Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

আজও অমীমাংসিত রহস্য 'এপ্রিল ফুল'

আমার সংবাদ ডেস্ক

এপ্রিল ১, ২০২১, ০৫:৪০ এএম


আজও অমীমাংসিত রহস্য 'এপ্রিল ফুল'

ভাবুন তো, সকাল সকাল আপনার কাছে ফোন এলো, আর আপনি খবর পেলেন আপনার বন্ধুর দুর্ঘটনা হয়েছে। সাথে সাথে সেখানে ছুটে গেলেন আপনি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর দেখলেন আপনার বন্ধু সম্পুর্ণ সুস্থ, আর সবাই বলে উঠলো এপ্রিল ফুল। এই সময় ঠিক কেমন অনুভূতি হবে আপনার!

প্রতিবছরই আমরা এইরকম ভাবে বন্ধুকে বোকা বানানোর ছক কষে থাকি, কিংবা কখনও কখনও অন্যের ছকে পা দিয়ে বোকা সেজে বসি। বন্ধুদের মাঝে সব সময় এই বোকা বানানোর খেলা চললেও, এপ্রিলের প্রথম দিনটাই বোকা বানানোর উৎসব ভেবে বোকা বানানো হয়। 

তবে জানেন কী এপ্রিলের প্রথম দিনটাই কেন সারা বিশ্বের বোকা হওয়ার দিন?

বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালন করা হলেও এ দিবসের উৎপত্তি আজও রহস্যময়। ইতিহাস খুঁজে  এপ্রিল ফুলের উৎপত্তি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।  তবে বিভিন্ন দেশের প্রাচীন সাহিত্যে থেকে এপ্রিল ফুল সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। 

ইউরোপীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি দিন এটি। দিনটিতে পশ্চিমা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমও ভুয়া ও ভূল সংবাদ সরবরাহের মাধ্যমে এপ্রিল ফুল পালন করে থাকেন। অবশ্য তারপরের দিনই, সেই ভূল সংবাদ সম্পর্কে পুনরায় জানিয়ে দেওয়া হয়।

সর্বপ্রথম ১৩৯২ সালে ইংরেজী সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি জিওফ্রি চচারের “দি কেন্টারবেরী টেলস” কাব্যে এপ্রিল মাসের প্রথম তারিখ এবং বোকামির একটা যোগসূত্র পাওয়া যায়। যদিও এই তথ্য নিয়েও বিতর্ক দেখা যায়।

এছাড়া ১৫০৮ সালে ফরাসী লেখক এলোয় এম্যাবেল তার লেখায়, এপ্রিলের ১ তারিখকে ছুটির দিন হিসেবে উল্লেখ করেন। আর দিনটিকে “ফিস অব এপ্রিল” নামে অভিহিত করেন। আবার ১৬৮৬ সালে বৃটিশ কবি জন অব্রে এ দিনটিকে সরাসরি “ফুলস হলি ডে” বা বোকাদের ছুটির দিন বলে অবিহিত করেন।

তবে ১৬৯৮ সালে এপ্রিল ফুলের ইতিহাসে সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে। এবছরের ১লা এপ্রিল ইংল্যান্ডের টাওয়ার অব লন্ডনে “ওয়াশিং দ্যা লায়ন্স” অনুষ্ঠান দেখানোর নাম করে টিকিট বিক্রি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে হাজারো দর্শক নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে ভীড় করে এবং দেখে সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজনের নামমাত্র নেই। এভাবে সেদিন হাজারো মানুষকে বোকা বানানো হয়। ইংল্যান্ডের অনেক মানুষ, এ ঘটনা থেকেই “এপ্রিল ফুলের” উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন।

এছাড়াও মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে মার্চের শেষের দিকে (মার্চের ২৫তারিখ) নতুন বছর উদযাপন করা হতো। এছাড়া ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায়ও মার্চে নিউ ইয়ার উদযাপনের পাশাপাশি এপ্রিলের ১তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী ছুটি থাকতো। এসময় জানুয়ারির ১ তারিখ নতুন বছর উদযাপনকারী ব্যক্তিরা মার্চে নতুন বছর উদযাপনকারীদের “এপ্রিল ফুল” নামে অভিহিত করতো।

তবে উপরোল্লিখিত মতের বাইরে আরো একটি  মত রয়েছে “এপ্রিল ফুল”র ইতিহাস নিয়ে। অনেকেই মনে করে থাকেন, ১৪৯২ সালে রাজা ফার্দিনান্দ স্পেনের মুসলিম অদ্যুষিত গ্রানাডার অভিমুখে হামলা করেন। এসময় ফার্দিনান্দ শহরের আশেপাশের সকল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। ফলে শহরের মুসলিমদের মাঝে মারাত্মক খাদ্য সংকট নেমে আসে এবং অচিরেই সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। 

দুর্ভিক্ষ যখন মারাত্মক অবস্থায় গিয়ে দাড়ায় তখন রাজা ফার্দিনান্দ ঘোষণা করেন যে, মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দিয়ে নিরস্ত্রভাবে মসজিদে আশ্রয় গ্রহন করে তবে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেওয়া হবে। এসময় দুর্দশাগ্রস্ত লাখো নারী ও পুরুষের কথা ভেবে খুলে দেওয়া হয় শহরের প্রধান ফটক এবং মুসলমানরা নিরস্ত্রভাবে শহরের মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেয়। 

এসময় খ্রীস্টান সৈন্যবাহিনী শহরে প্রবেশ করে মসজিদগুলোতে তালা আটকে দেয় এবং শহরের প্রত্যেকটি মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেয়। এঘটনায় লক্ষ লক্ষ মুসলিম নারী ও পুরুষ মর্মান্তিকভাবে মসজিদের ভেতর প্রাণ হারায়। এভাবে মুসলমানদের সহজভাবে বোকা বানানোর ঘটনাকে “এপ্রিলফুল” হিসেবে পালন করার রীতি চালু করে খ্রিষ্টান দেশগুলোতে।

তবে অনেকেই মনে করেন, ১৪৯২ সালের ঐদিন এমন কোনো ঘটনায় ঘটেনি। আর যে ঘটনাকে “এপ্রিল ফুল”র উৎপত্তির কারন মনে করা হয়, তা ঘটেছিল ঐ বছরের ২ রা জানুয়ারি।  

আবার বিশ্ববিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাও “এপ্রিল ফুল” নিয়ে ভিন্ন একটি মতামত পেশ করে। এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, এপ্রিলফুলের উৎপত্তি মূলত রোমান উৎসব হিলারিয়া থেকে। যা পালিত হতো ২৫মার্চ। এরপর ধীরে ধীরে ঐ উৎসব আশেপাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পরে। যার ধারবাহিকতায় আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে “এপ্রিল ফুল”।

এপ্রিল ফুল নিয়ে সবারই রয়েছে ভিন্ন ধারণা, ভিন্ন মত। কেউ কেউ এটিক কেবল মজার দিন ভেবে থাকেন। কার কাছে আবার এটি কালো ইতিহাসের স্বাক্ষী। তবে সব মিলিয়ে এপ্রিল ফুলের ইতিহাস একটি অমীমাংসিত রহস্য মাত্র। 

আমারসংবাদ/এডি