Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

একজন সারা গিলবার্টের প্রচেষ্টায় বেঁচে গেলো কোটি প্রাণ

আমার সংবাদ ডেস্ক

জুলাই ২৮, ২০২১, ০৯:০০ এএম


একজন সারা গিলবার্টের প্রচেষ্টায় বেঁচে গেলো কোটি প্রাণ

বদলে গেছে পৃথিবী, স্তব্ধ আজ প্রকৃতির সুর। অদৃশ্য শক্তির মোকাবিলায় হাফিয়ে উঠেছে মানুষ। প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি জানালায় আজ আর হাসি মুখ গুলো নেই, কান পাতলে শোনা যায় কেবল এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন আর স্বজন হারানোর আহাজারি। 

তবে মানবসভ্যতার বেঁচে থাকার এই লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ হার মানলেও, হার মানেনি একদল সুপার হিরো। পরিবার ছেড়ে, নিজের জীবন বাজি রেখে অদেখা অদৃশ্য এক শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে এই সুপার হিরোরা। একদল সুপার হিরো যখন জীবন বাঁচানোর জন্য দিন রাত লড়ে গিয়েছেন, আর একদল তখন করোনাকে তাড়িয়ে সুস্থ পৃথিবী ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজেছে।

বিজ্ঞানের হাত ধরে পেয়েছেন আশার আলো। পৃথিবী পেয়েছে করোনার ভ্যাকসিন। যার হাত ধরে আবার সুস্থ পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছে মানুষ, তিনি সারা গিলবার্ট।

রাত-দিন পাল্লা দিয়ে কাজ করেছেন। যে কোনো মূল্যে এই প্রাণঘাতি মহামারির প্রতিষেধক আবিস্কার করতেই হবে, এ রকম পণ নিয়ে কাজ করে গেছেন সারা। পরিবার, সন্তানের কথা মাথায় ছিল না তার!

শুরু থেকেই ভ্যাকসিনটি কতটা কার্যকর হবে এবং কীভাবে তৈরি করা হবে তা দ্রুত নির্ধারণের দিকে শতভাগ মনোনিবেশ করেছিলেন সারা।

সারা সব সময় প্রচারমাধ্যম এড়িয়ে চলেছেন। তার কাছে কাজ নিয়ে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারের চেয়ে নিভৃতে কাজের অগ্রগতি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফলে দুই দশকের অধিক সময় কাজ করে গেলেও সারার নাম 'লাইমলাইটে' এসেছে বেশ দেরিতে। অবশ্য তার করা গবেষণাগুলো বিজ্ঞানের চেনা পরিচিত গণ্ডির মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এখন এই সারাই কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্বের সব হাই-প্রোফাইল চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তার দলই প্রথম ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে হাজারখানেক মানুষের ওপর করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ট্রায়ালকে তৃতীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে এখন বিভিন্ন দেশের জনসন অ্যান্ড জনসন, বায়োএনটেক, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, মর্ডানা, সানোফি ও নোভাভ্যাক্সের মতো  প্রতিষ্ঠান সামিল হলেও ২০২০ সালের এপ্রিলের শেষের দিকেই, অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউটে সারা গিলবার্ট এবং তার সহকর্মীরা ১,১০০ জনের ওপর তাদের টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছিলেন। যে প্রকল্প অন্য সময়ে পাঁচ বছরে শেষ হতো, সেটি সারার দ্রুততায় মাত্র চার মাসে পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

গত বছরের এপ্রিলেই সারা গিলবার্টের বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়া একুশ বছর বয়সী তিন মেয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাদের মায়ের আবিষ্কার করা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে অংশ নেবেন। এবং তারা অংশ নিয়েছিলেন। ট্রায়ালের পর সারার সন্তানেরা সুস্থও ছিলেন। 

যার হাত ধরে মহামারির মোকাবেলার হাতিয়ার খুঁজে পেয়েছে মানুষ, তাকে ধন্যবাদ জানানো ভদ্রতা। উইম্বলডনের কোর্টে প্রফেসর সারা গিল বার্টকে তুমুল করতালিতে সম্মান জানিয়েছে ইংল্যান্ডের মানুষ। অবশ্য সীমানা পেরিয়ে তার আবিষ্কারের সুফল পাচ্ছে গোটা পৃথিবীর মানুষ। বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ গ্রহন করেছে সারার আবিষ্কৃত টিকা। 

এখনও এই মহামারীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়ছি আমরা। যে সময় কাছের মানুষ দূরে চলে যাচ্ছে, সেই সময় পাশে থেকে প্রতিনিয়ত সেবা করে যাচ্ছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। কঠিন এই সময়ে ফ্রন্টলাইনারদের ভরসাতেই নতুন জীবনের আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছে মানুষ। 

শুধু সারাকে নয় মহামারি থেকে মানবমুক্তির এই লড়াইয়ে যেসব ফ্রন্টলাইনাররা কাজ করে চলেছেন তাদের সবাইকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো ধন্যবাদ। 

আমারসংবাদ/এডি