাখা ভালো, সেয়ং জি হুন একটি কার মেনুফেকচার কোম্পানিতে চাকরী করতো। সেখানে টাকার জন্য তাদের মারামারি এবং হরতাল হতো। এই লড়াইয়ে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল। তখন সে এতোটাই ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়ে যে এক পর্যায়ে তার বউ তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে। 

মেয়েকে আনন্দের খবর দেয় ঠিকই কিন্তু ততক্ষণেই দেখা যায় কিছু লোক দৌড়ে আসে এবং সেয়ংও দৌড় দেয়। দৌড়ানোর সময় সে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায় এবং সেখানেই তার সব টাকা ছিনতাই হয়ে যায়। এটা সে বুঝতে পারে যখন তাকে তাড়া করা লোক গুলা তাকে পাকড়াও করে তখন। পাকড়াও করার কারণ লোক গুলা সেয়ং জি হুন থেকে টাকা পেত। আর সেয়ং জি হুন টাকা দিতে না পেরে কিছুটা হতাশ হয়ে যায়। কারণ সে একটু আগেই দেড় লক্ষ টাকা জিতেছে আর এখন পকেটে সে টাকা নেই। তখন সে হতাশায় বাইরে বেঞ্চে বসে।

ঠিক তখনই জং ইয়ু নামে এক ভদ্রলোক এসে তাকে একটা গেইম অফার করে যেখানে সে জিতলে পাবে ১ লক্ষ টাকা।

ছোট্ট একটা গেইম অথচ এক লক্ষ টাকা বিষয়টি কেমন যেন। তবুও সে খেলে এবং ১ লক্ষ টাকা জিতে যায়। তখন ভদ্র লোক তাকে অফার করে যে এরকম আরও অনেক গেইম আছে যেগুলো মাত্র ৬ দিনে খেলে ৬০ মিলিয়ন পাওয়া যাবে। এই কথা শুনিয়ে সে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

সেই রাতেই সেয়ং জি হুন সেই পথে পা দেয়। আর পা দেওয়ার সাথে সাথে ফেসে যায় মরণ ফাঁদে। একটা সময় তাদের বেহুশ করে একটা দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় তাদের প্রত্যেকেই ব্যক্তিজীবনের কোনো না কোনো ভাবেই টাকার জন্য বৈরাগী। সবাই টাকার লোভেই এখানে আসে। 

এই মরন খেলায় কে জিতবে আর কে হারবে? শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে জুটবে সেই টাকা যা দিয়ে রাতারাতি শূন্য খানদানি থেকে রাতারাতি হয়ে যাবে মুকেশ আম্বানি আর কার ভাগ্যে রয়েছে মৃত্যু? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে নেটফ্লিক্সের নতুন ওয়েব সিরিজ স্কুইড গেমে। 

শুনতে ছোট বেলার স্কুইড গেইম তথা নস্টালজিয়া সব গেইম যেমনঃ রেড-গ্রীণ,হানিকম্ব, রশিটানা, মার্ভেল খেলা মনে পড়লেও এই সিরিজে থাকছে ভিন্ন কিছু। এখানে দেখা যায় এলিমিনেট হলেই সাথে সাথে ফায়ার। মুলত মৃত্যু নিয়ে খেলাই এই সিনেমার থিম। 

দ্বীপে পোঁছানোর পরে শুরু হয় তাদের প্রথম গেইম নাম রেড-গ্রীণ গেইম।

এই খেলার নিয়ম হচ্ছে একটি রোবট থাকবে। রেড বাটনে প্রেস করলে থেমে যাবে কোনো ভাবেই নড়া যাবেনা আর গ্রীণ বাটনে প্রেস করলে দৌড়াতে হবে। এভাবেই সীমান্ত পার করতে হবে। যদি পার করতে না পারে এবং রোবট ডিটেক্ট করতে পারে তাহলে সাথে সাথেই ফায়ার।

স্কুইড গেমের প্রথম গেমে দেখা যায় যারা এলিমিনেট হয়েছে তাদের অনেকেই এখানে মারা যায়। এসব দেখে তারা ভয় পেয়ে পরের গেমে যেতে নারাজ হয়ে যায়। হা না ভোট হয় এবং ভোট দিয়ে দেখা যায় না ভোট বেশি তাই তারা সেখান থেকে চলে আসে। চলে আসার সময় তাদের জানানো হয় যে যদি তারা চায় তাহলে আবার তারা গেমে জয়েন করতে পারবে।

ফিরে এসে তারা সুন্দর জীবন শুরু করতে চায় কিন্তু দেখা যায় আবারও বিপত্তি শুরু। একদিকে টাকার লোভ অন্যদিকে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক টেনশন তাদের শেষ করে দিচ্ছে।

সেয়ং জি হুন তাদের সব ঘটনা পুলিশ কে বুঝানোর জন্য থানায় যায় কিন্তু থানায় তার কথা শুনতে নারাজ। উল্টো কথা শুনিয়ে তাড়িয়ে দেয়। তখন পুলিশ অফিসার জন হু সেখানে আসে এবং দেখে একটা কিছু হয়েছে। পাশে থাকা ভিজিটিং কার্ডটাও ফলো করে সে।

একদিন সে হারানো ভাইয়ের রুমে ঢুকে দেখে সেখানেও সেই একই ভিজিটিং কার্ড। তখন সে চিন্তা করে যেভাবেই হোক পিছু নিবে এবং সেখানে যাবে। এভাবেই সে পিছু নেই এবং সেই দ্বীপে চলে যায়।

গিয়ে দেখে রোজ গেমের নামে মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে আরেকটা গ্রুপ মৃত মানুষদের চোখ, কিডনি, হার্ট নিয়ে রমরমা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। একদিকে সে আসতে আসতে সব গোপন তথ্য জেনে নিচ্ছে অন্যদিকে সেখানে আসা মানুষ কঠিন কঠিন ফাঁদে পড়ে, গেম খেলে রোজ মারা যাচ্ছে।

এভাবেই সিরিজের শেষে দেখা যায় সেখানে কিছু ভিআইপি লোকের আগমন। যারা সচক্ষে এসব পৈশাচিক আনন্দ পেতে সেখানে আসছে। মদ, মেয়ে নিয়ে উদর ফূর্তি করছে আর সামনে মানুষের মৃত্যু দেখছে।

তখন পুলিশ অফিসারটি সেখানে ওয়াইটার সেজে সেখানে আসে এবং এক ধনী ব্যক্তির তাকে ভালো লেগে যায়। সে তাকে মাস্ক খুলতে বলে। তখন পুলিশ অফিসারটি জানায়, মাস্ক খুললেই এখানে মেরে ফেলা হয়। আপনি যদি আমাকে দেখতে চান তাহলে চলেন রুমে যাই৷ তখন তারা দুজন রুমে যায়।

রুমে যাওয়ার পর ধনী ব্যক্তিটি তার কাপড় খুলে ফেলে এবং পুলিশ অফিসারকে ঘনিষ্ট হতে বলে। তখন সে পুলিশ অফিসার তার সঙ্গে ঘনিষ্ট হয় এবং সুযোগ বুঝে মোবাইল বের করে সব তথ্য জেনে নেয় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

ততক্ষণে সেখানকার কর্তৃপক্ষ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে ধনী ব্যক্তিটিকে খোজে এবং দেখে রুমে সে বেহুশ। তখনই তারা পুলিশ অফিসারকে খোজতে থাকে। ঐদিকে মরতে মরতে বেঁচে থাকে আর মাত্র ৩ জন। সেয়ং জি হুন, সু সাং ও এবং সাই বে অক। 

দূর্ভাগ্য বসত এখানে আশা ৩ জনই কারো না কারো কৃপা পাইছে। আলী, বৃদ্ধ কিংবা বাবা মা হারা সেই মেয়েটা ৩ জনই তাদের জীবন উৎসর্গ করে এদের আজকে এতটুকু আসতে সাহায্য করেছে। এই ৩ জনের মধ্যে রাতে তাদের ডিনার করানো হয় এবং একটা করে ছুরি দেওয়া হয়। তারা রাতে ঘুমুতে গেলে সাই বেওক সেয়ং জি হুন কে বলে তার পেটে কাচ ঢুকেছে এবং সেয়ং জি হুন ডাক্তারের জন্য হন্যে হয়ে যায়। কিন্তু এসেই দেখে সু সাং ও সেই সাই বে অক কে মেরে ফেলেছে।

ঐদিকে পুলিশ অফিসারটি ধরা খায় এবং গুলিতে আহত হয়ে পানিতে পড়ে যায়। আর এদিকে ২ জনের মধ্যে পুনরায় স্কুইড গেম শুরু হয়।

অবশেষে গল্পের মূল চরিত্র গেইমে জিতলে তার একাউন্টে ৪৭ মিলিয়ন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এবং সে যখন সেই টাকা নিয়ে বাসায় আসে তখন দেখে তার মায়ের মৃত্যু হয়ে যায়। তখন সে ভবঘুরে জীবন পছন্দ করে।

কিন্তু আসল টুইস্ট হয় এখানেই।

সে যখন নদীর ধারে একা বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই এক ফুলওয়ালী তাকে একটা কার্ড দেয়। সেই কার্ড অনুযায়ী সেখানে গিয়ে দেখে ইনিই সেই বৃদ্ধ যিনি তাকে জীবন দিয়েছে। বৃদ্ধ জানায় গেইম খেলার চেয়ে গেইম উপভোগ করাতে মজা বেশি। তখন সে ঐ যায়গা থেকে চলে আসে এবং হঠাৎ করেই সে একদম শুরুতে তাকে যে লোক অফার করেছিল তাকে দেখতে পায়। তখন সে প্রথমে তাড়া করে। পরে ফোন করে জানিয়ে দেয় সে এবার ধণীদের ধরতে আসবে। আর এখানেই শেষ হয় ৯ পর্বের ১ম সিজনের সিরিজের। 

ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নেটফ্লিক্সে ঝড় তুলেছে স্কুইড গেম। কারণ প্রতি মিনিটে মিনিটে থাকা থ্রিল আপনাকে এক পর্ব দেখার পর আরেক পর্ব দেখতে বাধ্য করবে। ১ম সিজনের স্কুইড গেইম এর এই ৯ পর্ব নিয়ে গঠিত সিরিজটি এক সাথে প্রায় ৪৮ টা দেশে মুক্তি পেয়েছে এবং সকলে এটির থ্রিলার আর টুইস্টের প্রেমে পড়েছে, প্রশংসা করেছে।

স্কুইড গেইম একটি কুরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এমনকি নেটফ্লিক্সের দুনিয়ায় সফল সিরিজ।

আমারসংবাদ/এডি