Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

এবারের ফাগুন রক্তের দোলায় চেপে এলো

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫, ০৯:০৮ এএম


এবারের ফাগুন রক্তের দোলায় চেপে এলো

 

রক্তে মেখে বিবর্ণ হয়ে, বিভৎস রূপে ফাগুন এসেছিল আজ থেকে ৬৩ বছর আগে বুকের তাজা রক্তে ভিজে। শহীদের তালিকায় উঠে এসেছিল বীর বাঙালি রফিক শফিক, বরকত, সালাম, জব্বারের নাম। সেদিন  ভাই কে হারিয়েও মহান বিজয় এসেছিল বাঙালির হৃদয়ে, বাঙালির ভাষায়, বাঙালির জীবনে। সেদিন ভাইকে হারিয়েও সেদিনের ফাগুন ছিলনা এত বিমর্ষ, এত ক্লান্ত, এত বিবর্ণ।

 কিন্তু কালের বিবর্তনে পাঁচ যুগ পরে ২০১৫ তে ফাগুন এল বড় ক্লান্ত, বড় করুণ, বড় বিমর্ষ, বড় আহত  হয়ে। ফাগুন এলো এবার জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে, ছাঁই হয়ে। এবারের ফাগুন এলো নিস্পাপ শিশুর ক্রন্দনে মিশে বড় ক্ষীন হয়ে। তাইতো এবারে লজ্জায় মুখ ঢেকেছে শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া। বাসন্তি রঙ এবার দেখা গেছে চলন্ত  বাসে বড় নিষ্ঠুর আচরণে। তাই বুঝি শ্বাশ্বত বাঙালি  নারী এবার কষ্ট পাবে বাসন্তি রঙে সেজে চির সুন্দর ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে। কি নিদারুণ এক ভয়ঙ্কর মুহূর্তে এলো এবারের বসন্ত।

কেমনে করিব বরণ ভেবে হই দিশেহারা। এবার কোকিল মুখ লুকিয়েছে লজ্জায়, ভুলে গেছে মধুর সুর তাইতো এবারের ফাগুন বড় নিরস, এত বেমানান। বারো মাসের তের পার্বনের এই সোনার বাংলাদেশে লাখো কোটি চেয়ে থাকে বসন্তকে বরণ করে নিতে। বসন্তের এক চিলতে হাওয়া তনুতে মাখতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। বসন্তকে বরণ করে নিতে ছোট  বড় সকলেই  মুখিয়ে থাকে বাসন্তি রঙের পোষাকে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য।

কিন্তু বড় হতভাগা আমরা এই বাঙালি জাতি  যুগে যুগে শুধু কষ্টই পেয়ে গেলাম যুগ থেকে যুগান্তরে। বারবার দুর্যোগের ঘনঘটা এ জাতিকে করে তুলেছে শত বৎসর ধরে নিঃস্ব। কে জানত হঠাৎ করে মহা দুর্যোগে পড়ে যাব আমরা। শিশু আতঙ্কে আছে বাসন্তি  রঙের তপ্ত অগ্নিতে। এক বুক ভয় আর দুশ্চিন্তা নিয়ে পারবে কি কখনও সোনার টুকরো শিশুরা। শিশুরা হাসলে হাসে প্রকৃতি, শিশু হাসলে হাসে আমার মা, শিশু হাসলে হাসে সৃষ্টিকর্তা। সেই শিশু আজ ফাগুনের মাসে যেন ভুলতে বসেছে চির সুন্দর নান্দনিক হাসিকে। ঘর থেকে বের হবে কি আমার বাঙলার চির সুন্দর শাশ্বত মায়েরা- বোনেরা বসন্তকে বরণ করে নিতে? বসন্ত কি আমরা হারিয়ে ফেলব কোন একদিন? বিরহ কেন আসে বারবার এই ফাগুনে ঋতু রাজ  বসন্তে। ১৯৭১ এই বসন্তেইতো এসেছিল মহা দুর্যোগ। এই  বসন্তেইতো হত্যা করা হয়েছিল পুলিশ, ছাত্র, ছাত্রী, নিরীহ জনগণকে। এই বসন্তেইতো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করা হয়েছিল বাসন্তি রঙের আগুন দিয়ে  সারা বাংলা। বসন্ত আমাদের হৃদয়কে  করে তোলে শৈল্পীক, করে তোলে কাব্যিক, করে তোলে ছান্দিক অথচ এই বসন্তেই যত বিপর্যয়।

 তাহলে কি বসন্তকে বলে দেব হে বসন্ত তুমি এসোনা আর বাঙলার দার প্রান্তে। যদি আস তাহলে তুমি জলে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাবে বাসন্তি রঙা আগুনে। বড় কষ্ট হয়  এ জাতির ভাগ্য বিড়ম্বনা দেখে। আমরা কেন হোলাম এত হতভাগা? আমরা কেন হই বারবার নিপিড়িত নির্যাতিত? আমরা বারবার কেন হই প্রতারিত? শত প্রশ্ন যখন উত্তরের আশায় আষ্টে-পিষ্টে জাপটে ধরে তখন হয়ে যায় যেন ব্যর্থ। এত প্রশ্নের উত্তর শুধু আমি কেন কোন নন্দিত কবি সাহিত্যিকেরও ক্ষমতা  হবে না জবাব দেওয়ার। বিশ্ব কবি বড় আনন্দে লিখেছিলেন-“ আহা আজি এ  বসন্তে কত ফুল ফোটে কত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে..। কবি গুরু বেঁচে থাকলে হয়ত এ গান আর লিখতেন না। ফাগুন আসুক, ফাগুন আসবে প্রকৃতির নিয়মে। ফাগুন তো নিয়ে আসেনা কোন যুদ্ধ, কোন সংঘর্ষ, কোন পেট্রল বোমা। ফাগুন নিয়ে আসে রঙ আর র্সূ আর আমরা যারা অমানুষ, মানুষরূপি দানব তারইতো নিয়ে আসি বারবার যত দুর্যোগ। হে ঋতুরাজ বসন্ত তুমি ক্ষমা কর আমাদের কারণ তোমার আগমনে আমরা ব্যর্থ হই তোমাকে শ্রদ্ধা জানাতে।