Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

টেড বান্ডি: রূপ ছিল তার হাতিয়ার, হত্যা ছিল নেশা

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ৫, ২০২১, ০৬:১০ এএম


টেড বান্ডি: রূপ ছিল তার হাতিয়ার, হত্যা ছিল নেশা

ভাবুন তো কোনো সুদর্শন পুরুষ যদি আপনার সামনে এসে সাহায্য চায়, এবং আপনি তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পর জানতে পারলেন সে আসলে নায়ক নয় খলনায়ক। কেমন অনুভূতি হবে সেই সময়! আজ এমনই এক খলনায়কের গল্প শুনবো যে কোনো গল্পের বই কিংবা সিনেমার খলনায়ক নয়, সে বাস্তব জীবনের খলনায়ক। যার গল্প শুনলে এখনো যে কোন মানুষেরই বুক কেঁপে উঠবে। যিনি ধর্ষণ করে হত্যা করতেন তরুণীদের এবং কখনো মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ ভক্ষনও করতেন ।

ছয় ফুট লম্বা নীলচোখা এক সুদর্শন পুরুষ‌। এক দেখায় যে কোনো তরুণীই প্রেমে পরে যেতেন তার। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই তিনি স্বীকার করে বেড়াতেন একের পর এক যুবতী নারী ‌। তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না এই সুদর্শন চেহারার পিছে লুকিয়ে আছে এক ভয়ানক ব্যক্তিত্ব। বলছি আমেরিকার কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির কথা । 

১৯৪৬ সালের ২৪ নভেম্বর আমেরিকার ভারমান্ড অঙ্গরাজ্যে রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন টেড বান্ডি। জন্মের সময় নাম ছিল থেও রবার্ট গোয়েল। তার মায়ের নাম ছিল এলিনন লুইস গোয়েল। তবে তার বাবার আসল পরিচয় কখনোই জানা যায়নি। ছোটবেলায় টেড অন্যদের মতই স্বাভাবিক ছিল। নিয়মিত র্চাচে যেতেন‌ এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি। স্কুল কলেজে সব ক্ষেত্রেই রেখেছেন নিজের প্রতিভার প্রমাণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে তাতে ভাটা পড়ে কিছুটা ।

টেডের ফাঁদে পড়ে অকালেই বলি হয়েছেন অনেকেই। দীর্ঘ চার বছর ধরে তিনি ধর্ষণ নৃশংসতার মতো হত্যা যজ্ঞ চালান। যার শিকার হয় প্রায় শতাধিক নারী। 

টেডের মতে তিনি প্রথম অপহরণ করেন ১৯৬৯ সালে। তবে প্রথম খুন করেন ১৯৭২ সালে। 

১৯৭৪ সালের ঘটনা। টেড দরজা ভেঙে ২১ বছর বয়সী ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লিন্ডায়ন হেলির ঘরে ঢোকেন এবং আঘাত করে তাকে অজ্ঞান করেন। পরে তাকে কাপড় পড়িয়ে বিছানা থেকে চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।পরদিন তার বন্ধুরা এসে, বালিশে শুধু রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর প্রায় প্রত্যেক মাসেই একজন করে ছাত্রী নিখোঁজ হতে থাকে প্রতিবারই টেড একই ভাবে অপহরণ করতেন ।

টেডের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল তার ভক্সওয়াগেনর দুটি গাড়ি যার একটি ইউটাতে তিনি কিনেছিলেন আরেকটি ফ্লোরিডা থেকে তিনি চুরি করেছিলেন‌। যেটি এখনও জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। তিনি হাতে প্লাস্টার করে হাত ভাঙ্গার অভিনয় করতেন এবং কোন তরুণীকে পেলে তার কাছে গাড়িতে মালামাল তুলে দেওয়ার নাম করে সাহায্য চাইতেন। তরুণীটি যখনই সরল মনে তাকে সাহায্য করতে গাড়িতে উঠতো। তখনি তাকে শিকারে পরিণত করতো টেড ।

সব সিরিয়াল কিলারেরই খুন করার আলাদা আলাদা প্রকৃতি থাকে। টেডের প্রকৃতিও ছিল ভিন্ন। তিনি শুরুতেই তরুণীকে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে অচেতন করতেন। এরপর গলা টিপে তাকে মেরে ফেলতেন। কখনো জীবন্ত নারীকে, কখনও আবার মৃত দেহকে ধর্ষন করতেন টেড। 

এই টেড কিন্তু প্রথমে ধরা পড়েছিল এক অভিনব কায়দায়। অতিরিক্ত জোরে গাড়ি চালানোয় এক ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামায়।  তারপর তার গাড়ি থেকে পাওয়া যায় এরকম হ্যান্ডক্রাফট আরও অনেক কিছু ।

এরপরে তাকে ডাকাত সন্দেহ করা হলেও সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। পরবর্তীতে তিনি ধরা পড়লেও কখনোই কোন উকিল নেননি বরং নিজের মামলা নিজে লরতেন। তবে তার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীও‌ রয়েছেন। ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছদ্মনামে ঘুরতে ঘুরতে একবার এক বার ওমেগা সরোরিটি হাউসে প্রবেশ করে দুই তরুণীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন টেড।

তাদের শরীরে বিভিন্ন সংবেদনশীল স্থানে কামড়ের দাগ পাওয়া যায়। কিন্তু আরোও দুই তরুণীকে আক্রমণ করলেও তারা সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় । তবে টেডের পাশবিক নির্যাতনের আঘাতের চিহ্ন তাদের বই নিয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। 

টেড পুলিশের কাছে ধরা পড়ে তার প্রেমিকার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। তার সব খুন প্রমাণ হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কথায় আছে ভালোবাসা অন্ধ। তাইতো টেডের চেহারার হাসিতে অনেক তরুণীর সব জেনেও তাকে চিঠি পাঠাতেন কেউ কেউ তো তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিত।

অবশেষে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে টেডের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তার শেষ কথা ছিল আমি আমার পরিবার আর বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে যেতে চাই। টেডের স্বীকারোক্তি পেলেও আজও কেউ জানে না কেন টেড এমন ভয়ানক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিল।

কি ছিল তার মাথায় সেই কৌতূহলবশত তার ব্রেইন খুলে পড়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় অপরাধে বিজ্ঞানীরা যদিও কিছু ধরা না পড়ায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর দেহাবশেষ সেই পাহাড়ের নির্গমন করা হয় যেখানে তিনি তার শিকার তরুণীর মৃতদেহ ফেলে আসতেন।

আমারসংবাদ/এডি