নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২৭, ২০২১, ১২:৫০ পিএম
পুরান ঢাকার ইসলামপুরে আহসান মঞ্জিলের ঠিক পাশেই গোল তালাব অথবা গোল পুকুর অবস্থিত। তালাব উর্দু শব্দ, যার অর্থ জলাধার । ১৬১০ সালে নবাব আব্দুল বারি এই পুকুরটি খনন করান । স্থানীয়রা এই পুকুরটিকে “নবাব বাড়ি পুশকুনি” নামে সম্বোধন করতো। গোলাকার এই বিশাল পুকুরটির চারপাশে দালান কোঠা রয়েছে। শত ঝড়-ঝাপটা সহ্য করে উনিশ শতকে খনন করা পুকুরটি আজও টিকে আছে গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে। বর্তমানে পুকুর ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে এই এলাকার হাজারো মানুষের কর্মব্যস্ততা, বসত-বাণিজ্য। চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে থাকা ইট-কংক্রিটের স্তূপের মাঝে এই পুকুর যেন একখ-কোমল স্নিগ্ধতা।
বুড়িগঙ্গার দক্ষিণে ও উত্তরে নবাববাড়ী রেখে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে একাধিক মার্কেট। যার মধ্যে প্রায় পাঁচশ’ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে অবস্থান করছে গোলপুকুর। সময়ের বাঁকে বাঁকে নানা রূপ উত্থান-পতনের সাক্ষী এই পুকুর। পুকুরের চারিপাশ ঘিরে আছে প্রায় ৫০ টি নারিকেল গাছ । এবং সব গাছ একই উচ্চতার ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামপুর এলাকার এ পুকুরটির উৎপত্তি মূলত ছোট একটি জলাশয় থেকে। আনুমানিক ১৬১০ সালে মোগল শাসকদের প্রতিনিধি ইসলাম খাঁ সুবাদার হিসেবে ঢাকায় আসেন। তিনি প্রথমে বর্তমান ইসলামপুর এলাকায় আসেন। ফলে তার নামানুসারে এলাকাটির নামকরণ হয় ইসলামপুর। সুবাদার ইসলাম খাঁ আসার আগে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার মিটফোর্ডের বিশাল এলাকায় বাস করতেন কুমার সম্প্রদায়ের লোক। কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন সামগ্রী। তাদের প্রয়োজনে ইসলামপুরের এ স্থান থেকে মাটি নেয়া হতো। মাটি কাটতে কাটতে এক পর্যায়ে সৃষ্টি হয় ছোট আকারের গর্তের। এ গর্ত পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় জলাশয়ে।
তখন জমিদার মোগল শেখ এনায়েত উল্লাহ তার বাগানবাড়িতে এটিকে জলাশয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। এরপর ১৭০০ সালে লুইস নামে এক ফরাসি ব্যবসায়ী এসে বাণিজ্য কুঠি তৈরি করেন এবং তার নামানুসারে এর নাম হয় ‘লুইসের জলা’। ১৮৩০ সালে নবাব খাজা আলিম উল্লাহ কুঠিসহ জলাশয়টি কিনে নেন। এরপর জলাশয়টি সংস্কার করে পুকুরে পরিণত করা হয়। বৃত্তাকারে প্রায় সাড়ে ছয় বিঘা জমির ওপর তৈরি হয় পুকুর। আগে একে ‘গোল তালাব’ নামে ডাকা হতো। তালাব উর্দু শব্দ, যার অর্থ জলাধার। পরে এটি নবাববাড়ির পুকুর নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পায়। আর সরকারি গেজেটে এর নাম ‘ইসলামপুরের গোল তালাব’। এটি হচ্ছে গোলপুকুর তৈরির প্রচলিত ইতিহাস। তবে মূল পুকুরটির খননের সময় নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে এটি যে উনিশ শতকের তৃতীয় দশকেই খনন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই।
বর্তমানে “মৌলভী খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট” পুকুরটির দেখাশোনা করছে। নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে যে কেউ এই পুকুরে গোসল করতে পারে। পুকুরটি দেখতে আসলে গোসল করার জন্য আপনিও সাথে করে শর্টস নিয়ে আসতে পারেন। পুকুরে গোসলের জন্য নির্ধারিত মূল্য খুব বেশী নয়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে বাসে চড়ে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার অথবা বাবু বাজার ব্রীজে নেমে আহসান মঞ্জিলের পাশেই গোল তালাব অথবা গোল পুকুর অবস্থিত।
আমারসংবাদ/জেআই