Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রহস্যে ঢাকা পরিচারিকা থেকে ‘বোল্ড’ ছবির আইকন হওয়া সিল্কের মৃত্যু

বিনোদন ডেস্ক

ডিসেম্বর ২, ২০২১, ০৯:২০ এএম


রহস্যে ঢাকা পরিচারিকা থেকে ‘বোল্ড’ ছবির আইকন হওয়া সিল্কের মৃত্যু

২০১১ সালে বিদ্যা বালানকে উলালা গানে দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকে। কারণ এর আগে নায়িকাকে কখনই এমন খোলামেলা অবতরণে দেখা যায়নি। খোলামেলা হবে বা নাই বা কেন, সিনেমার নামই যে ছিল ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ । তবে এই সিনেমা অভিনেত্রী বিদ্যা বালানের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক পুরস্কার এনে দিয়েছিল অভিনেত্রীর ঝুলিতে। পর্দার সেই 'সিল্ক স্মিতা' এখনও রঙ্গিন। 

কিন্তু যার জীবনী নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল তার মৃত্যু রহস্য আজ ধোঁয়াশায়। বলছি বিজয়লক্ষ্মীর কথা। যদিও এই নামে তাকে কেই বা চিনে।  সকলের কাছে তিনি সিল্ক স্মিতা।

সিল্কের বোল্ড অবতারে আট থেকে আশি বুঁদ হত সকলে। অভিনেত্রীর বোল্ড উপস্থিতি ঝড় তুলত প্রতি ফিল্মেই । একটা সময় এমন এসেছিল, যখন ইন্ডাস্ট্রিতে 'সিল্ক স্মিতা' এবং 'বোল্ড' শব্দ দু'টি প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। 

কিন্তু পর্দায় যতটাই সাহসী হিসাবে তুলে ধরা হত তাকে, বাস্তবে তিনি ছিলেন ঠিক তার উল্টো। অত্যন্ত দায়িত্বশীল, নরম হৃদয় এবং শিশুসুলভ এক জন মানুষ ছিলেন তিনি।

ছোট থেকেই তার জীবন ছিল কষ্টে ভরা। প্রচুর ওঠাপড়া সামলে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা পাকা করেছিলেন।

১৯৬০ সালের ২ ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের ইলোরুতে এক তেলুগু পরিবারে জন্ম তার। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ।

টাকার অভাবে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছাড়িয়ে দেওয়া হয় তার। অথচ চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা জানা সিল্ক পরবর্তী কালে ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলতেন।

আকর্ষণীয় চেহারা হওয়ায় বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেদের কাছ থেকে কুপ্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলেন। তাকে সচরাচর বাড়ি থেকে বেরতে দিতেন না মা।

দরিদ্র মা-বাবা তাই সিল্কের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তাকে বিয়ে দিয়ে দেবেন ঠিক করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এক গরুর গাড়ির চালকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

কিন্তু বিবাহিত জীবন ছিল আরও দুঃসহ। বিয়ের পর থেকে তার উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। সে সব মানতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে চেন্নাই চলে আসেন। পর্দার স্মিতা বিদ্যা বালন এই সবদৃশ্য ফুটিয়ে তোলেন দুর্দান্ত ভাবেই।

চেন্নাইয়ে এক অভিনেত্রীর বাড়িতে প্রথম পরিচারিকার কাজ পান তিনি। তিনি ওই অভিনেত্রীর মেক আপে সাহায্য করতেন। এক দিন ওই অভিনেত্রীর বাড়িতে এক পরিচালক আসেন। তার বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে দেখছিলেন সিল্ক।

এ নিয়ে অভিনেত্রী তাকে ব্যঙ্গ করেছিলেন। সিল্কও প্রত্যুত্তরে জানিয়ে দেন, এক দিন এ রকমই বড় গাড়ি চেপে তিনি যাবেন। আর সেই গাড়িটা তাঁর নিজের হবে। এর পরই নিজের দক্ষতা প্রমাণ করার জেদ চেপে যায় তাঁর।

তিনি প্রথম একটি মালয়ালম ফিল্মে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন পরিচালক বিনু চক্রবর্তী। এই পরিচালকই ছিলেন সিল্কের মেন্টর।

কী ভাবে কথা বলতে হয়, কী ভাবে চলতে হয়, সব কিছু বিনু এবং তার স্ত্রী নিজে হাতে সিল্ককে শিখিয়েছিলেন।

তাদের কাছেই সিল্ক ইংরেজিতে কথা বলতে শেখেন সিল্ক। নাচও শেখেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সিল্কের শরীরী ভাষা একেবারে বদলে যায়।

১৯৮০-র তামিল ছবি ‘বন্দিচক্করম’ ছিল তার প্রথম ফিল্ম, যাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ফিল্মে তিনি এক জন বার গার্ল হয়েছিলেন। এবং তার চরিত্রের নাম হয়েছিল 'সিল্ক'। সেই থেকেই তিনি 'সিল্ক স্মিতা'।

নিজের অভিনয় দিয়ে সিল্ক এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন যে, কোনও ফিল্মে   তার একটি আইটেম ডান্স ঢুকিয়ে দিলেই সেই ফিল্ম   হিট হয়ে যেত।

তবে তার ভক্তের সংখ্যা যতটা ছিল, তার বন্ধুর সংখ্যা ততটাই কম ছিল। কম কথা বলা সিল্কের হাতেগোনা কয়েক জন বন্ধু ছিলেন। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, সিল্ক ছিলেন শিশুর মতো নরম মনের মানুষ।

১৯৯৬ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর কেরিয়ারের শীর্ষে থাকার সময় আচমকাই তার মৃত্যু হয়। পুলিশের খাতায় তা নেহাতই সুইসাইডের তকমা পেলেও ইন্ডাস্ট্রিতে আজও গুঞ্জন, তাকে খুন করা হয়েছিল। ২৪ বছর পরও তাঁর মৃত্যু রহস্যই থেকে গিয়েছে।

মৃত্যুর আগে তার এক বন্ধুকে ফোন করে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন তিনি। তার বন্ধু যত ক্ষণে পৌঁছান, তত ক্ষণে সিল্কের মৃত্যু হয়েছিল। ময়নাতদন্তে তার শরীরে প্রচুর অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছিল। তিনি আত্মঘাতী হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ। যদিও এই তত্ত্ব মানতে চাননি অনেকেই। আজও সিল্কের মৃত্যু রহস্যে মোড়া।

সুত্র-আনন্দবাজারপত্রিকা 

আমারসংবাদ/এডি