Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বদলাচ্ছে শিক্ষাক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


বদলাচ্ছে শিক্ষাক্রম
  • মুখস্থ নির্ভরতাকে বাদ দিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুমোদন
  • দশমের কারিকুলামে এসএসসি, একাদশ দ্বাদশের মূল্যায়নে এইচএসসি
  • নবম-দশমে থাকছে না আলাদা বিভাগ

 মুখস্থ নির্ভরতাকে বাদ দিয়ে নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করা হলে সরকারপ্রধান তা অনুমোদন করেছেন বলে শিক্ষামন্ত্রী জানান।

দীপুমনি বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই রূপরেখা করা হয়েছে।

এর আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক আলাদা আলাদা ছিলো। একজন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিকে ঢুকে মাধ্যমিকে যাচ্ছে। এ জন্য এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়া যেনো খুব মসৃণ হয়, মাঝে যেনো ছেদ না পড়ে, অন্য স্তরে গিয়ে যেনো খাপ খাওয়াতে কোনো সমস্যা না হয় সেটি আমরা দেখার চেষ্টা করেছি।

পুরো শিক্ষাক্রম হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। গভীর শিখনে গুরুত্ব দেয়া হবে। মুখস্থ নির্ভরতার বিষয়টি যেনো না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই যেনো অধিকাংশ পাঠদান সম্পন্ন করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এরপর শিক্ষার্থীরা যেনো নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটা যেনো না হয়।

 জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম শ্রেণি থেকে গ্রুপের বিভাজন আর থাকবে না। শিখন সময় কতটা হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নেও গুরুত্ব দিয়েছি।’

মন্ত্রী জানান, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

থাকছে না পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা : নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণির আগে আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেবে না সরকার। এই শিক্ষাক্রম শুরুর পর দশম শ্রেণিতে একটি এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে আরেকটি পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা হবে না।

অন্যান্য শ্রেণিতে হবে সমাপনী পরীক্ষা। শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম ও দ্বাদশে পাবলিক পরীক্ষা হবে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী হবে এসএসসি পরীক্ষা। আর একাদশের পরীক্ষা ও দ্বাদশের পাবলিক পরীক্ষা মিলিয়ে এইচএসসির ফল ঘোষণা করা হবে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলবে ২০২২ সালে। আর শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পঞ্চম ও অষ্টমে শ্রেণি পরীক্ষা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়নের ভিত্তিতে যেখানে যেখানে মূল্যায়ন সনদ দেয়া প্রয়োজন আমরা তা দেবো। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরনের পরীক্ষা নেই। এরপর থেকে সব ক্লাসেই সমাপনী পরীক্ষা হবে। দশম ও দ্বাদশে পাবলিক পরীক্ষা আছে। সমাপনী পরীক্ষায় কিছুটা মূল্যায়ন, কিছুটা ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও কিছুটা সামষ্টিক মূল্যায়ন (পরীক্ষা) করা হবে।

পঞ্চমেও হয়তো সনদ দিয়ে দেবো। সনদ দেয়ার জন্য পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই। প্রতিটি ক্লাসেই মূল্যায়ন হবে। কিছু আসবে সামষ্টিক মূল্যায়ন (পরীক্ষা) থেকে, কিছু আসবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন থেকে। এছাড়া নবম শ্রেণিতে আর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকছে না। নবম শ্রেণি থেকে সবাইকে ১০টি করে বই পড়তে হবে। একাদশ শ্রেণিতে উঠে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পছন্দের সুযোগ পাবে।

দীপুমনি বলেন, ‘প্রাথমিক শেষে একটা, অষ্টম শ্রেণি শেষে আরেকটা সনদ দেয়া হতে পারে। এসব শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে সনদ দিতে হবে এমন না। স্কুলের পড়া শেষ করলেই তো সনদ দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে। একটা স্তর শেষ করার পর সনদ দেয়া হতে পাবে। সনদের গুরুত্ব রয়েছে কিন্তু সনদের জন্যই শিক্ষা নয়। আমরা পারদর্শিতা নিশ্চিত করতে চাই। প্রতিটি স্তরে তারা যে পারদর্শিতা অর্জন করেছে সেই স্বীকৃতিও দিতে চাই। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা মুখস্থ না করে যেনো প্রয়োগটা শেখে।

নবম-দশমে থাকছে না আলাদা বিভাগ : নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম-দশম শ্রেণি থেকে আলাদা কোনো বিভাগ থাকবে না। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, দশম শ্রেণির আগে আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেবে না সরকার। এই শিক্ষাক্রম শুরুর পর দশম শ্রেণিতে একটি এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে আরেকটি পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা হবে না। অন্য শ্রেণিতে হবে সমাপনী পরীক্ষা।

মন্ত্রী বলেন, নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকছে না। নবম শ্রেণি থেকে সবাইকে ১০টি করে বই পড়তে হবে। একাদশ শ্রেণিতে উঠে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পছন্দের সুযোগ পাবেন।