Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মৌমাছির তাড়ায় ধরাশায়ী পুলিশ!

মার্চ ৫, ২০১৫, ০১:১৯ পিএম


মৌমাছির তাড়ায় ধরাশায়ী পুলিশ!

বটতলার ছিমছাম ছায়ায় দাঁড়িয়ে হাঁক পেড়েছিলেন তিনি অমন পা কেতরে দাঁড়িয়ে কেন সবাই, অ্যালার্ট...গাড়ি যেন ফস্কে না যায়। বেলা বারোটার ফাগুন-রোদ্দুর গনগন করছে। বটতলার ছায়াটুকুই যা স্বস্তি। পাঁচ কনস্টেবল নিয়ে ঘাড় আর কলারের মাঝে রুমালটা জুতসই করে গুঁজে ডিউটি ধরেছিলেন কালনা থানার এএসআই সুবীর গুহ মজুমদার। দেড় হাত লম্বা আধ ময়লা সেই রুমাল, ঘাড় থেকে নামিয়ে অচিরেই যে তাকে ঢাল-তরোয়ালের মতো বন বন করে ঘোরাতে হবে, কস্মিনকালেও ভাবেননি তিনি। বুধবার দুপুরের এই নির্ভেজাল ডিউটি পর্বে, খান তিনেক গাড়ি আটকে, নাকের ডগায় চশমা নামিয়ে তাদের কাগজ দেখে ছাড় দিয়ে কিঞ্চিৎ বিরক্তি হয়েই দূরের পেট মোটা টলোমলো লরিটার দিকে নজর রেখেছিলেন খিটখিটে সুবীর। হুঙ্কার ছেড়ে ছিলেন, এ ব্যাটাকে ছাড় নেই। বিপত্তিটা ঘটল ঠিক তখনই।

প্রথমটা সুড়ুৎ করে নাকের সামনে দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। পরের-টাও তাই। মাল বোঝাই লরি ততক্ষণে কিছুটা এগিয়ে এসেছে। সঙ্গে সোঁসোঁ...চোখ কুঁচকে তিনি ঠাওর করার চেষ্টা করছিলেন শব্দটা কিসের। উত্তরটা প্রথম মালুম হলো তার ঘাড়ে। তারপরেই কানের লতিতে। তারপর পিঠে...ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই সুবীরবাবু দেখলেন কালো একটা মেঘ ফাগুনের রোদ ঢেকে ধেয়ে আসছে তার দিকে। মৌমাছির ঝাঁক। পিছু ফিরে দেখেন, সঙ্গী কনস্টেবলরা দুদ্দাড় ছুটছেন, যে যে দিকে পারেন। হুগলি-বর্ধমান সীমানায় মাঠের পাড়ার সেই ছায়াছন্ন গাছতলা তখন সুনসান।

তার ভিতর থেকেও কেউ যেন নির্দেশ দেয়ভাগ সুবীর ভাগ। আর দেরি করেননি তিনি। পিচ রাস্তা ধরেই ছটুতে থাকেন সদানিষ্ঠ সুবারবাবু। হাতের কাগজপত্র উড়ল হাওয়ায়। টুপি গেল উড়ে। ঘাড়ের রুমাল মাথার উপর বন বন ঘুরিয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাতে কী রক্ষা হয়, মৌমাছির ঝাঁক তার সর্বাঙ্গে ফোটাতে থাকে হুল। লরি পিছনে ফেলে রাস্তা ধরে ছুটতে থাকেন তিনি। সঙ্গে চিৎকার, উরে বাবা রে, হেল্প হেল্প, এই তোরা কোথায় গেলি রে...। কনস্টেবলকুল অবশ্য সুবীরবাবুর আর্তিতে সাড়া দেওয়ার সময় পাননি। যে যে দিকে পারেন, প্রাণভয়ে ছুটছেন যে তারাও। রাস্তা ধরে খানিক ছুটে আচমকাই মনে পড়ে, মৌমাছি তাড়া করলে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হয়। তেতে ওঠা পিচ রাস্তাতেই সটান শুয়ে পড়ে গড়াতে থাকেন তিনি।

হাত বিশেক দূরে লরিটা ব্রেক কষে দাঁড়ায় তখনই। লরি চালক বলছেন, উর্দি পরা অফিসার, কথা নেই বার্তা নেই আমার লরির আগে আগে ছুটছেন কেন, প্রথমে বুঝতেই পারিনি। তার পর দেখি মাটিতে গড়াগড়ি দিতে শুরু করলেন। লরি থামিয়ে আমি খালাসিকে দেখতে পাঠাই। খালাসি ছেলেটি কাছে যেতেই বুঝতে পারে, ব্যাপার গুরুতর। মৌমাছির অ্যাটাক। তড়িঘড়ি সুবীরবাবুকে তুলে নেন তিনি লরিতে। তার পর ছুটিয়ে দেন গাড়ি। প্রায় তিন কিলোমিটার গিয়ে ছায়া দেখে লরি থামিয়ে সুবীরবাবুকে একটা গাছতলায় বসিয়ে খবর দেওয়া হয় কালনা থানায়। মিনিট পনেরোর মধ্যেই থানার পুলিশকর্মীরা এসে উদ্ধার করে নিয়ে যান তাকে। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। মহকুমা হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তার। চোখ মুখ ফুলে গিয়েছিল। আর একটু দেরি হলে কাণ্ড ঘটত।

সুবীরবাবু একা নন। এদিন দুপুরের মৌমাছির হানায় কম-বেশি জখম হয়েছেন আরও চার পুলিশ কর্মী। আশপাশের মাঠে কাজ করছিলেন স্থানীয় আমতলা গ্রামের কপিল শেখ আর টোটন শেখ। হুল বিঁধেছে তাদেরও। তবে সুবীরবাবুর মতো নয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি শুধু বলছেন, পুলিশের চাকরি তো, ঢের হ্যাপা সামলেছি। তবে এমন পাল্টা অ্যাটাক-এর মুখে পড়িনি বুঝলেন, ডেডলি!