Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ভবিষ্যতের মুদ্রা বিটকয়েন!

জুন ২১, ২০২১, ০৮:৪৫ এএম


ভবিষ্যতের মুদ্রা বিটকয়েন!

বিটকয়েন। অনেকেই বলে থাকেন অনলাইন মুদ্রা। আবার অনেকেরই ধারণা ভবিষ্যতের মুদ্রা। কেউ বা বলছেন পুরো ব্যবস্থাতেই রয়েছে একটা বড় ঘাপলা।  বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিট কয়েনের ব্যবহার বাড়ছে। বিটকয়েন হল ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। যেমন আমাদের দেশের জন্য মুদ্রা টাকা, ইউএসএ-এর জন্য ডলার। তবে  বিট কয়েন এমন একটি মুদ্রা যার কোনো ফিজিক্যাল প্রোপার্টিজ নেই। মানে একে ধরা বা ছোঁয়া যায় না। এটি শুধু ইন্টারনেট এর মাধ্যমেই ব্যবহার যোগ্য। আবার একে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও নেই। শুধু বিটকয়েনই নয় এমন ডিজিটাল মুদ্রার মধ্যে রিপল, লাইট কয়েন, ইথারিয়াম, মফিজ কয়েন অন্যতম। 

বর্তমানে এ অনলাইন মুদ্রা ব্যবহার করে অনেকেই বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অনলাইন মুদ্রা ব্যবহার বা লেনদেন করা নিষিদ্ধ বা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। তবে বাংলাদেশে যে বিটকয়েনের ব্যবহার হচ্ছে না তা নয়, তবে যেহেতু নিষিদ্ধ তাই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বলা মুশকিল। অগোচরে এই নিষিদ্ধ বিটকয়েনের ব্যবহার বাড়ছে। আসুন জেনে নেই বিট কয়েনের আদ্যোপান্ত।

বিটকয়েন কি: বিটকয়েন একধরনের ক্রিপ্টো-কারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই এই মুদ্রার লেনদেন হয়ে থাকে। ২০০৮ সালের শেষের দিকে জাপানের একজন নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের কেউ বা একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী এই ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির’ উদ্ভাবন করেন। যদিও এই ব্যক্তির আসল নাম বা পরিচয় এখনো জানা যায়নি। 

বিটকয়েন মাইনিং কি বা যেভাবে তৈরি হয়: বিটকয়েন তৈরি হয় মাইনিং পদ্ধতিতে। সাধারণত অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে বিটকয়েন ব্যবহার করা হয়। বিটকয়েন যখন অনলাইনে ট্রান্সজেকশন হয়ে থাকে তখন ট্রান্সজেকশন গুলো সঠিক হয়েছে কিনা তা ভেরিফাই করতে হয়। আর এই ট্রান্সজেকশন যারা ভেরিফাই করে তাদের বলা হয় মাইনারস। আর ভেরিফাই করার পুরো প্রক্রিয়াকেই বলা হয় বিটকয়েন মাইনিং। 

বিট কয়েন কিভাবে ব্যবহার করা হয়: ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুইজন ব্যবহারকারীর মধ্যে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করেও এটা সরাসরি আদান-প্রদান (পিয়ার-টু-পিয়ার) করা হয়। এই লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, কিন্তু এই মুদ্রার লেনদেন তদারকির জন্য কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো কর্তৃপক্ষ থাকে না। এই মাইনারের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি হয়। বিটকয়েন তৈরি বা কেনার পর তা গ্রাহকের হিসাবে জমা থাকে। পরবর্তীতে তিনি সেগুলো ব্যবহার করে পণ্য কিনতে পারেন বা বিক্রি করে দিতে পারেন। বিক্রি করলে বিটকয়েনের পরিবর্তে প্রচলিত অর্থে তা গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করে লেনদেন করা হলেও সেসব তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।

বিটকয়েনের মূল্য: বিট কয়েনের সর্বনিম্ন এককের নাম সাতাশি। ১ কোটি সাতাশিতে হয় ১ বিটকয়েন। লেনদেন হয় গ্রাহক থেকে গ্রাহকের ডিভাইসে। বিটকয়েনের লেনদেনের উপর মূল্য উঠানামা করে। ১ বিটকয়েন সমান ৩২৫৭০.১০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মূল্যে ১ বিটকয়েন সমান ২৭৯৯২২৫.০৯ টাকা (২১ জুন, ২০২১)। 

বিটকয়েনের প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রা: বিটকয়েন একধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। একমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি না। বিটকয়েনের সাফল্যের পর এমন এক হাজারের বেশি ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু করা হয়। সব অবশ্য বিটকয়েনের মতো সফল হয়নি। তবে এ থেকে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রানির্ভর ভবিষ্যৎ আর্থিক ব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বিটকয়েন ব্যবহারের অসুবিধা:-

নিয়ন্ত্রণের কোন প্রতিষ্ঠান নেই: বিটকয়েন যেহেতু অনলাইন মুদ্রা সেক্ষেত্রে এই মুদ্রার কোন নিয়ন্ত্রণ করার কোন ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেই। যার ফলে বিটকয়েন নিষিদ্ধ বাণিজ্য এবং মানি লন্ডারিংয়ের জন্য একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিনিয়োগ হারানো বা প্রতারণা: যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায় বিনোয়োগে রির্টান বেশি সেক্ষেত্রে অনেকেই তাতে বিনোয়োগ বা ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কারন কার সাথে বিনোয়োগ হচ্ছে তার পরিচয় জানান কোন সুযোগ নেই। 

প্রযুক্তিগত দুর্বলতা - নিশ্চিতকরণে সময় দেরি: বিটকয়েন গুলি পিয়ার-টু-পিয়ার ভ্রমণ করে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনও লেনদেন নিশ্চিত হতে বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, দ্রুত ক্লিক করে নিযুক্ত অসাধু ব্যক্তি একই বিটকয়েন গুলির দ্বিতীয় অর্থ প্রদানের জন্য পৃথক প্রাপকের কাছে জমা দিতে পারে। যদিও সিস্টেমটি শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণ ব্যয় করে এবং অসাধু দ্বিতীয় লেনদেনকেও অগ্রাহ্য করে, দ্বিতীয় প্রাপক যদি অসাধু লেনদেনের নিশ্চয়তা পাওয়ার আগে অসাধু ক্রেতার কাছে পণ্য স্থানান্তর করে, তবে দ্বিতীয় প্রাপক পেমেন্ট এবং পণ্য হারায়।

মানুষের অসততা - পুলের সংগঠকগুলি অন্যায়ভাবে শেয়ারের টুকরোগুলি গ্রহণ করে : যেহেতু বিটকয়েন খনন পুলিংয়ের মাধ্যমে সর্বোত্তমভাবে অর্জন করা হয় (হাজার হাজার অন্যান্য খনিজদের একটি গ্রুপে যোগ দেওয়া), প্রতিটি পুলের আয়োজকরা কীভাবে আবিষ্কার করেন যে বিটকয়েনগুলি বিভক্ত করবেন তা বেছে নিন। বিটকয়েন মাইনিং পুলের আয়োজকরা বেon মানভাবে নিজের জন্য আরও বিটকয়েন খনির শেয়ার নিতে পারেন।

মানুষের অব্যবস্থাপনা - অনলাইন এক্সচেঞ্জ : অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন এক্সচেঞ্জ গুলিতে চালিত লোকেরা যে বিটকয়েনের জন্য নগদ বাণিজ্য করে তা অসাধু বা অযোগ্য হতে পারে। পার্থক্যটি হ'ল প্রচলিত ব্যাংকিং লসগুলি জন্য আংশিকভাবে ব্যাংক ব্যবহারকারীদের জন্য বীমা করা হয়, কিন্তু বিটকয়েন এক্সচেঞ্জগুলির ব্যবহারকারীর জন্য কোনও বীমা কভারেজ নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা তৈরি করা হয় না বা কোনও সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না: ব্যাংকগুলি অর্থ চলাচলে লগ করে না এবং সরকারী ট্যাক্স এজেন্সিগুলি এবং পুলিশ এই অর্থের সন্ধান করতে পারে না। এটি পরিবর্তন হতে পারে, যেহেতু নিয়ন্ত্রিত অর্থ সরকারের নিয়ন্ত্রণ, কর আদায় এবং পুলিশিংয়ের জন্য হুমকি। সরকারী তদারকি না করার কারণে বিটকয়েনগুলি বাণিজ্য ও অর্থ পাচারের জন্য এক সরঞ্জাম হয়ে উঠেছে। বিটকয়েনের মূল্য অতীতে আকাশ ছোঁয়া ছিল কারণ ধনী অপরাধীরা বড় পরিমাণে বিটকয়েন কিনেছিল। কোনও নিয়মনীতি না থাকায় লোকজন একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে হারাতে পারে।

যেসব দেশে বিটকয়েন নিষিদ্ধ: বিশ্বের অনেক দেশেই এখন বিটকয়েনের আইনি স্বীকৃতি আছে। তবে বাংলাদেশ, মিসর, নেপাল, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, কিরগিজস্তান আলজেরিয়া, মরক্কো প্রভৃতি দেশে বিটকয়েন এখনো নিষিদ্ধ। 

এর ভবিষ্যৎ কী?

মনে করা হচ্ছে ক্রিপ্টো/অনলাইন মুদ্রাই ভবিষ্যতের মুদ্রা। এর মুলে যে ব্লক চেইন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন। ইন্টারনেট যেভাবে দুনিয়া পাল্টে দিল, মুঠোফোন যেভাবে ঘরে ঘরে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে, এটাও তেমনি ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু কোন মুদ্রাটা? বিটকয়েন, রিপল, লাইট কয়েন, ইথারিয়াম, নাকি মফিজ কয়েন? বলা মুশকিল। কেউ জানে না। কিন্তু একটা না একটা ক্রিপ্টো মুদ্রা আসন গেড়ে বসবে। ডলার ধীরে ধীরে উঠেই যাবে, ইউরো উঠে যাবে, টাকাও একদিন উঠে যাবে। ব্যাংকে মানুষ যাবে না, সবার ক্রিপ্টো মুদ্রার ওয়ালেট থাকবে, কম্পিউটারে বা মোবাইলে। অনেকে বলছেন, এই অ্যাকাউন্টটিকে শুধু ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তুলনা করলেই হবে না। এর একেকটা নিজেই একটা ব্যাংক। ব্যাংকের নিয়মকানুন, ফি, সব ওই মানুষটিই নির্ধারণ করবে। আর এই মুদ্রার তো দেশের গণ্ডি থাকছেই না।

আমারসংবাদ/জেআই