Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

আরটি-পিসিআর ল্যাবেই ভাগ্য নির্ধারণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


আরটি-পিসিআর ল্যাবেই ভাগ্য নির্ধারণ!

বৈশ্বিক মাহামারি করোনার ধাক্কার পর এবার আরটি-পিসিআর ল্যাবেই আটকে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক প্রবাসীদের ভাগ্য! তারা বিমান টিকিট বুক ও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের কর্মে ফেরায় অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

তারা বলছেন, পরীক্ষার সুবিধা স্থাপন গুরুত্বহীন থাকায় তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। এদিকে ঠিক কবে নাগাদ বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালু ও ফ্লাইট শুরু হবে তা জানেন না প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান  এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক প্রবাসীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

তথ্য মতে, বিভিন্ন কারণে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন প্রায় ছয় হাজারের বেশি সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েন তারা। এমন অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের পক্ষে থেকে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় গত মাসে উপসাগরীয় দেশ বাংলাদেশ থেকে যাত্রীবাহী ফ্লাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। তবে ওই সময় আমিরাত সরকার নতুন করে শর্ত দেয়।

তারা জানায়, বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটের আগের ছয় ঘণ্টার মধ্যে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট করে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট থাকতে হবে। র্যাপিড পিসিআরের এই নেগেটিভ রিপোর্ট না থাকলে মিলবে না আরব আমিরাতে প্রবেশের অনুমতি। তাদের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা। তাদের ওই সঙ্কট নিরসনের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পার্কিং ভবনের ছাদে ল্যাব স্থাপনের জন্য সরকারের পক্ষে থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ল্যাব চালু করতে পারেননি দায়িত্বশীলরা।

এমন পরিস্থিতিতে আরটি-পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখতে গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে ঠিক কতদিন নাগাদ এ সংকট নিরসন, ল্যাব চালু ও ফ্লাইট শুরু হবে তা সঠিক জানেন না সরকারের এই দুই মন্ত্রী।

তারা বলেন, ছাদে ল্যাব স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আগে সাময়িকভাবে বিমানবন্দরের ভেতরেই ল্যাব স্থাপন করা হবে। তবে কবে নাগাদ ল্যাব চালু হবে, ফ্লাইট শুরু হবে— তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তারা। অথচ এ নির্দেশনা আসার পর ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে ফেলেছে। এই দুই দেশের প্রবাসীরা কাজে ফিরে যাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশিরা ফিরতে পারছেন না। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। যারা দেশটিতে চাকরি করেন, তারা কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। যাদের ব্যবসা রয়েছে তারাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

জানা যায়, নিজ নিজ কর্মে ফিরতে বেশ তোড়জোড় শুরু করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা। বেশ কিছু ধরেই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন আটকে পড়া প্রবাসীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সর্বশেষ গতকালও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কে জড়ো হয়েছিলেন সেখানে দ্রুত আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবিতে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক প্রবাসী একজন গতকাল জানান, এটা আমাদের জীবন ও পরিবার পরিজন বাঁচানোর সংগ্রম। সে জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। বিমান টিকিটও বুক  করেছি। এখন প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবের অনুপস্থিতি। সঠিক সময়ে যেতে না পারলে চাকরি থাকবে না। চারকি না থাকলে রাস্তায় নামতে হবে। আশা করি সরকার আমাদের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে দেখবে এবং আমাদের সৃষ্ট সমস্যা দ্রুত সমাধান করবে।’

বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব কবে চালু হবে নিশ্চিত নন দুই মন্ত্রী
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য কবে ল্যাব চালু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি  স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন দুই মন্ত্রী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শর্ত অনুযায়ী দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে যাত্রীদের বিমানবন্দরে করতে হবে করোনা পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পার্কিং ভবনের ছাদে ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও আপত্তি জানিয়েছে ল্যাব স্থাপনে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।

এই সংকট নিরসন ও নতুন স্থান নির্ধারণের বিষয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তারা জানালেন, ছাদে ল্যাব স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে সাময়িকভাবে বিমানবন্দরের ভেতরেই ল্যাব স্থাপন করা হবে। তবে কবে নাগাদ ল্যাব চালু হবে, ফ্লাইট শুরু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারলেন না দুই মন্ত্রী।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘এটা তো এক সপ্তাহ আগে হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় একটু সময় লাগছে। এই সমস্যার আজ মোটামুটি একটা সমাধান হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত চেয়েছে বিমানবন্দরে র?্যাপিড পিসিআর টেস্ট, এদিকে আমাদের দেশে র?্যাপিড পিসিআর পরীক্ষার যন্ত্র নেই।’ বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার আরটিপিসিআর ল্যাব বসাতে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মানসম্মত কি-না তা যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে।

আরব আমিরাতে পাঠানো এসওপি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টি সিভিল এভিয়েশনের কাজ, এটা প্রবাসী কল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয় নয়। এটা তারা কোথায় পাঠিয়েছেন, কোথায় ক্লিয়ারেন্স পাবেন সেই ভিত্তিতে সিভিল এভিয়েশন কাজ করে যাবে। আগের সিদ্ধান্ত ছিলো সাতটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষাগার করতে দেয়া হবে। টেকনিক্যাল কমিটি সিলেকশন করেছে। এটা আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, এর পরে সেটি আমরা সিভিল এভিয়েশনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপাতত আরটিপিসিআর ল্যাবের কাজ দিচ্ছি, পরে র?্যাপিড পরীক্ষাও আমরা বিবেচনায়  নেবো। এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমি এখনো বলতে পারছি না।’

ছাদে ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে ইমরান আহমেদ বলেন, ‘বিমানবন্দরে পার্কিংয়ের ছাদ তৈরি করতে ১০ দিন লাগবে। বিমানবন্দরের ভেতরেও জায়গায় আছে, সেখানে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কাজ হবে। যারা কাজ করবে বলেছিল— তারা যদি এখন বলে যন্ত্র নেই, আমদানি করতে হবে, তাহলে আমি বলবো বাড়িতে চলে যাও। অঙ্গীকার অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে ল্যাব বসাতে হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য লাগবে পরীক্ষাগার, সেই পরীক্ষাগার বসাতে জায়গা লাগবে। দ্রুত এই কাজ শুরু করার জন্য বিমানবন্দরের ভেতরে একটি জায়গা দেয়া হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে, তারা আপাতত ছোট আকারে সেখানে পরীক্ষাগার বসাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিংয়ের ছাদে স্টিলের কাঠামো করে পরে করোনার আরেকটি পরীক্ষাগার বসানো হবে। সেই জায়গা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে। এটা করতে হয় তো একটু সময় লাগবে। আমাদের যে কাজ ছিলো, সেটি মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে। আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে দিয়ে দিয়েছি। আমরা যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম প্রস্তাব করেছিলাম সে কয়টি তারা নির্বাচিত করেছেন।’

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, করোনার পরীক্ষাগার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে হয়েছে। এ কারণে নতুন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর আবার দিতে হবে কি-না আমি নিশ্চিত না। বিমানবন্দরের ভেতরে জায়গা ছোট। পরীক্ষাগার বসানো হলে আমরা বুঝতে পারবো কয়টা বুথ বসিয়ে কতজনকে একসঙ্গে পরীক্ষা করা যাবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।