Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মুঘল আমলের অনন্য স্থাপত্য আরিফাইল মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২৮, ২০২১, ০১:৪৫ পিএম


মুঘল আমলের অনন্য স্থাপত্য আরিফাইল মসজিদ

মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন আরিফাইল মসজিদ; ১৬৬২ ঈসায়ী সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অপরূপ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয় মসজিদটি। স্থাপত্য কলা কৌশল ও অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর কারণে মসজিদটিকে দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো মনে হয়। 

৩৫০ বছর পূর্বে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এ ঐতিহাসিক মসজিদটি সরাইলবাসীর পুরনো স্মৃতি বহনকারী, অনেকের ভাষ্যমতে ঐতিহাসিক মসজিদটিকে নিয়ে অনেক কল্পকাহিনী রয়েছে। 

মসজিদটির আয়তনে ৭০ ফুট বাই ২০ ফুট। দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো মনে হয়। সাড়ে ৩০০ বছরের বেশি সময় আগে নির্মিত মসজিদটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনেরও একটি। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে মসজিদটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষিত। মসজিদটিকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে আসেন বলে স্থানীয়রা জানান।

[media type="image" fid="130336" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

মসজিদের পাশে অবস্থিত বিশাল আয়তনের একটি দীঘি মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীরা এ দীঘির নামকরণ করেছেন ‘সাগরদীঘি’।

[media type="image" fid="130338" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

মসজিদটির দক্ষিণে রয়েছে দুটি কবর, যা ‘জোড়া কবর’ বা ‘রহস্যময় কবর’ নামে পরিচিত। কবর দু’টিতেও মুঘল স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর প্রভাব বিদ্যমান। মসজিদের পাশে অবস্থিত জোড়া কবর নিয়ে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি ও কল্পকাহিনী।

[media type="image" fid="130335" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল সরাইল এবং বারোভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁর শাসন ছিলেন এখানে। ঈশাখাঁ আরিফাইল মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী জোড়া কবর নির্মাণ করেন। অনেকের ধারণা ঈশাখাঁর দুই স্ত্রী ইন্তেকাল করলে তাদেরকে মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়। পরে কবর দু’টির সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়। কবর দু’টি পাশাপাশি হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ‘জোড়া কবর’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

এ ছাড়া মসজিদের দেয়াল অতি পুরু হওয়ার কারণে ভেতরের যেকোনো শব্দ দেয়ালে বাধা পেয়ে একটা ভৌতিক প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হয়। এই প্রতিধ্বনিকে অনেকেই গায়েবি কোনো আলামত মনে করেন।

[media type="image" fid="130334" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

আরিফাইল মসজিদের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্টু বলেন, এই মসজিদে কোনো প্রকার রড, সিমেন্টের অস্তিত্ব নাই। চুন এবং সুকড়ি দ্বারা এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মিত। জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই ঐতিহাসিক মসজিদকে একটি সাইনবোর্ড দ্বারা ১৯৯০ সালে প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলো। এরপর থেকে কোনো প্রকার সংস্কার বা উন্নয়নমূলক কোনো কিছু নাই। এটা স্থানীয়ভাবে আমরা করেছি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে এটি একটি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এত বড় একটি ঐতিহাসিক মসজিদে যাওয়ার রাস্তাটা ভালো না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সময় পর্যটকরা আসেন। অনেক ধরনের লোকই আসেন, কিন্তু মসজিদ পর্যন্ত গাড়ি নিতে পারেন না। রাস্তাটা প্রশস্ত হলে ভালো হয়।

[media type="image" fid="130337" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

আশরাফ উদ্দিন মন্টু বলেন, আমরা দেখেছি ভারতের তাজমহল সরকারের একটি আয়ের উৎস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা যায়। আর আমাদের এখানে যে ঐতিহাসিক মসজিদ; মসজিদের পাশে যে মাজার। যিনি এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায়, মাজার শরীফের যে কাঠামো এটা মোটামুটি তাজমহলের মত।

যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড মোড় এসে সিএনজি যোগে সরাসরি আসা যায়। উপজেলা চত্বর থেকে রিকশা যোগে কিংবা পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়।

আমারসংবাদ/জেআই