Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএসসির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ৮, ২০২২, ০৬:৫৫ পিএম


বিএসসির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম

অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) শেয়ারের দাম। মাত্র ১০ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে বাজার ম্যানিপুলেশনকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সম্প্রতি ঘোষিত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনকে পুঁজি করে শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে কাজ করছে বাজার সিন্ডিকেট চক্র। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র দুই সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা, যা টানা বেড়ে ৬ জানুয়ারি লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১০৪ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ মাত্র ১০ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৫ টাকা ২০ পয়সা বা ১১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সে হিসাবে যদি কোনো বিনিয়োগকারী ২৩ ডিসেম্বর এক লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন তিনি এখন এটি দুই লাখ ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। মাত্র ১৪ দিনে এক লাখ টাকায় এক লাখ ১৪ হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাচ্ছে।  

কোম্পানিটির শেয়ারের এ দাম বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয় ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে। গত ২৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে। ১৯৭৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার দাম এর আগে কখনো এমন উচ্চতায় পৌঁছায়নি। 

কোম্পানিটি ২০২১     সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে চার টাকা ৩৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় মাত্র ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৬৪৮ শতাংশ। এটাকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে একটি চক্র কোম্পানিটির শেয়ারে এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

অন্য দিকে, কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার চিত্র দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীলরা। এ জন্য কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার দাম বাড়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যেভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং যেহারে লেনদেন হচ্ছে তাতে আমরাও বিস্মিত। দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কোনো চক্র শেয়ার দাম বাড়াচ্ছে কি-না বিএসইসির তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। 

এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো চক্র আছে। মাত্র ১০ কার্যদিবসেই শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে সাতদিনই দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। পেছনে কোনো সিন্ডিকেট না থাকলে এভাবে শেয়ারের দাম বাড়তে পারে না। 

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, মাত্র ১০ দিনে শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হওয়াটা কিছুতেই স্বাভাবিক নয়। বোঝাই যাচ্ছে ম্যানিপুলেট (কারসাজি) করেই এ দাম বাড়ানো হয়েছে। একটি ভালো সংবাদ পুঁজি করে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগকারীরাও দায়ী। তারা কেন এ দামে শেয়ার কিনছেন। ভালো সংবাদের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। কিন্তু একশ শতাংশ দাম বাড়তে পারে না। এটাকে (আয় বৃদ্ধি) ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ম্যানিপুলেশন বন্ধ করতে পারছে না। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়ী। তেমনি বিনিয়োগকারীরাও দায়ী। তারা কেন এ দামে কিনছেন। আমি মনে করি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন-অ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়)। ম্যানিপুলেশন বন্ধে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি। শেয়ারের দাম কেন এমন বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের লভ্যাংশের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। 

তার আগে ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬ শতাংশ এবং ২০১৭ সাল ও ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৬ সালে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা। 

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০টি। প্রতিটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা। এ শেয়ারের মধ্যে বর্তমানে ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের চার ভাগের এক ভাগেরও কম রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।