Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আট আনায় ডালপুরি! (ভিডিও)

ডিসেম্বর ২২, ২০২০, ০৩:৪০ পিএম


আট আনায় ডালপুরি! (ভিডিও)

আপনি হয়তো ভাবছেন আমি পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করছি! বলছি অবিভক্ত ভারত-পাকিস্তান কিংবা ব্রিটিশ আমলের কোনো কাহিনি। যেকালে টাকায় নয়, আনায় হিসাব হতো। আমাদের বাপ-দাদা কিংবা পর দাদাদের মুখে শোনা যেতো কত আনায় কত কি পাওয়া যেতো।

এখন দিন পাল্টেছে, এক টাকায় আইসক্রিম চকলেটও মেলে না বদলে যাওয়া মধ্যম আয়ের বঙ্গদেশে! দুইয়েক টাকা ভিক্ষা দিলে ফকিরের মুখ ভারি হয়, অনেক সময় শুনতে হয় গালমন্দও! দেশের সব চেয়ে সুন্দর দুটাকার নোটটিও আজ হয়ে গেছে সেন্টার ফ্রুট বা লাভ কেন্ডি। সেই আধুনিক যুগে এসে ৫০ পয়সায় পুরি ও এক টাকার পিঁয়াজু কি আদৌ সম্ভব ? জ্বি হ্যাঁ- বিষয়টি নিখাঁদ সত্য এবং আপনি চাইলেই ৫০ পয়সার বিনিময়ে পাবেন ছোট্ট আকৃতির সুস্বাদু একটি ডালপুরি ও এক টাকার বিনিময়ে মিলবে একটি পিঁয়াজু । 

আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে মানিক ভাণ্ডারীর বাবা ফয়েজউদ্দিন নিত্যপণ্যের দোকান করতেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া বাজারে। বাবা মারা যাওয়ার পর শহরের নাখালপাড়ার এক ১০ বছরের পুরি-পেঁয়াজুর কারিগরের পরামর্শে মানিক ভাণ্ডারী চালু করেন এই দোকানটি। ২৫ বছরে দেশ পাল্টেছে অনেক। কিন্তু পাল্টায়নি মানিক ভাণ্ডারীর পুরির দাম। এখনো সেই শুরুর ৫০ পয়সায়ই বিক্রি হয় পুরি। 

মানিক ভাণ্ডারী জানান, প্রতিদিন পাঁচ কেজি ময়দার পুরি বিক্রি করেন তিনি। পরিচ্ছন্ন আলু ও ডালের মিশ্রণে পুরি আর পেঁয়াজু তৈরি হয় শীল-পাটায় বাটা খেসারির ডাল ও দেশি পেঁয়াজ কুচি দিয়ে। পেঁয়াজের দাম যখন ২০০ টাকা তখনো তিনি দেশি পেঁয়াজেই পেঁয়াজু বিক্রি করেছেন। দিনে দিনে ৩০০ টাকার দোকান ভাড়া বেড়ে হয়েছে ২৫০০ টাকা, কর্মচারীর মাসিক ৫০০ টাকার বেতন এখন দৈনিক খরচ। 

দৈনিক, যুগের বিবর্তনে কাঁচামালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পুরির দাম আজো ৫০ পয়সাতেই আটকে রেখেছেন তিনি। যুগের সাথে নিজের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শুধু আকৃতির পরিবর্তন করেছে মাত্র কিন্তু দাম বাড়াননি ।

এতো কম দামে বিক্রি করে পোষায় নাকি— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমার দোকানে বেচা-কেনা ভালো। সকালে ডাল-পরোটা, বিকালে পুরি-পেঁয়াজু বিক্রি হয়। দোকানে একজন কর্মচারী ছাড়াও আমার ছোট ছেলে কাজে সহায়তা করে। আশা করি ছোট ছেলেই আমার ব্যবসাটা ধরে রাখবে।

মোহাম্মদপুর থেকে আসা সাদ উদ্দিন বলেন, তার ছোট বোনের কাছে শুনে তাকেসহ পাঁচজন এই পুরির স্বাদ নিতে এসেছি। খেয়ে ভালোই লাগছে। সরিষা বাটা, ধনে পাতা, কাঁচামরিচ, দই, তেঁতুল, চিনি মিশ্রিত টকের সাথে সালাদটাও দারুণ লেগেছে। 

মিরপুর থেকে আসা তানভীর বলেন, ৫০ পয়সা যেখানে ফকির নেয় না এমনকি ব্যাংকও নেয় না সেখানে পঞ্চাশ পয়সায় পুরি! ভাবাই যায় না। খেয়ে ভালো লেগেছে। তাই বাসার জন্যও নিয়ে নিলাম।

মানিক ভাণ্ডারির আট আনার পুরির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। প্রতিদিনই বাড়ছে অচেনা ক্রেতার সংখ্যা। ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলেও ছেলে ব্যবসাটা চালিয়ে নেবে বলে তার বিশ্বাস।

[embed]<iframe width="640" height="360" src="https://www.youtube.com/embed/VPY5i1_C1Eg" frameborder="0" allow="accelerometer; autoplay; clipboard-write; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture" allowfullscreen></iframe>[/embed]

আমারসংবাদ/এমআর