Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বাগদানের আংটি বানাতে খনি খুড়ে হীরা আনলেন তিনি

ফিচার ডেস্ক

জুন ৪, ২০২১, ১১:১০ এএম


বাগদানের আংটি বানাতে খনি খুড়ে হীরা আনলেন তিনি

নিজের হবু স্ত্রীর জন্য খনি থেকে সরাসরি হীরা বের করে আংটি বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন ওয়াশিংটনের এক প্রেমিক। কিন্তু তখন তিনি জানতেন না, এই স্বপ্ন একদিন বাস্তবে পরিণত হবে।

ক্রিশ্চিয়ান লিডেন নামের এই তরুণ জানান, বাগদানের জন্য নিজেই  খনি থেকে হীরা তোলার চিন্তাটা তার মাথায় এসেছিল স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। কিন্তু তিনি জানতেন না, কীভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও বুঝতে পারলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নিখাদ হীরা খুঁজে পাওয়া কতটা কঠিন।

তবে লিডেনের সহকর্মী তাকে আরকানসাসের ডায়মন্ডস স্টেট পার্কের একটি গর্তের কথা বলেন। লিডেন গত দুই বছর ধরে তার প্রেমিকা ডেজিরার সঙ্গে আছেন এবং তিনি তাকেই আংটিটা দিতে চেয়েছিলেন।

লিডেন বলেন, ‘সে সময়ই আমি এই ট্রিপের পরিকল্পনা শুরু করি এবং বুঝতে পারি, এটা আসলে সম্ভব। তাই আমি হীরার ব্যাপারে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করি।’

ওই পার্কে এর আগে যেসব ব্যক্তি হীরা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছেন, লিডেন তাদের ভিডিও দেখতে শুরু করেন এবং যতটা  সম্ভব তথ্য জোগাড় করেন। লিডেনের এই পরিকল্পনা একদম শুরু থেকেই জানতেন তার বন্ধু জশ, তাই তিনিও এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণে সঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রেমিকা যখন কর্মস্থলে ছিলেন, লিডেন তখন নিজেদের খনন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করে রাখেন। তাই রোড ট্রিপের আসল উদ্দেশ্য ধরা পড়ার ভয় তার ছিলনা। তিনি প্রেমিকাকে জানিয়েছিলেন, তারা রোড ট্রিপে কিছু পার্কে ঘুরবেন।

ভ্রমণ শেষে ফিরে এসেই লিডেন ডেজিরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন, তাই আগেভাগে তাকে সবকিছু না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

গত ১ মে লিডেন ও জশ ভ্রমণ শুরু করেন এবং প্রথমে মন্টানায় থামেন নীলকান্তমণির সন্ধানে। কিন্তু সেখানে তারা কিছুই খুঁজে পাননি।

ইয়েলোস্টোনে একদিন খনন কাজ চালানোর পর তারা দুজন ৭ মে আরকানসাসে পৌঁছান। পরবর্তী দুদিনও কোনো রত্ন খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। তৃতীয় দিনে ভিন্ন উপায়ে আবার খোঁড়া শুরু করেন। এবার তারা শুধু নুড়িপাথরের উপরিতল খনন করেন।

লিডেন বলেন, ‘তখন দিন প্রায় শেষ হয়ে আসছে, আর মাত্র দুই ঝুড়ি বাকি ছিল এবং আমরা ওখানেই মাটি-পাথর ফেলে দিচ্ছিলাম।’ ঠিক তখনই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে। তিনি যখন নিজের টুলের ওপর মৃদু আঘাত করলেন, দুটি ঝুড়ির উপরে হলুদ হীরার টুকরা ঝলমল করে উঠল!

ঘটনার আকস্মিকতায় লিডেন তখন রীতিমতো কাঁপছিলেন। বন্ধুকে ডেকে তাড়াতাড়ি হীরার টুকরাটি জিপলক ব্যাগে ভরে ফেলতে বলেন তিনি। কারণ তার মনে হয়েছিল, তিনি সেটা হাত থেকে ফেলেই দেবেন।

লিডেন জানালেন, তিনি আসলে এত বড় হীরা পাবেন বলে আশাই করেননি; বরং শুধু ছোট্ট একটা টুকরা খুঁজছিলেন যেন আংটি বানাতে পারেন।

হীরা পাওয়ার পরপরই তারা ডিসকভারি সেন্টারে যান এবং কী খুঁজে পেয়েছেন তা জানান। এরপর সেখানকার কর্মীরা জানান হীরাটির আসল আকার।

২.২০ ক্যারেটের ওই হীরার টুকরো ছিল গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় হীরা। এর আগে ডায়মন্ড ক্রেটার স্টেট পার্ক থেকে আরকানসাসের ফায়েটভিলের আরেক ব্যক্তি ৪.৪৯ ক্যারেট মাপের হীরা পেয়েছিলেন।

অ্যাসিস্টেন্ট সুপারিনটেনডেন্ট ড্রু এডমন্ডস বলেন, 'লিডেনের পাওয়া হীরার টুকরাটি হলুদ, ত্রিভুজাকার এবং উজ্জ্বল বর্ণের। এর ভেতরে আরও কিছু জিনিসের মিশ্রণ আছে, যা একে অসাধারণ করে তুলেছে।' 

বাড়ি ফেরার কদিন পরেই লিডেন ও তার প্রেমিকা মাশরুম হান্টিংয়ে যান। একসঙ্গে হাঁটতে থাকার সময় হঠাৎ লিডেন পকেট থেকে হীরাটি বের করেন এবং প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রেমিকার জবাবও ছিল হ্যাঁ-সূচক।

লিডেন ও তার প্রেমিকা এখন এমন কাউকে খুঁজছেন, যে এই হীরার টুকরা থেকে সুন্দর একটি আংটি বানিয়ে দিতে পারবে। এ নিয়ে তাদের অবশ্য কোনো তাড়া নেই। সবকিছু একেবারে ঠিকঠাকভাবে হয়েছে।