Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

আন্দোলনে একাট্টা শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৫, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম


 আন্দোলনে একাট্টা শিক্ষার্থীরা

নাঈম হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু ও ভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ-মিছিল করেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রাজধানীর রাজপথ। নগরের প্রধান সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করায় বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যান চলাচল। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এমন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েন সকল শ্রেণি-
পেশার মানুষ। হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। 

তবে অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, মানুষ তো দূরের কথা, সড়কে একটি প্রাণী বা পাখির মৃতদেহও আমরা দেখতে চাই না। আমরা রাজপথে আছি। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়কে থাকবো। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

গতকাল রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে আন্দোলন করতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকর ও সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠী নিহতের ঘটনায় বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে রাজধানীর গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট সায়েন্স ল্যাব, কাকরাইল, শান্তিনগর, মতিঝিল, ল্যাবরেটরি, ফার্মগেট, উত্তরা, সিটি কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রাজধানীর রাজপথ। এসময় ব্যস্ত সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি— নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকর ও সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। 

এসময় বিভিন্ন সড়কে যানবাহন আটকে গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে কি-না তা দেখতে চান শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর বিভিন্ন মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষার্থীদের অবস্থানে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানঘট। এমন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন অনেকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে মতিঝিল এলাকা থেকে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে গুলিস্তান যান। এ সময় তারা জিরো পয়েন্টের কাছে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তারা গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নেয়ার সরকারি ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান। পাশাপাশি অদক্ষ চালকের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সহপাঠী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। 

দাবি আদায়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মুন্সী আবদুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া কার্যকর ও সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠী নিহতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। তারা দুপুর ১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত ওই সড়ক অবরোধ করে রাখেন। রাজধানীর শান্তিনগরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। একই সময়ে সিদ্ধেশ্বরী ও উত্তরায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। ফার্মগেটে একই দাবিতে হলিক্রস ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। 

গুলিস্তান গোলচত্বরে হল মার্কেটের সামনে ডিএসসিসি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম হাসান (১৭) নামে নটরডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল নিরাপদ সড়ক ও প্রকৃত ঘাতককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ভিকারুননিসা, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও হলিক্রসের শিক্ষার্থীরা। তারা রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, শাপলা চত্বর ও জিরো পয়েন্টের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে দেখা করতে নগর ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। মূলত আট দফা দাবি নিয়ে মেয়রের সাথে দেখা করতে নগর ভবনে যান তারা। শেষ পর্যন্ত মেয়রের দেখা না পেয়ে শিক্ষকদের আশ্বাসে নগর ভবন ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা। 

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, নিরাপদ সড়কের জন্য মেয়রের কাছে আটটি দাবি জমা দিতে চান তারা। একই সাথে নাঈম হত্যার বিচারের ব্যাপারে আশ্বাস চান মেয়রের কাছ থেকে। এজন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়রের সাথে তাদের দেখা করা সম্ভব হয়নি। নগর ভবন থেকে বেরিয়ে ফের রাস্তায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। 

সহপাঠী নাঈম হাসান নিহতের ঘটনার বিচার না হলে আগামী রোববার থেকে আবারো রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি ঘোষণা আসে আন্দোলন থেকে। এমন ঘোষণা আসার পরপরই নিজেদের আন্দোলন তুলে নিয়ে গুলিস্তান ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল শাপলা চত্বরে দ্বিতীয় দিনের মতো কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন। 

তারা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজউক ভবনের দিকে অগ্রসর হন। শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমরা বিচার চাই’ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন। এর আগে ১০ দফা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ফের সড়কে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। 

ঘোষণাগুলো হলো— যথাযথ তদন্ত করে আমার ভাইয়ের (শিক্ষার্থী নাঈম) হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে, জেলা শহরের বিভিন্ন রুটে শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করতে হবে, স্কুল-কলেজের সামনে হর্ন ও ওভারস্পিডিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে জরিমানা ও প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের অধিকার দেয়া দিতে হবে, সব শিক্ষার্থীর হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একাধিক স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করতে হবে, শহরের প্রতিটি অচল ট্রাফিক লাইটের সংস্করণ এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা,  ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ, জেব্রা ক্রসিংয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, চলন্ত বাসে যাত্রী ওঠানামা করালে প্রত্যেক বাসকে আইনের আওতায় আনা এবং নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে হবে বলে ঘোষণা করেন। 

তবে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখায় ওইসব এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরে আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে। কাল শনিবার ওই রিটের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও চরম বিপাকে পড়েন। তারা অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারছেন না। তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে আন্দোলন স্থগিত করছেন। তবে হাফ ভাড়া সম্পর্কে সরকারিভাবে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না আসায় সংকট বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।