Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রচারপত্রেই সীমাবদ্ধ ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’

মার্চ ২৪, ২০২১, ০৮:২০ এএম


প্রচারপত্রেই সীমাবদ্ধ ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’

বছর পেরিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখোমুখি বাংলাদেশ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের হার দ্বিগুণ গতিতে বৃদ্ধি পেলেও জনসচেতনতা সে অনুযায়ী বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমেছে। করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাস্ক পরার বিকল্প নেই বার বার সর্তক করে সরকারি ভাবে বলা হলেও মানছেন না সাধারণ মানুষ। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে হাসপাতালে হিমশিম অবস্থা। শয্যা সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুন রোগী ভর্তি হাসপাতাল গুলোতে। 

এক সপ্তাহ পূর্বে যেখানে এক হাজার ৮৬৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল তিন হাজার ৫৫৪ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত আট মাসের মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হলো। তবুও সচেতন হচ্ছে না রাজধানীতে অবস্থানকারী স্থায়ী, অস্থায়ী বাসিন্দারা। বিশেষ করে গণপরিবহনে, খোলা বাজারে, বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে। মাস্ক পরা, আত্মসচেতনতার অভাবেই করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

গণপরিবহনে, বাজারসহ সব খানে 'নো মাস্ক, নো সার্ভিস' এর প্রচারণাপত্র লেখা থাকলেও মানছেন না কেউই। করোনার প্রথম দিকে এ প্রচারণা কিছুটা মেনে চললেও দিন যত বাড়ছে মাস্ক পড়ার উদাসিনতা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তায় চলাচলে, গণপরিবহন ব্যবহারে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মাঠে নামে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে মাস্ক ব্যবহার না করলে জরিমানার আওতায় আনা হলেও সাধারণ মানুষের মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না মাস্ক পরার তোড়জোড়। প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বাংলাদেশে তা মানা হচ্ছে কমই।

রাজধানীর ঢাকার রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালি, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ি, গুলিস্তান এলাকায় ঘুরে দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। গণপরিবহনের শ্রমিক ও যাত্রী, হাটবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় উপাসনালয়ে আগত ব্যক্তি, পথচারীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা দেখা গেছে। অনেকেই আবার মুখে নয় থুতনির মধ্যে মাস্ক পরছেন, পুলিশের সামনে আসলেই মুখে উঠাচ্ছেন।

রাজধানীর সরকারি হাসপাতাল গুলোতেও রোগীদের মাস্ক পরায় উদাসিনতা দেখা গিয়েছে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীর মুখেই মাস্ক এর উপস্থিতি দেখা যায়নি। 

মাস্ক না পরা কয়েকজন রোগীর সাথে কথা হলেন তারা বলেন, মাস্ক আছে তবে পকেটে। ডাক্তারের রুমে ডুকার সময় পরে গেছি। সব সময় কেনো পরেন না সে সর্ম্পকে তারা বলেন, মাস্ক পরলে গরম লাগে। মাঝে মাঝে পড়ি। মাঝে মাঝে খুলে রাখি।

আকরাম আলী রামপুরা কাঁচা বাজার এলাকার একজন মুদি দোকানদার। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানদারি করেন। তবে মাস্ক পরেন না। তার দোকানে আগত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্রেতাদের মুখেও মাস্ক নেই। তার মতে, মাস্ক পরলে গরম লাগে। 

তিনি বলেন, মাস্ক পরলে অনেক বেশি গরম লাগে। আবার কাস্টমারদের সাথে কথা বলতে সমস্যা হয়। কাস্টমার কথা বুঝে না তাই মাস্ক পরি না।

গণপরিবহনে 'নো মাস্ক, নো সার্ভিস' লেখা থাকলেও যাত্রীদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। শুধু যাত্রী নয় বাসের অনেক চালক, হেল্পারদের মুখেও নেই মাস্ক। 

'নো মাস্ক, নো সার্ভিস' লেখা থাকলেও মাস্ক ছাড়া কেনা সার্ভিস দিচ্ছেন সে সর্ম্পকে তারা বলেন, মাস্ক না পরলে তো আর আমরা জোর করতে পারি না। আমাদের তো যাত্রী নিতে হবে না হলে বেতন পামু কেমনে। বেশির ভাগ যাত্রীই মাস্ক পরে না। কয়জনরে আটকামু। 'আপনার মুখে মাস্ক নেই কেনো' জিগ্যেস করলে হেল্পার বলেন, গরম লাগে তাই খুলে পকেটে রাখছি।

রাজধানীর বস্তি এলাকা গুলোতে মাস্ক পরার উদাসিনতা আরো ভয়াবহ, কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকায় পথে বসবাসরত কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাগো মাস্ক পরন লাগবো না। আমাগো করোনা হইবো না। করোনা বড় লোকদের রোগ। আমরা রাস্তায় থাকি, গরিব মানুষ আমাগো হইবো না। পুলিশও আমাগো কিছু কয় না। মাস্ক কিনার পয়সা দিয়া আমরা ভাত খাই। এত পয়সা কই পামু।

তবে বিশ্লেষক ও চিকিৎকরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরার কোন বিকল্প নেই। মাস্ক পরার উদাসিনতাই করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবেই করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকা যাবে। 

আমারসংবাদ/কেএস