Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মিমি: ছোট প্যাকেট, বড় ধামাকা

বিনোদন ডেস্ক

অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০৯:৩৫ এএম


মিমি: ছোট প্যাকেট, বড় ধামাকা

সারোগেসি, এই শব্দটি বেশ পরিচিত হলেও পশ্চিমাদেশ ছাড়া আমাদের দেশে কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এখনও সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া মেনে নিতে পারেন না সমাজের অনেকে। সেই সাথে সমাজে একজন একা মাকে সন্তান বড় করে তুলতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই দুই কনসেপ্টকে কেন্দ্র করে বলিউড নিয়ে এসেছে দারুণ একটি সিনেমা নাম মিমি। যেখানে কমেডির মাধ্যমে সিনেমায় সমাজের বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। 

কাহিনি শুরু হয় রাজস্থানের এক ছোট্ট শহরে। ২৫ বছরের তরুণী মিমির ইচ্ছে সে বলিউডে গিয়ে হিরোইন হবে। নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছে সে। তাই রাজস্থানের বিভিন্ন হোটেলে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য সে নৃত্য পরিবেশন করে। 

এদিকে আমেরিকা থেকে এই শহরে সারোগেট মাদারের সন্ধানে এসেছে আমেরিকান দম্পতি সামের আর জন। সামেরের পক্ষে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। তাই সুস্থ-সবল একজন সারোগেট মাদারের খোঁজে রাজস্থানে এসে পৌঁছেছে তারা। ঘটনাচক্রে তাদের গাড়ির ড্রাইভার ভানুপ্রতাপ পুরো বিষয়টি জানতে পারে। সামের আর জন তাকে জানায়, একজন সারোগেট মাদারের সন্ধান দিতে পারলে পাঁচ লক্ষ টাকা পাবে সে। মিমির নাচের অনুষ্ঠান দেখে তাকে মনে ধরে যায় মার্কিন দম্পতির। 

তারা ড্রাইভার ভানুকে জানালে ভানু মিমিকে রাজি করাতে শুরু করে। প্রথমে মিমি রাজি হয়না। কিন্তু আবার ২০ লাখ টাকার ব্যাপার। 

বলিউডের স্টার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে কিন্তু তার স্বপ্ন পুরণের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক উপায় নেই, সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে শেষমেষ রাজি হয় মিমি। 

আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে সফল ভাবে মিমি গর্ভবতী হয়। মিমি তার বাবা -মায়ের কাছ থেকে গর্ভাবস্থা লুকানোর জন্য, মিমি মিথ্যা বলে এবং তাদের বলে যে তিনি একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য ৯ মাসের জন্য মুম্বাই যাচ্ছেন। কিন্তু সে তার বন্ধু শামার সাথে বসবাস শুরু করে। জন এবং সামার, ভানুকে গর্ভবতী অবস্থায় মিমির যত্ন নিতে নিয়োগ দেয়।

কয়েক সপ্তাহ পরে, একটি নিয়মিত চেক আপ করে মিমি জানতে পারে অনাগত সন্তানের ডাউন সিনড্রোম রয়েছে । এই খবর জন এবং সামার মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পরে এবং তারা হঠাৎ করে আমেরিকা চলে যায় ভানুকে বলে যে তারা আর বাচ্চা চায় না এবং মিমিকে গর্ভপাত করার পরামর্শ দেয়। 

এই বিষয় সম্পর্কে জানার পর, মিমি হতাশ হয়ে পড়ে কিন্তু গর্ভপাতের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে এবং শিশুটিকে পুরোমেয়াদে বহন করার সিদ্ধান্ত নেয়। মিমি বাড়ি ফিরে আসে যিনি দৃশ্যত গর্ভবতী এবং শিশুর বাবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি ভানুর বলে মিথ্যা বলে। 

সারোগেট মাদার হওয়ার কঠিন লড়াইয়ের মাঝে ভানু কিন্তু মিমিকে ছেড়ে চলে যায়নি। সে মিমির সঙ্গেই রয়ে যায়। সংলাপের মুনশিয়ানায়, মিমির সঙ্গে ভানুর রয়ে যাওয়ার দারুন একটা যুক্তিও রয়েছে এই ছবিতে। মিমি যখন ভানুকে জিজ্ঞেস করে, সে কেন মিমির সঙ্গে রয়ে গিয়েছে, তখন ভানু বলে ওঠে ড্রাইভারদের নীতিই হল গাড়িতে সওয়ারি তুলে ফেললে তাঁকে যেভাবেই হোক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। মিমিকেও তাই মাঝপথে ফেলে রেখে চলে যেতে রাজি নয় সে।

এদিকে ভানুর দিল্লিতে একজন স্ত্রী আছেন যিনি তাকে কয়েক মাস ধরে দেখেননি। যখন সে এবং ভানুর মা রাজস্থানে মিমির বাড়িতে উপস্থিত হন, তখন বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তি দেখা দেয়। অবশেষে, মিমি সারোগেসি সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে আসে এবং তার অনাগত সন্তানকে তার বাবা -মা এবং পরিবার গ্রহণ করে।

মিমি রাজ নামে একটি সুস্থ ছেলের জন্ম দেয়, এবং আগের পরীক্ষার ফলাফল ভুল প্রমাণিত হয়। তিনি রাজের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত হন এবং তার বলিউড আকাঙ্ক্ষাগুলিকে পরিহার করে রাজের যত্ন নেওয়ার শুরু করে। চার বছর পরে, মিমি এবং রাজের একটি ভিডিও অনলাইনে দেখে জন এবং সামার ভারতে ফিরে আসেন। তারা মিমিকে বলে যে তারা বাচ্চা সম্পর্কে তাদের মন পরিবর্তন করেছে এবং রাজকে আমেরিকায় ফিরিয়ে নিতে চায়।

কিন্তু মিমি সামারের মুখোমুখি হন এবং বলেন যে রাজ এখন তার সন্তান এবং সে তাকে ফিরিয়ে দেবে না। তখন জন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেয়। কারণ মিমি সারোগেসির জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল । ভানু এবং মিমির বাবা -মা আদালতে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।

শেষ পর্বে মাতৃত্বের দাবি নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায় দু’জন মা। সন্তানের গায়ের রং দিয়ে মায়ের ভালবাসার বিচার যে করা যায় না, সে কথা বলে মিমির কাহিনি। পাশাপাশি বলে, গর্ভধারণ না করেও একজন নারী মায়ের স্নেহ-ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে পারেন সন্তানকে। ভ্রুণ হত্যার বিরুদ্ধেও এক তীব্র প্রতিবাদ রয়েছে মিমির কাহিনিতে। এরই সঙ্গে মিমির বান্ধবী শমা এবং মিমির বাবার খুদে শিষ্যর পারিবারিক অন্তরঙ্গতার প্রেক্ষাপটে দুই সম্প্রদায়ের সহাবস্থান, সম্প্রীতির ছবিও ধরা পড়েছে।

দু’ঘন্টা ১৩ মিনিটের ছবি 'মিমি'। ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে কী ঘটবে সেই উত্তেজনাটা প্রথম থেকেই ছবিতে বুনেছেন পরিচালক। কিন্তু বাস্তবে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে দেখা যায়, চেনা বলিউডি ফর্মুলা পরিচালক এড়িয়ে যেতে পারেননি। মিমির বান্ধবী শমার সেই সংলাপটি যেন কাহিনির পরিসমাপ্তিকে এককথায় ব্যক্ত করে- ‘হাম যো সোচতে হ্যায়, ওহ জিন্দেগি নেহি হোতি, যো হামারে সাথ হোতা হ্যায় ওহ জিন্দেগি হোতি হ্যায়।’ অর্থাৎ, আমরা যা ভাবি জীবন তা নয়, আমাদের সঙ্গে যা ঘটে সেটাই জীবন। 

ছবিটিতে মিমির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কৃতী শ্যানন। ড্রাইভার ভানুপ্রতাপ পাণ্ডের ভূমিকায় রয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। মিমির বান্ধবী শমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাই তমহানকর। মিমির মা শোভা রাঠৌরের চরিত্রে সুপ্রিয়া পাঠক এবং বাবা মানসিং রাঠৌরের ভূমিকায় মনোজ পহওয়া অভিনয় করেছেন। এছাড়াও মার্কিন দম্পতি সামের এবং জনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইভলিন এডওয়ার্ডস এবং এইডন হোয়াইটক। ছবিটি পরিচালনা করেছেন লক্ষণ উতেকার। 

পরিচালক লক্ষণ উতেকারের সঙ্গে এই ছবির কাহিনি লিখেছেন রোহন শঙ্কর। ছবির সংলাপও তাঁরই লেখা। বলতেই হয়, ‘মিমি’-র কাহিনি এবং সংলাপ যোগ্য সঙ্গত করেছে। তবে এই কমেডি ড্রামা অতিনাটকীয়তা বর্জন করতে পারেনি এই ছবি। মিমির সন্তান হিসেবে এক শ্বেতাঙ্গ শিশুকে যেভাবে পরিবারের সকলে মেনে নিল, তা বাস্তবসম্মত নয়। পাশাপাশি চিকিৎসকের চরিত্রে জয়া ভট্টাচার্যের সংলাপের মধ্যে দিয়ে সারোগেসির তথ্যগত যে গভীরতা ছোঁওয়া প্রয়োজন ছিল, তা এই ছবিতে অনুপস্থিত। এক মার্কিন দম্পতি সন্তানের জন্য ভারতে এসে কেন সারোগেট মাদার খুঁজছেন তা কোনও ভাবেই বোধগম্য হয় না। অন্যদিকে ক্লাইম্যাক্সেও প্রবল বলিউডি নাটকীয়তা পরিবেশন করা হয়েছে।

এ আর রহমান এই ছবির সঙ্গীতপরিচালক। ছবির গানগুলি অবশ্য কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই ব্যবহার করা হয়েছে। অহেতুক গানের দৃশ্যের অবতারনা হয়নি। মিমির চরিত্রে কৃতী শ্যাননের অভিনয় এই ছবির সম্পদ। লক্ষণ উতেকারের আগের ছবি ‘লুকাছুপি’-তেও কৃতী অভিনয় করেছিলেন মুখ্য চরিত্রে। ‘মিমি’-তে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর অভিনয় নিয়ে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। সংলাপ, অভিব্যক্তি, কমেডি টাইমিংয়ে পঙ্কজ অনবদ্য। ভানুর চরিত্রের প্রতিটি পরত যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পঙ্কজ, তা শিক্ষনীয়। মিমির মায়ের চরিত্রে সুপ্রিয়া পাঠক এবং বান্ধবী শমার চরিত্রে সাই তমহানকরের অভিনয়ও নজরকাড়া। ছবির কিছু কিছু জায়গায় মেকআপ এবং বলিউডি ঘরানার অনাবশ্যক মশলার প্রয়োগ ছন্দপতন ঘটিয়েছে। 

তবে সামগ্রিক ভাবে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া জাতীয় পুরস্কারজয়ী মরাঠী ছবি ‘মালা আই ভায়িচে’-র হিন্দি রিমেক ‘মিমি’ বিনোদনের অঙ্কে দর্শকদের হতাশ করবে না।

আমারসংবাদ/এডি