Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

চা-আচারের আড়ালে আসছে ‘আইস’

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১৬, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


 চা-আচারের আড়ালে আসছে ‘আইস’

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।

 র‍্যাব বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে তারা এ আইস নিয়ে আসে। পার্শ্ববর্তী দেশের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তারা আচার ও চায়ের আড়ালে এ ভয়ঙ্কর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছে। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

গতকাল শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘অভিযানে প্রায় পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম ভয়ঙ্কর মাদক আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি মোবাইল ফোন, তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহূত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৫-এর একটি দল গতকাল ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।’

আইসের ক্ষতিকর দিক :  র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি-উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হূদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ এবং বিষণ্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।’

শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ মাদক প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এ মাদকে আসক্ত হয়ে তরুণ-যুবকরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে— যোগ করেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।

যেভাবে দেশে আসছে আইস : কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এ চক্রটি কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। সিন্ডিকেটে ২০-২৫ জন যুক্ত রয়েছে। এর সদস্যরা সাধারণত নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে আসে। 

তিনি আরও বলেন, চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে কয়েক মাস ধরে আইস নিয়ে আসছিল। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে। সম্প্রতি টেকনাফকেন্দ্রিক কয়েকটি মাদকচক্র মিয়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য আইস বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। ফলে র?্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র?্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকলেও গ্রেপ্তার এ আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়কপথে এসব আসে। এরপর তারা চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে আসে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সিন্ডিকেটে যে ২০-২৫ জন রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’