Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বর্জন-গুলি-সহিংসতায় নিহত ২

আমার সংবাদ ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


বর্জন-গুলি-সহিংসতায় নিহত ২

গোলাগুলি, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভোট বর্জনের মধ্যদিয়ে প্রথম ধাপের ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদ ও ষষ্ঠ ধাপের ৯টি পৌরসভায় ভোট সম্পন্ন হয়েছে।

গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনি সহিংসতায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ কক্সবাজারে দুই জন নিহত হয়েছেন।

তবে নির্বাচন কমিশন (ইসির) দাবি— প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ ও ষষ্ঠ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সূত্রে প্রকাশ, প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ ও ষষ্ঠ ধাপে ১১টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিলো গত ২১ জুন।

কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সে সময় ১৬৭টি ইউপি ও ৯ পৌরসভার ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় গতকাল ১৬১ ইউপি ও ৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। ছয় ইউপিতে আইনি জটিলতা ও এক ইউপিতে আদালতের নির্দেশে ভোট আটকে রাখা হয়। ১৬০ ইউপির মধ্যে ৪৪টিতে প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

আর ৯টি পৌরসভার মধ্যে তিনটিতে মেয়র প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫০০ জন, সাধারণ সদস্য পদে ছয় হাজার ২৮৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এক হাজার ৯৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৭ প্রার্থী।    

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮ থেকে ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিগত দিনের যেকোনো নির্বাচনের মতোই প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশ কিছু স্থানে গোলাগুলি, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলিতে নিহত হন একজন।

ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ কামাল ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে অন্তত ৩০ জন আহত হন।

এতে আবুল কালাম (৪০) নামে ওই ব্যক্তি নিহত হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নে পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে আব্দুল হালিম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।

ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় টেকনাফের উনছিপ্রাং ও লম্বাবিল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় রাস্তায় অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরফানুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল হামলায় চারজন আহত হয়েছেন। দুপুর ১২টায় ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

বারাকপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ আনসারের এক সমর্থককে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এছাড়া বাগেরহাটে ভোট বর্জন করেছেন চেয়ারম্যান পদের দুই প্রার্থী। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল (আনারস প্রতীক) ভোট বর্জন করে।

ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলা, নৌকায় জোর করে সিল মারা, এজেন্টদের মারধরসহ নানা অভিযোগে সকাল সোয়া ১০টায় তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোটগ্রহণ শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই নোয়াখালীর হাতিয়ার ৯ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) জিয়া আলী মোবারক কল্লোল, ১০ নম্বর জাহাজমারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) এ টি এম সিরাজ উল্যাহ ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠুু গ্রহণযোগ্য করতে এবং নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিজিবি, পুলিশ, আনসার বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা-উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা। তারা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটরাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে গতকাল স্থগিত হওয়া প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ ও ষষ্ঠ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো চোখেপড়ার মতো। সকাল থেকেই সব বয়সের নারী-পুরুষ ভোটার কেন্দ্রমুখী ছিলেন। তারা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করেন।

যদিও বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আগে থেকেই কিছুটা শঙ্কা ছিলো। তবে কিছু কিছু স্থানে সহিংসতা ও ভোট বর্জন হলেও অধিকাংশ স্থানে সকাল থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট প্রয়োগ করেন। অনেক স্থানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে আসেন ভোটাররা। তারাও ছাতা মাথায় দিয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ভোট দিয়েছেন।