Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

শুভর হাত ধরে বাংলা সিনেমার শুভ যাত্রা শুরু

বিনোদন ডেস্ক

ডিসেম্বর ৪, ২০২১, ০৭:৩০ এএম


শুভর হাত ধরে বাংলা সিনেমার শুভ যাত্রা শুরু

মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গঠিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থায়নে বাংলাদেশে একটি জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়।  ‘ফ্রি দ্যা ল্যান্ড ফর পিস’ নামের এই সংঘটন বিদেশী জঙ্গি সংগঠনগুলোর নজরে পরতে বাংলাদেশে কয়েকটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি নেয়। জিহাদের নামে কিশোর বয়সের ছেলেদের বিভিন্ন জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার করে এরা। সংগঠনটির সদস্যরা কিশোর এবং তরুন ছেলেদের আত্মঘাতী হতে উদ্ভূত করে।

এদিকে বিছিন্ন কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অর্থাৎ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘সিটিটিসি’। আর এই দলের নেতৃত্বে আছেন নাবিদ আল শাহরিয়ার। একটি ক্লুকে ধরে কয়েকটি সূত্র পায় নাবিদ। কিন্তু জঙ্গিদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন কোড ব্যবহার করে তথ্য এবং নির্দেশনা আদানপ্রধান হয়ে থাকে। নাবিদের সাথে এই তদন্তে কাজ করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সুমিত সেনগুপ্ত এবং ইরা । অন্যদিকে বাংলাদেশে এই জঙ্গি সংগঠনটির নেতৃত্বে আছে খালিদ। এরমধ্যে নাবিদকে একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন বহিষ্কৃত মাহবুব। মাহবুবের দেয়া একটি হুন্ডির তথ্যের সাথে বাংলাদেশে চলমান জঙ্গি হামলার একটি যোগসূত্র খোঁজে পায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

বেশ কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা এবং কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করলেও এই হামলার পুরো পরিকল্পনা আর পিছনের পরিকল্পনাকারীরা অধরাই থেকে যায় পুলিশের কাছে। 

কিন্তু পুলিশ হাল ছাড়ে না। এই জঙ্গি সংগঠনটির বিভিন্ন অপারেশনকে প্রতিহত করতে সব রকমের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে তারা। যে কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘ফ্রি দ্যা ল্যান্ড ফর পিস’ সংগঠনটির নেতাকে খুঁজতে যখন ব্যস্ত থাকে পুলিশ তখন দেখা গেছে এই পুরো পরিকল্পনার পিছনে আছে দুবাইয়ে অবস্থানরত খান নামের এক মাষ্টার মাইন্ড। পুলিশ কি পারবে তাদের সব হামলা প্রতিহত করতে? আর এই ধারাবাহিক হামলার পরিকল্পনাকারীদের খোঁজে বের করতে? 

এই বিশাল ধামাকার জন্য কি পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা? নাবিদ এবং তার টিম কি পারবে এরকম একটি পরিকল্পিত এবং ভয়ংকর হামলা থেকে দেশকে বাঁচাতে? 

এই প্রশ্নগুলোর দেবে সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত সিনেমা মিশন এক্সট্রিম । এই সিনেমায় মুখ্য ভুমিকায় অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, তাসকিন রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, সাদিয়া নাবিলাসহ অনেকে।

এর আগে আরিফিন শুভ অভিনীত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমাটি দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। ওই সিনেমাটির গল্প লিখেছিলেন সানি সানোয়ার। তাই আবারও যখন সানি আর শুভ একসাথে তাই দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল দ্বীগুন। প্রত্যাশা সবটুকু পূরণ করতে না পারলেও অনেকাংশেই তা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করেছেন। 

দুই পর্বের এই সিনেমাটির প্রথম পর্বের গল্প জুড়ে ছিলো প্রেক্ষাপট নির্মানের। গল্পকে সাজাতে কয়েকভাগে ঘটনাগুলোকে সাজিয়েছেন সানি। দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে একই ধারাবাহিক পথ অনুসরণ করে এগিয়েছে সিনেমাটির গল্প।

গল্পের মত সিনেমাটির চিত্রনাট্যেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সানী সানোয়ার। প্রথম দৃশ্য থেকে পুলিশের বিভিন্ন অভিযানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে নিজের সেরাটা দিয়েছেন সানী। চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রে সিনেমাটির প্রধান আকর্ষন হচ্ছে অ্যাকশন দৃশ্যগুলো। এছাড়া সিনেমাটির গল্পের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এগিয়েছে চিত্রনাট্য। আর চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রে একটি দিক বেশ লক্ষণীয় ছিলো, তা হলো বিভিন্ন দৃশ্যে পণ্যের উপস্থাপনা। বেশ কয়েকটি পণ্যের উপস্থাপনা দেখা গেছে সিনেমাটিতে আর তীক্ষ্ণ চিত্রনাট্যে সেগুলো সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এই লেখক।

একটি বিগ বাজেটের এবং স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সিনেমা নির্মানের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। একটু এদিক সেদিক হলেই হামলার মামলার হুমকি তো থেকেই যাই। বলিউডে যে ঘটনা গুলো হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের সুনিপুণ নির্দেশনা সিনেমাটিকে দিয়েছে এক অন্য রূপ। 

‘মিশন এক্সট্রিম’ শুরু থেকেই আরিফিন শুভর সিনেমা। আর এরকম একটি বিগ বাজেটের সিনেমায় তার উপর নির্মাতাদের আস্থার প্রতিদান দিতে কোন কার্পোন্য করেননি এই অভিনেতা। পুরো সিনেমা জুড়ে দুর্দান্ত অভিনয় আর শারীরিক ভাষা দিয়ে সিনেমাটিকে অন্য এক মাত্রা দিয়েছেন আরিফিন শুভ। 

কখনও সে দেশরক্ষায় অবিচল এক সৈনিক, কখনও সে একজন রোমান্টিক প্রেমিক, আবার কখনও একজন আন্তরিক সহকর্মী। সব জায়গায় সাবলীল ছিলেন আরিফিন শুভ। 

তবে সিনেমায় শুভর বিপরীতে অভিনয় করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। চরিত্রের ব্যাপ্তি বিবেচনায় শুভর সাথে প্রেম, খুনসুটি এবং গান ছাড়া তার তেমন কিছুই করার ছিলো না। এক কথায় গ্লামার শোপিস হয়েই রয়ে গেছেন ঐশী। 

অন্যদিকে, ইরা চরিত্রে অভিনয়কারী সাদিয়া নাবিলাকে দেখে বহু নারী পুলিশে যোগ দিতে উৎসাহী হবেন, এটা নিশ্চিত। অত্যন্ত স্মার্ট এবং আলগা ন্যাকামিবিহীন, সাবলীল অভিনয় ছিল তাঁর। আমাদের সমাজে একজন পেশাজীবী নারীকে কি ধরণের সামাজিক চাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, এটা তাঁর চরিত্রের মাধ্যমে ছোট করে হলেও ফুটে উঠেছে। সত্যি বলতে কি, নায়িকার তুলনায় তাঁর চরিত্রটি অনেক বেশি বিকশিত হয়েছে।

তাসকিন বরাবরের মতই ছিলেন দুর্দান্ত। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে সিনেমার পর্দায় হাজির হওয়া এই অভিনেতা একই ধাঁচের চরিত্রে আবারো দর্শক মাত করেছেন। একটি জঙ্গি সংঘটনের নেতা হিসেবে যে কঠোরতা এবং প্রভাব বিস্তার করার মত অভিব্যাক্তি দরকার ছিলো সেখানে তাসকিন ছিলেন অনন্য। এছাড়া শতাব্দী ওয়াদুদ ছিলেন উল্লেখ করার মত। একজন বহিষ্কৃত পুলিশ কর্মাকর্তা হয়েও তার আগের দলের সাথে কাজ করতে দেখা গেছে তাকে। একজন শক্তিমান অভিনেতার পরিচয় আরো একবার দিলেন তিনি। এছাড়া মিজান, ইরেশ জাকের, ফয়জুর রহমান বাবু সহ একঝাক অভিনেতাকে দেখা গেছে বিভিন্ন চরিত্রে। এই প্রত্যেক অভিনেতাই তাদের নিজেদের চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন।

এই সিনেমার বেশীরভাগ অংশের দৃশ্যধারন হয়েছে ঢাকাতে। সুদীপ্ত মুজুমদার তার কাজটি করেছেন অসাধারণ দক্ষতার সাথে। জঙ্গিদের পিছনে পুলিশের ধাওয়ার দৃশ্যগুলো উঠে এসেছে সুদীপ্তের ক্যামেরায় সুন্দরভাবে। অন্যদিকে দুই পর্বের এই সিনেমাটির প্রথম পর্বটি কাহিনী এবং প্রেক্ষাপট নির্মানের পিছনে গেছে। এরকম থ্রিলারধর্মী একটি গল্পকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলে পরের পর্বের জন্য দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখার ক্ষেত্রে সম্পাদনায় তীক্ষ্ণতা জরুরী ছিলো। গল্প এবং চিত্রনাট্যের তুলনায় এক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে আছে সিনেমাটির সম্পাদক কামাল।

এই সিনেমা নিয়ে আরও একটি কথা বলতেই হবে একটি ভালো টিমের কথা। বাংলাদেশে সিনেমার প্রমোশোনের কালচারটা একদম নেই। সেই দেবীর সময় জয়ার নৈপুণ্য দেখা গিয়েছিল আর অনেকদিন পর ‘মিশন এক্সট্রিম’ এর টিমের সেই চেষ্টা লক্ষণীয়।

তবে এই কথা বলার অবকাশ নেই ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমা দিয়ে শুভর হাত ধরে ঢালিউডের  বাণিজ্যিক সিনেমার শুভ যাত্রা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই সিনেমার দূর্বল দিকগুলো নিয়েই আলোচনা করতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সিনেমা নতুন সূচনা। এই সিনেমাকে সাপোর্ট দিলে ভবিষতে আমাদের দেশেও বলিউড হলিউডের মতো সিনেমা উপহার দিতে সক্ষম হবে। এক কথাই বাংলা সিনেমার ভালো দিন আসছে। 

[embed]<iframe width="677" height="381" src="https://www.youtube.com/embed/4IMHA4yKsU8" title="YouTube video player" frameborder="0" allow="accelerometer; autoplay; clipboard-write; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture" allowfullscreen></iframe>[/embed]

আমারসংবাদ/এডি